Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সাত বছর পরে খুলছে রবীন্দ্রসদন

২০০০ সালের পরে প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং সাংসদ রামচন্দ্র ডোমের সাংসদ তহবিলের টাকায় সংস্কার হয়েছিল রবীন্দ্রসদন। তারপর থেকে নিয়ম করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক লেগেই থাকত। কিন্তু, কয়েক বছর যেতে না যেতে বেহাল হয়ে যায় রবীন্দ্রসদন।

উন্নয়ন: সিউড়ি রবীন্দ্রসদনের কাজ দেখছেন জেলাশাসক। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

উন্নয়ন: সিউড়ি রবীন্দ্রসদনের কাজ দেখছেন জেলাশাসক। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:২০
Share: Save:

প্রতীক্ষার অবসান। সংস্কারের জন্য দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পরে ফের খুলতে চলেছে সিউড়ির রবীন্দ্রসদন। সোমবার জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী শেষলগ্নে গোটা ভবনের কাজ পর্যবেক্ষণের পরে এই সুখবর দেন। জেলাশাসক জানিয়েছেন, পূর্ত দফতর কাজ শেষ করেছে। এখন আলো লাগানোর কাজ চলছে। তাঁর আশা, ‘‘সম্ভাবত ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ এই পেক্ষাগৃহ খুলে দেওয়া হবে।’’ সংস্কারে ব্যয় হয়েছে প্রায় দু’কোটি টাকা।

ভগ্নদশার জন্য বছর দেড়েক এবং সংস্কারের জন্য সাড়ে পাঁচ বছর— সব মিলিয়ে সাত বছর বন্ধ শহরের সংস্কৃতিচর্চার সেরা পীঠস্থান। সংস্কারের পরে পূর্ত দফতর এখন যে রবীন্দ্রসদন শহরের মানুষকে উপহার দিতে চলেছে, সেই প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চ এখন অনেক প্রশস্ত এবং উঁচু। প্রেক্ষাগৃহের ভিতরের মেঝেয় ও বাইরে মার্বেল, টালি বসানো হয়েছে। দেওয়াল অনেক ভাল। আসন সংখ্যা কমে গেলেও অনেক আরামদায়ক সেই আসন। নতুন রঙের প্রলেপ। তবে, এত সংস্কারের পরেও কিছু খামতি রয়ে গিয়েছে। যদিও এত দিন পর প্রিয় রবীন্দ্রসদন হাতে পাওয়ার খবরে খুশি দেবাশিস দত্ত, বাবুন চক্রবর্তী, মানস চক্রবর্তী, মুকুল সিদ্দিকি, টুটুল আহমেদ,
নির্মল হাজরার মতো শহরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

সাংস্কৃতিক কর্মীরা জানাচ্ছেন, এত দিন ধরে প্রিয় প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকায় আন্দোলন, প্রতিবাদ কম হয়নি। ‘রবীন্দ্রসদন অনুরাগী মঞ্চ’ গড়ে শহরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা কয়েক বছর ধরেই দ্রুত সংস্কার করে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদেও সামিল ছিলেন। ‘‘সেটা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হতে চলছে দেখে ভাল লাগছে’’— মত অনুরাগীদের। একই বক্তব্য সংস্কৃতি-কর্মী তথা মঞ্চের আহ্বায়ক দেবাশিস দত্তেরও।

শহরের সংস্কৃতিচর্চার জন্য ১৯৬৪ সালে তৈরি হয় রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহ। ২০০০ সালের পরে প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং সাংসদ রামচন্দ্র ডোমের সাংসদ তহবিলের টাকায় সংস্কার হয়েছিল রবীন্দ্রসদন। তারপর থেকে নিয়ম করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক লেগেই থাকত। কিন্তু, কয়েক বছর যেতে না যেতে বেহাল হয়ে যায় রবীন্দ্রসদন। আলো, ধ্বনি, বসার জায়গা-সহ একাধিক ক্ষেত্রে অনুষ্ঠান করার সময় অসুবিধার মুখে পড়তে শুরু করেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা। বছর সাতেক আগে সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারের জন্য ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন। তারপর রাজ্য সরকারের তরফে কিছু টাকা এসেছে। পূর্ত দফতরকে দায়িত্ব দিয়ে ২০১২ সালের গোড়ায় কাজ শুরু হয়। কিন্তু, কাজে অগ্রগতি না হওয়ার পিছনে মূল কারণ ছিল অর্থের অভাব। খোলনলচে বদলে রবীন্দ্রসদনকে সর্ব সাধারণের হাতে তুলে দিতে প্রায় ২ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছিল পূর্ত দফতর। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সেই টাকার সংস্থান হওয়ার পরই কাজ প্রায় শেষ।

সোমবার কাজ দেখতে রবীন্দ্রসদনে আসেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী ও মহকুমাশাসক কৌশিক সিংহ। অপেক্ষায় ছিলেন বেশ কিছু সাংস্কৃতিক কর্মী। পুরো প্রক্ষাগৃহ ঘুরে দেখার পরে যখন সুখবর শোনাচ্ছেন তিনি, পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা ও ধ্বনির অত্যাধুনিক ব্যবস্থা করার মতো বেশ কয়েক’টি দিকে জেলাশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ধাপে ধাপে সেগুলি হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পি মোহন গাঁধী।

একটা আক্ষেপ থেকেই যাচ্ছে শহরের মানুষের। এত কিছু হলেও প্রেক্ষাগৃহটি এসি নয়। অনেকের মতে, শীতের কয়েক’টা মাস বাদ দিয়ে অনুষ্ঠান দেখার স্বাচ্ছন্দ্যে তো বটেই, নাটক করতে সমস্যা হবে না তো! তাঁদের মতে, ‘‘বাণিজ্যিক ভাবে প্রেক্ষাগৃহটি ব্যবহৃত হতে গেলেও এসি হওয়া খুব প্রয়োজনীয় ছিল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE