পাত্রসায়রের দাসপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
কিছু দিন আগেও পাড়ার দেওয়াল ভরে থাকত নানা বিধ বিজ্ঞাপন বা রাজনৈতিক দলের প্রচারে। সে সব দেওয়ালের কোনওটিতে এখন শোভা পাচ্ছে চিত্রশিল্পে পুরাণের কাহিনি, কোনওটিতে আবার যামিনী রায়ের শিল্পকর্মের অনুকরণে আঁকা ছবি। বাসিন্দারা বলছেন, গোটা পাড়াই যেন তাতে পাল্টে গিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে শ’খানেক ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের দাসপাড়ায় এই সৌন্দর্যায়নের কাজ করেছেন বছর পঞ্চাশের অনন্ত দে।
পেশায় বিদ্যুতের যন্ত্রপাতির কারিগর। নেশা, ছবি আঁকা ও ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি। পাত্রসায়রের অনেক ছাত্রছাত্রী আঁকা শেখেন অনন্তবাবুর কাছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যা কিছু আবর্জনা ভাবি, তা দিয়েই অনেক শিল্পকর্ম করা যায়। মূল কথা হল, সৌন্দর্যের ভাবনা।’’ তিনি জানান, পাড়ার দেওয়ালগুলি বিজ্ঞাপনে ভরে থাকত। এক দিন ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তাব দেন, ওই দেওয়ালগুলিতে ছবি আঁকলে, কেমন হয়! এর পরেই পাড়ায় গোটা চল্লিশ দেওয়ালে ছবি এঁকেছেন তাঁরা।
অনন্তবাবু জানান, একটি দেওয়ালে ছবি আঁকা শেষ হতেই, পাড়ার অনেকে তাঁদের দেওয়ালেও আঁকার প্রস্তাব দিতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ না থাকলে, এত বড় কাজ করা সম্ভব হত না।’’ ওই পাড়ার বাসিন্দা মিলন হালদার বলেন, ‘‘দেওয়ালে ছবি আঁকার পরে পাড়ার চেহারাই বদলে গিয়েছে। বাইরের মানুষজন এসে দাঁড়িয়ে পড়ে দেখছেন। এটা আমাদের কাছে গর্বের বিষয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সরোজ সেন বলেন, ‘‘আমাদের পাড়া যেন যামিনী রায়ের ছোঁয়া পেয়েছে। নানা দেওয়াল লিখনের দৃশ্যদূষণের হাত থেকেও মুক্তি মিলেছে।’’ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভগবতীচরণ দত্তের কথায়, ‘‘শিশুরা দেওয়ালের ছবি থেকে পুরাণের কাহিনি জানতে পারছে।’’
এই কাজের জন্য কারও কাছে কোনও অনুদান নেননি বলে জানান অনন্তবাবু। নিজের আয় থেকেই এই কর্মকাণ্ড করেছেন। তাঁর ছাত্রছাত্রীদের অনেকে বলেন, ‘‘আমরা ভীষণ আনন্দ পাই এই কাজ করে। স্যার স্কেচ করে দেন। আমরা রং করি।’’ পাত্রসায়রের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক মলয় পাল বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও সৌন্দর্যের চেতনা তৈরি করছে এই কাজ।’’
অনন্তবাবু জানান, বিষয়টি জানাজানি হতে, বিভিন্ন গ্রাম থেকে ডাক আসছে সেখানেও পাড়া সাজিয়ে দেওয়ার জন্য। ফেলে দেওয়া তার, পাথরকুচি দিয়ে মূর্তি গড়েন তিনি। এ বার পাড়ার রাস্তায় তেমন কিছু ভাস্কর্য বসানো ও ত্রিমাত্রিক ছবি আঁকার পরিকল্পনা রয়েছে, জানাচ্ছেন তিনি।
পাত্রসায়রের বিডিও নিবিড় মণ্ডল বলেন, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ। পাত্রসায়রকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনে ওঁর সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সাধু উদ্যোগ। গ্রামীণ শিল্পী হিসেবে এই কাজ প্রশংসনীয়।’’ বিজেপির পাত্রসায়র ২ মণ্ডল সভাপতি অনুপ ঘোষও বলেন, ‘‘এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy