বাঁকুডার স্কুলডাঙায়। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।
খেলাপি ঋণ আদায়ে এ বার মুন্নাভাইয়ের শরণাপন্ন হল ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বাঁকুড়া শাখা। লাগে রাহো মুন্নাভাইয়ের মতো তারা অবশ্য ফুল পাঠাননি। ‘আমাদের ব্যাঙ্কের ঋণ পরিশোধ করুন’ পোস্টার নিয়ে ব্যাঙ্কের কর্মীরা ব্যবসায়ীর বাড়ির সামনে শান্তিপূর্ণ ভাবে ধর্না করলেন।
লাগে রাহো মুন্নাভাই ছবির ভিলেন লাকি প্রতিদিন সকালে ‘গেট ওয়েল সুন’ পোস্টার ও ফুল নাজেহাল হয়ে পড়েছিলেন। চরিত্রেও বদল ঘটে গিয়েছিল তাঁর। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে ‘গাঁধীগিরি’ নাম দিয়ে এ ভাবেই দেশের সামনে পেশ করা হয়েছিল ছবিটির মাধ্যমে। সিনেমার পাশাপাশি সুপার হিট হয়েছিল ‘গাঁধীগিরি’-ও।
এর পর থেকেই নানা জায়গায় গাঁধীগিরি করতে দেখা গিয়েছে প্রশাসনের আধিকারিক থেকে সাধারণ মানুষকে— কোথাও ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের ফুল দিয়ে, কোথাও দেরি করে অফিসে আসা কর্মীদের চকলেট খাইয়ে। এ বার মুন্নাভাইয়ের গাঁধীগিরির পথে ঋণ আদায়ে নেমেছে ইউবিআই। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঋণ আদায়ে ব্যাঙ্কের আধিকারিক ও কর্মীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে ঋণ খেলাপি ব্যক্তির অফিস, বাড়ির সামনে ধর্না, অবস্থানে বসছেন। এতে কাজও দিচ্ছে বলে আধিকারিকদের মত।
এ বার গাঁধীগিরি দেখাতে বুধবার বিকেলে বাঁকুড়ায় শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তথা বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপার স্কুলডাঙার বাড়িতে হাজির হলেন ইউবিআইয়ের ব্যাঙ্কের কর্তা-ব্যক্তিরা। উপস্থিত ছিলেন ব্যাঙ্কের পুরুলিয়া জোনের রিজিওনাল ম্যানেজার অসিত ঘোষ, বাঁকুড়ার লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার হরিনাথ পান্ডা, ইউবিআইয়ের বাঁকুড়া ও কদমাঘাটি শাখার ম্যানেজার শিবশঙ্কর মাইতি ও অনুপম চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকে।
ব্যাঙ্কের দাবি, মধুসূদনবাবু তাঁর কোম্পানি দরিপা ট্রেডিং-এর নামে বেশ কয়েক দফায় লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়েছিলেন এই ব্যাঙ্ক থেকে। যার অনেকটাই এখনও শোধ করা হয়নি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ঋণের টাকা মেটানোর জন্য একাধিকবার তাদের কর্মীরা মধুসূদনবাবুর বাড়িতে এসেছেন কথা বলতে। নোটিসও পাঠানো হয়েছে তাঁকে। অথচ কাজের কাজ কিছু হয়নি। অসিতবাবু বলেন, “ঋণের টাকা অনেকেই শোধ করেননি। যার জেরে গোটা দেশেই আমাদের ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বারবার টাকা মেটানোর জন্য আবেদন করা হচ্ছে গ্রাহকদের। কিন্তু তাঁরা কোনও কথাই কানে তুলছেন না।”
মধুসূদনবাবু অবশ্য এই ‘মৌন ধর্না’র সময় বাড়িতে ছিলেন না। তিনি টেলিফোনে দাবি করেন, “৭৫ শতাংশ টাকা ডিপোজিট দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলাম একটি ব্যবসার জন্য। কিন্তু যে পরিমাণ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া হয়েছিল, ব্যবসায় তার বেশি টাকা দরকার ছিল। পরে ব্যাঙ্কের কাছে আরও কিছু টাকা চাইলে ব্যাঙ্ক তা দেয়নি। ফলে ব্যবসাটাই বন্ধ করে দিতে হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিয়েছি তার থেকে বেশি টাকা সুদ দিয়ে ফেলেছি ইতিমধ্যে। তবে ঋণ শোধ করার জন্য ব্যাঙ্ককে আরও কিছু অতিরিক্ত সময় দেওয়ার কথা বলেছিলাম। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি।” অসিতবাবুর অবশ্য দাবি, “মধুসূদনবাবুর তরফে ব্যাঙ্কে লিখিত ভাবে অতিরিক্ত সময় চেয়ে কোনও চিঠিই দেওয়া হয়নি।”
এ দিন বিকেল প্রায় সাড়ে ৫টা থেকে বেশ কিছুক্ষণ ব্যাঙ্কের কর্মীরা মধুসূদনবাবুর বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। শুধু মধুসূদনবাবু একা নন গোটা দেশে কয়েক কোটি মানুষের ঋণের টাকা বাকি পড়ে রয়েছে ব্যাঙ্কে। এক ব্যাঙ্ক কর্মীর কথায়, “লাকি-র কাছ থেকে বৃদ্ধাশ্রমের চাবি ফিরিয়ে আনতে মুন্নাভাইকে তিন ঘণ্টা গাঁধীগিরি করতে হয়েছিল রুপোলি পর্দায়। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাঙ্কের গচ্ছিত টাকা ফিরিয়ে আনতে আমাদের কত দিন সময় লাগবে তার হিসেবটাই মেলানো যাচ্ছে না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy