খুলে গেল বাংলাদেশ ভবন। লাইব্রেরিতে থাকছে বসে পড়ার সুযোগও। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন হয়েছিল আগেই। মঙ্গলবার ভবনটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হল। এর ফলে হাতের কাছেই এক টুকরো বাংলাদেশ পেলেন বিশ্বভারতীর বাংলাদেশের পড়ুয়া সহ অন্যরা। কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতীর শারদ অবকাশের আগে পর্যন্ত এই ভবনে ঢোকার জন্য কোনও প্রবেশ মূল্য লাগবে না। শুধু একটি সচিত্র পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
চলতি বছরের ২৫ মে বিশ্বভারতীর সমাবর্তনের দিনেই বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্বভারতীর আচার্য তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ভবনের উদ্বোধন করেন। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী সহ আরও অনেকে। উদ্বোধন হয়ে যাওয়ার পরও বেশ কিছু কাজ বাকি থাকায় বাংলাদেশ ভবন খুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। শান্তিনিকেতন ঘুরতে আসা পর্যটকেরা ভিতরে প্রবেশ করতে না পেরে অনেক সময় ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেক প্রশ্নের জবাবদিহি করতে হয়েছে নিরাপত্তারক্ষীদের। মঙ্গলবার, হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন তাঁরাও।
বাংলাদেশ ভবনের মূল আকর্ষণ গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালা। সংগ্রহশালাটিতে মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে সেই দেশের লোকশিল্প, প্রত্নতত্ত্বের বিবরণ। এই ভাবেই এক টুকরো বাংলাদেশ উঠে এসেছে শান্তিনিকেতনের বুকে। এ ছাড়াও, ভবনের ভিতরে যে গ্রন্থাগারটি রয়েছে সেখান থেকে বই ইস্যু করা না গেলেও বইগুলি সেখানে বসে পড়ার ব্যবস্থা করেছেন কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত, বাংলাদেশ বিষয়ক প্রভূত পরিমাণ বই রয়েছে যা বাংলাদেশ সম্পর্কে চর্চায় খুব জরুরি। আগামী দিনে যাঁরা বাংলাদেশ নিয়ে চর্চা করবেন, সেখানকার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক ইতিহাস জানতে চাইবেন, তাঁদের জন্য এই গ্রন্থাগার আবশ্যক হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন অধিকারিকেরা। ভবনের ভিতরে ৪৫৩ আসনের একটি প্রেক্ষাগৃহ, ৩৫০টি আসনের সেমিনার হল তৈরি হয়েছে। প্রেক্ষাগৃহে সুস্থ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে এবং সেমিনার হলে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তবে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বিষয়কে বাদ রেখে। বিশ্বভারতী সূত্রে জানানো হয়েছে, সাপ্তাহিক ছুটি এবং কেন্দ্রের ছুটিগুলি ছাড়া সব দিনই এই ভবন খোলা থাকবে সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত। তবে প্রতিদিন দুপুরে দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজন বিরতির জন্য ওই সময়ে সংগ্রহশালাটি বন্ধ থাকবে।
মঙ্গলবার ভবন খোলার সঙ্গে সঙ্গেই পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে। চাঁদপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষামূলক ভ্রমণে আসা পড়ুয়ারা এই ভবনে প্রবেশ করতে পেরে খুশি। তাদেরই এক জন দোলতি ভট্টাচার্য জানায়, শান্তিনিকেতনে নামার পর প্রথমেই ভবনটি দেখতে এসেছে। বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশের পড়ুয়া মেহেদী হাসান রনী, আবদুল্লা আল মামুন, রুবাইয়া তানজিম, ময়ূরাক্ষী সান্যালরা বললেন, ‘‘পড়াশোনার জন্য আমরা অনেক দিন ধরেই শান্তিনিকেতনে আছি। দু’দেশের মধ্যে কোনও দিন কোনও পার্থক্য পাইনি। তবুও বাংলাদেশের একটি অংশ পেয়ে খুব ভাল লাগছে।’’
আগে একবার শান্তিনিকেতন ঘুরতে এসে ভিতরে যাওয়ার সুযোগ পাননি মালদহের কিঙ্করী মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ভবন খুলে যাচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে এ কথা জেনে সকাল সকাল হাজির হয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে। ভবনের মুখ্য তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পর্যটক থেকে শুরু করে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী, প্রত্যেকের মধ্যে ভবনটিকে নিয়ে এই উৎসাহ দেখেই কিছু অসম্পূর্ণতা থাকার পরেও সকলের জন্য খুলে দেওয়া হল। আপাতত বিনামূল্যে সকলেই প্রবেশ করতে পারলেও, পরে প্রবেশমূল্য থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy