নীল তিমির (ব্লু হোয়েল) গ্রাস থেকে বাঁচতে সচেতনতা বৃদ্ধিই একমাত্র উপায়। এ নিয়ে মনোবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ থেকে পুলিশ আধিকারিক— সকলেই এক মত। যাদের ওই গেমে আসক্ত হওয়ার ভয় রয়েছে, এ বার সচেতনতা প্রচারে এগিয়ে এল তারাই। বৃহস্পতিবার দুবরাজপুরের চিনপাই উচ্চবিদ্যালয় সাক্ষী থাকল এমনই এক অনুষ্ঠানের। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঁচ পড়ুয়াই এই দায়িত্ব নিয়েছিল।
বিশ্বশান্তি দিবসের দিনে স্কুলে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে দ্বাদশ শ্রেণির শতাব্দী সরকার, শুভব্রত ঘোষ, আরমিনা খাতুন এবং একদাশ শ্রেণির জাহিদ আখতার ও কেনিজ ফতেমা খাতুনরা মিনিট ২০ ধরে, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও পুলিশ আধিকারিকদের সামনে ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’এ বোঝাল ‘ব্লু হোয়েল’ গেম কী। এই গেমের খপ্পরে ছেলেমেয়েরা কী ভাবে পড়ে। খপ্পরে পড়ার পরে ছেলেমেয়েরা কেমন আচরণ করতে শুরু করে। এই সময়ে ঠিক কী আচরণ হওয়া উচিত অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা এমনকি পুলিশ, প্রশাসনের। সঙ্গে সংকল্প— আমাদের কোনও সহপাঠী বন্ধু, বান্ধবীকে কিংবা ভাইবোনকে এই মারণ গেমের খপ্পরে পড়তে দেব না।
চারপাশের পরিবেশ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এই বদলে যাওয়ার ফলে কোথাও একটা শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। শৈশবটা যেন আর শৈশব থাকছে না। বিপদ না বুঝেই মুঠোফোনে বন্দি মায়াবি দুনিয়ার ‘ব্লু হোয়েল গেম’এ আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুল থেকে কলেজ পড়ুয়ারা। শহরের পরিসর ছেড়ে ব্লু-হোয়েলে মজেছে প্রত্যন্ত এলাকার কিশোর, কিশোরীরাও। রাজ্যের একের পর এক জেলায় হদিস মিলেছে ব্লু-হোয়েলে আক্রান্তের। চিন্তার প্রধানতম কারণ এই গেমের ধরণ। বীরভূমেও ব্লু হোয়েলের খপ্পরে পড়েছে এক কলেজ ছাত্র। বিশ্বশান্তি দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চে এই নিয়ে সচেতনতা প্রচারকেই বেছে নেয় পাঁচ ছাত্রছাত্রী। এরা প্রত্যেকেই জাতীয় সেবা প্রকল্প বা এনএসএস-এর সদস্য। সহযোগিতা করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিঅ্যান্ডটি) আনন্দচরণ সরকার, সদাইপুর থানার ওসি, পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেল।
এনএসএসের জেলা প্রোগ্রাম অফিসার বিমলেন্দু সাহা এবং প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ মজুমদাররা বলছেন, ‘‘সচেতনতা বৃদ্ধিই যদি এই মারণ খেলা থেকে পড়ুয়াদের দূরে রাখতে পারে, তা হলে তাতে ওরা কেন যোগ দেবে না?’’ ছাত্রছাত্রীরা প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করে, ২০১৩ সালে রাশিয়ায় শুরু হয় ওই মারণ খেলা৷ সাইকোলজির এক প্রাক্তন ছাত্র নিজেকে ওই গেমের আবিষ্কর্তা বলে দাবি করে। ‘দ্য ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’ নামক অনলাইন এই গেমটির সময়সীমা ৫০ দিন৷ খেলার নির্দেশ অনুযায়ী যোগদানকারীকে ৫০টি ‘টাস্ক’ শেষ করতে হয়৷ একা ভূতের ছবি দেখতে হয়, আবার ভোর চারটে কুড়ি মিনিটে ঘুম থেকেও উঠতে হয়৷ চ্যালেঞ্জের মধ্যে অতিরিক্ত মাদক সেবনও রয়েছে৷ রয়েছে নিজেকে আঘাত করা-সহ নানা রকম ভয়ানক ‘টাস্ক’৷ শেষ টাস্কটি আত্মহত্যার। গেমের একটা পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঁকতে হয় নীল তিমির ছবি।
এই গেম খেলেছে এমন অনেকে পরে পুলিশকে জানিয়েছে, একবার এই গেম খেলতে শুরু করলে তা ছেড়ে বেড়িয়ে আসা কার্যত দুঃসাধ্য! প্রতি মুহূর্তে গেমের অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের নির্দেশ মেনে চলতে হয়। জাহিদ, আরমিনা, শতাব্দীর কথায়, ‘‘গোটা বিষয়টিই নজরে রাখতে হবে অভিভাবকদের। কোনও ছাত্র-ছাত্রী যদি অন্যদের থেকে হঠাৎ করে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে দেখতে হবে তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা। এমন ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক ও পুলিশকে জানাতে হবে।’’ প্রয়োজনে নিতে হবে মনোবিদের সাহায্যও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy