Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Asha Workers on Protest

নাম যেন না বাদ পড়ে, আশাকর্মীদের ‘হুমকি’

এই প্রকল্পে উপভোক্তাদের উপযুক্ততা যাচাই করে বাড়ি তৈরি পর্যন্ত যেখানে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় রয়েছে, সেখানে এই কাজ গোড়াতেই ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন আধিকারিকদের একাংশ।

হুমকি আশা কর্মীদের।

হুমকি আশা কর্মীদের।

প্রশান্ত পাল 
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:১৫
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (আবাস প্লাস) উপভোক্তাদের উপযুক্ততা যাচাইয়ের কাজে বেঁকে বসলেন পুরুলিয়া জেলার আশাকর্মীরা। তালিকা থেকে যাতে নাম বাদ না পড়ে, সে জন্য অনেকে তাঁদের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন আশাকর্মীরা। সোমবার থেকে উপভোক্তাদের প্রাথমিক তথ্য যাচাইয়ের কাজ শুরুর কথা থাকলেও নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে তাঁরা বিকল্প পদ্ধতিতে যাচাইয়ের কাজ করার দাবি জানিয়ে আশাকর্মীরা জেলার বিভিন্ন ব্লক ও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্মারকলিপি দিলেন। কলকাতায় মিশন ডিরেক্টরের হাতে স্মারকলিপি দেন পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদিকা ইসমাত আরা খাতুনও।

এই প্রকল্পে উপভোক্তাদের উপযুক্ততা যাচাই করে বাড়ি তৈরি পর্যন্ত যেখানে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় রয়েছে, সেখানে এই কাজ গোড়াতেই ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন আধিকারিকদের একাংশ। যদিও অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) আদিত্যবিক্রম এম হিরানি বলেন, ‘‘তালিকা ধরে কী ভাবে সমীক্ষা হবে, তা ঠিক করে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য সচিব। প্রকৃত উপভোক্তারা কোনও ভাবেই বাদ যাবেন না। হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পেলে আমাদের জানান। ব্যবস্থা নেব। কাজ কোনও ভাবে আটকাবে না।’’

কেন্দ্রীয় অন্য কয়েকটি প্রকল্পের সঙ্গে আবাস যোজনাতেও বেনিয়মের অভিযোগে দিল্লি রাজ্যকে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বাড়ি না পাওয়া দুঃস্থ পরিবারগুলির অসন্তোষ টের পায় রাজ্যের শাসকদলও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (আবাস প্লাস) কাজ শুরুর মুখেই এই অভিযোগে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে রাজ্যের শাসকদলকে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের উপভোক্তাদের তালিকা সম্পূর্ণ ভাবে ত্রুটিমুক্ত করতে একাধিক স্তরে যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে উপভোক্তাদের তালিকা ধরে প্রথমে খোঁজ নেবেন আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। প্রাথমিক সমীক্ষার ভিত্তিতে উঠে আসা তালিকা ধরে ফের তা খতিয়ে দেখবেন প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য নিযুক্ত ট্যাগড অফিসার পদমর্যাদার আধিকারিকেরা। তৃতীয় স্তরে সংশ্লিষ্ট ব্লক ভূমি আধিকারিক, থানার ওসি-আইসিরা তালিকা ধরে বিক্ষিপ্ত ভাবে খতিয়ে দেখবেন। পরে তালিকা ধরে মোট উপভোক্তার ১০ শতাংশ খতিয়ে দেখবেন বিডিও-রা। তিন শতাংশ জেলাশাসক, সমপরিমাণ উপভোক্তার উপযুক্ততা যাচাই করবেন এসডিও। এরপরেই খসড়া তালিকা প্রকাশিত হবে। সেই তালিকা গ্রামসভায় নিয়ে গিয়ে বাসিন্দাদের জানানো হবে।

উপভোক্তা যাচাইয়ে কোন কোন বিষয়গুলি দেখতে হবে, সেই মর্মে শনিবার জরুরি তলবের ভিত্তিতে আশাকর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ‘পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়ন’-এর রাজ্য কমিটির সদস্য অর্চনা খাঁয়ের দাবি, ‘‘সমীক্ষার প্রাথমিক কাজ আমরা শুরু করছি বলে উপভোক্তাদের অনেকেই ভাবছেন আশাকর্মী বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের রিপোর্টের উপরে উপভোক্তার নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে কি না তা নির্ভর করবে। তাই সমীক্ষা শুরু করার আগেই তাঁদের নাম যাতে তালিকা থেকে বাদ না পড়ে সে জন্য বিভিন্ন জায়গায় আশাকর্মীদের উপরে ‘চাপ’ আসতে শুরু করেছে।’’

তিনি জানান, তাঁরা শুধু কয়েকটি বিষয়ের উপরে পরিবারগুলির সমীক্ষা করে রিপোর্ট প্রশাসনকে দেবেন। কারও নাম রাখা বা বাদ দেওয়ার ক্ষমতা তাঁদের নেই। তা জানানোর পরেও কিছু লোক শুনতে চাইছেন না। বিভিন্ন স্তর থেকেই চাপ আসছে।

রাজ্যের অন্যত্রও এমনই অভিযোগ আসায় আশাকর্মীদের সংগঠনের নেতৃত্ব রবিবার রাতে বিভিন্ন জেলার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের পরে এ দিন প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অর্চনা জানান, সমস্ত জেলায় বিডিও এবং বিএমওএইচদের তাঁদের আপত্তির কথা জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক সুস্মিতা মাহাতো বলেন, ‘‘উপভোক্তাদের উপযুক্ততা যাচাইয়ের তালিকায় বিভিন্ন বিষয়ের পাশে আমাদের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ লিখতে প্রশিক্ষণে বলা হয়েছে। কোনও উপভোক্তার ক্ষেত্রে ‘না’ এর সংখ্যা বেশি হলে তিনি ভাববেন আমাদের রিপোর্টের জন্য তিনি তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। পরবর্তীকালে আমরা কী ভাবে গ্রামে টিকব? অন্য কোনও উপায়ে প্রশাসন যাচাইয়ের কাজ করুক।’’

এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গা বলেন, ‘‘আশাকর্মীদের হুমকি দেওয়ার খবর আমরাও পেয়েছি। এখান থেকেই পরিষ্কার তালিকায় জল মেশানো হয়েছে। আগের বার আবাস প্রকল্পে বেনিয়মের জন্য কেন্দ্র টাকা পাঠানো বন্ধ করেছিল। এ বার কী হয় দেখি। না হলে আমরা আদালতের পর্যবেক্ষণে যাতে জেলায় জেলায় উপভোক্তার তালিকা তৈরি করা হয়, সে দিকে যাওয়ার কথা ভাবব।’’

অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা খুব ভাল করে নিজেদের এলাকার মানুষজনের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কথা জানেন। সে জন্য স্বচ্ছতার স্বার্থেই তাঁদের কাছে প্রাথমিক তালিকা চাওয়া হয়েছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, যেই হুমকি দিক, দলমত নির্বিশেষে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Asha Workers purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy