অপেক্ষা: স্ট্রং-রুমের পাহারা। মহম্মদবাজারের প্যাটেলনগরের শিক্ষক প্রশিক্ষণ ভবনে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
ভোটগ্রহণ চলাকালীন ব্যালট-ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির প্রার্থী সহ চার মহিলাকে সোমবারই আটক করেছিল মহম্মদবাজার থানার পুলিশ। তাঁদের গ্রেফতার দেখিয়ে সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হল মঙ্গলবার।
সোমবার বেলা এগারোটা নাগাদ মহম্মদবাজার পঞ্চায়েতের কুলিয়া বুথে ঢুকে ব্যালট-বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে বিজেপি-র মহিলা প্রার্থী ঝুমা বাগদির বিরুদ্ধে। অভিযোগ ছিল, দলবল জুটিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে এসে অশান্তি শুরু করেন তিনি। মারধর করেন তৃণমূলের প্রার্থী টুম্পা বাগদিকে। ব্যালট বাক্সও ছিনতাই করে নিয়ে যান। তখন ওই কেন্দ্রে ৭১৮ ভোটারের মধ্যে মাত্র ২০০টি ভোট গ্রহণ হয়েছে। অশান্তির পরই ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। আজ, বুধবার ওই কেন্দ্রে পুর্ননির্বাচন হবে। তার পরেই পুলিশ ঝুমা বাগদি, রূপা বাগদি, পূর্ণিমা বাগদি এবং মৌসুমি বাগদিকে আটক করে। অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ধৃতদের মধ্যে প্রথম দু’জনকে এক দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল পুলিশ। এসিজেএম রিনা তালুকদার সেটা মঞ্জুর করেন।’’ বাকি দুই অভিযুক্তকে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক।
কুলিয়া ছাড়াও মহম্মদবাজারের ভূতুড়া পঞ্চায়েতের মৌলপুর জয়পুর এবং পুরাতনগ্রাম পঞ্চায়েতের হেরুকায় আজ, বুধবার ভোট হবে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপক্ষে প্রার্থী না থাকায় পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশ আসনেই ভোট নেই। সোমবার জেলার হাতেগোনা যে ক’টি ব্লকে নির্বাচন হয়েছে, সেই তালিকায় মহম্মদবাজার ছিল অন্যতম। ব্লকের ২৮টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনের মধ্যে ২১টিতে এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১০টি আসনের ৮৯টিতে বিরোধী রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকায় চর্চায় ছিল মহম্মদবাজার।
সকালে ভোট নির্বিঘ্নে শুরু হলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চরিচা, রামপুর, পুরাতনগ্রাম, কাপিষ্টা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন রকম অভিযোগ আসতে থাকে। বেলা ১১টা পর্যন্ত ব্লক কন্ট্রোল রুমে ১১টি অভিযোগ আসে। প্রথম বড় অভিযোগ আসে মহম্মদবাজারের কুলিয়া বুথ থেকে। তবে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ভূতুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মৌলপুরে। স্থানীয় এসবি বিদ্যালয়ে। মৌলপুর ও জয়পুর পাশাপাশি দুটি সংসদের ভোট হচ্ছিল। অভিযোগ, হঠাৎ মুখ-বাঁধা সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়, বোমাবাজি করে। ভোটাররা পালিয়ে যান। তখনই একটি বুথের মধ্যে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়ে সমস্ত কিছু ভেঙে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়। ভয়ে কাঁটা ভোটকর্মীরা। তখন মোট ৪৬০টি ভোটের অর্ধেক পড়ে গিয়েছে। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে ওই ভোটকর্মীদের উদ্ধার করেন। পাশের বুথেও আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু, নিরাপত্তা কর্মীদের এক জন ওই বুথের দরজা লাগিয়ে দেওয়ায় ব্যালট বাক্স ছিনতাই করতে পারেনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তবে দরজায় আঘাত, কুড়ুলের কোপ, বোমাবাজি চলতে থাকে টানা ১২ মিনিট। এমন তাণ্ডবে প্রাণভয়ে কাঁপতে থাকেন ওই কেন্দ্রের ভোটকর্মীরাও। ওই বুথে তখন ৯৮৪টি ভোটের ২৪৫টি ভোট পড়েছিল। ওই দুটি বুথে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দুটি বুথের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসার, সমীরকুমার মাজি ও শ্যামলকান্তি বিশ্বাস এবং অন্য পোলিং অফিসাররা বলছেন, ‘‘বহুবার ভোটের ডিউটি করেছি। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। এক সময় তো রীতিমতো ভয় করছিল।’’ দুষ্কৃতীরা কোন দলের সেটা অবশ্য বলতে চাননি ভোটকর্মীরা। তবে স্থানীয় মানুষ ও বিজেপি মিলিত ভাবে তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছে। একই দাবি বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়েরও। তবে অনুব্রত মণ্ডল অশান্তির দায় বিজেপির কাঁধে ঠেলেছেন।
শেষ অভিযোগটা আসে পুরাতন গ্রাম পঞ্চায়েতের হেরুকা সংসদ থেকে। এখানে শাসকদল ও নির্দল প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। বেলা গড়াতেই বোমাবাজি শুরু হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এক যুবকের হাতে আঘাত লাগায় ভোট বন্ধ হয়ে যায়।
জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্তম সুধীর কুমার বলছেন, ‘‘পুলিশের তৎপরতায় জেলায় নির্বাচন মোটের উপর শান্তিপূর্ণ। যেখান থেকে অশান্তির খবর পাওয়া গিয়েছে,
দ্রুত সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে পুলিশ। এরপরেও দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা কেন ঘটল আমরাও দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy