Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

ঘুঘুর বাসায় ঢিল মারাই কাল হল

রাজ্যের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন সোমবার। বিভিন্ন সময় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বিতর্কে জড়িয়েছেন একাধিক বার। আবার এটাও ঠিক, তাঁর কার্যকালে কাজও হয়েছে অনেক। পদচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনি চুপ ছিলেন। বিশ্বভারতীর সেই সদ্য প্রাক্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত প্রথম মুখ খুললেন আনন্দবাজারের কাছে। সাক্ষাৎকারে বেরিয়ে এল ক্ষোভ। শুনলেন আবীর মুখোপাধ্যায় ও রোহন ইসলাম। যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগে যুক্ত ছিলাম, তাদেরও ক্যাম্পাস আছে। সেখানে বাইরের লোকেরা হাঁটতে আসেন। কিন্তু হেঁটে চলে যান। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে কী হচ্ছে, সে সব নিয়ে তাঁদের কোনও গরজ নেই। বিশ্বভারতী কিন্তু অন্য রকম জায়গা।

কলকাতায় নিজের বাড়িতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন সুশান্ত দত্তগুপ্ত। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।

কলকাতায় নিজের বাড়িতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন সুশান্ত দত্তগুপ্ত। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৭
Share: Save:

আনন্দবাজার: তিন বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বভারতীতে কিছু ‘রাবীন্দ্রিক মুটে’র কথা বলেছিলেন, যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে আঁকড়ে বসে আছেন। এখন কি মনে হচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে বিরোধের মাসুল দিতে হল?

সুশান্ত: কথাটা অন্য প্রসঙ্গে বলেছিলাম। যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগে যুক্ত ছিলাম, তাদেরও ক্যাম্পাস আছে। সেখানে বাইরের লোকেরা হাঁটতে আসেন। কিন্তু হেঁটে চলে যান। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে কী হচ্ছে, সে সব নিয়ে তাঁদের কোনও গরজ নেই। বিশ্বভারতী কিন্তু অন্য রকম জায়গা। অনেকের সঙ্গে হয়তো বিশ্বভারতীর যোগাযোগ ছিল, অনেকের সঙ্গে আর যোগাযোগ নেইও। তাঁদেরকে সাধারণত আশ্রমিক বলা হয়। আমার মনে হয়েছে, তাঁদের অনেকের ধারণা, তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে জানেন। আমার মনে হয়, সেই জানাটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। ফলে, তাঁরা সেই ‘টাইম উইন্ডো’-তে ‘ফ্রোজেন’ হয়ে আছেন। রবীন্দ্রনাথ এত বড় মাপের লোক, তাঁকে জানা ও ভাবে সম্ভব নয়। মুটের সঙ্গে তুলনাটি ছিল, মুটে যেমন তাঁর ঝাঁকায় আলু, পটল নিয়ে যায়, কিন্তু অনেক সময়েই তার ভার সামলাতে পারে না। এই মানুষগুলিও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এত জ্ঞানের ভাঁড়ার সামলাতে পারছেন না। তাঁদের কে বলেছিলাম, ‘রাবীন্দ্রিক মুটে’। যাঁরা নিজেদের ব্যাখ্যায় বিশ্বভারতীকে দেখতে চান, তাতেই বিশ্বভারতীর অনেক সময় ক্ষতি হয়।

আনন্দবাজার: আপনি যখন দায়িত্ব নিলেন, সে সময় রজতবাবু বলেছিলেন ‘যোগ্য লোকের হাতে দায়িত্ব গেল’। এখন উনি বলছেন, ‘আপনি ভয়ের বাতাবরণ’ তৈরি করেছিলেন। ‘আতঙ্ক’ ছড়িয়েছিলেন।

সুশান্ত: অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। আমার একটা রুচি আছে। প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিলে, আগের প্রসঙ্গে আর কথা বলি না। সেটা আমার রুচিতে বাধে। উচিতও নয়। উনি কী বলেছেন, সে নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। ওঁর সময় বিশ্বভারতী কী ছিল, সেটা উনিই জানেন। শান্তিনিকেতনও জানে। উনি বলেছেন, ভয়ের আবহাওয়া সৃষ্টি করেছি। সেটা বিশ্বভারতীর লোকেদের জিজ্ঞাসা করলেই বোঝা যাবে।

[রজতকান্ত রায়: আশ্রমে আতঙ্কের কথা আগেই জানিয়েছি। যে সব বাবারা নিজেদের মেয়েদের সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, বা যে সব কর্মী-অধ্যাপকেরা বার বার বদলি হয়েছেন, তাঁরা বলতে পারবেন। আর সুশান্ত দত্তগুপ্তের সময়ে ডেভেলপমেন্ট গ্রান্ট কিছুই আসেনি। প্রধানমন্ত্রী ৯৫ কোটি টাকা আমার সময়ে এসেছে।

আনন্দবাজার: ‘ভয়ের বাতাবরণ’ কি কাজ করতে গিয়ে আপনার কোনও সিদ্ধান্তর জন্য?

সুশান্ত: সেটা হয়তো যাঁদের আমি বদলি করেছি, বা সাসপেন্ড করেছি তাঁদের ধারণা। তবে আমার একটা ধারণা হয়েছিল, যেটা বিশ্বভারতীর পক্ষেও খুব গুরত্বপূর্ণ। এই যে শ্রীনিকেতন আর শান্তিনিকেতন— এই দুটো জায়গা আলাদা হয়ে গিয়েছে। এটার মেলবন্ধন করার খুব চেষ্টা করেছিলাম। এবং এই মেলবন্ধন না হলে বিশ্বভারতীর ভবিষ্যৎ নেই। গত দু’বছরে দুটো বই লিখেছি। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, রবীন্দ্রনাথের এই ধারণার মধ্যে ঢুকতে পেরেছিলাম। উনি নিজেই ১৯২০ সালের পর মনে করেছেন, শ্রীনিকেতন হল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এবং শান্তিনিকেতনের পাঠভবন সম্পর্কে ওঁর একটু হতাশাও তৈরি হয়েছিল। শ্রীনিকেতনে উনি নতুন করে কাজ শুরু করেন। শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতনে নিয়ে পৃথক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু, এই যে বিভেদ— এটা মেটানো দরকার মনে হয়েছিল। আমি শিক্ষা জগতের লোক, কিন্তু প্রশাসনেও কাজ করেছি। আমার মনে হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব জায়গাটাকে ধরা দরকার। গ্রন্থন বিভাগ যেমন অঙ্গ, শ্রীনিকেতনও অঙ্গ। অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার, ডেপুটি রেজিস্ট্রার এঁদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে না বসিয়ে, কোনও ছকে বাঁধা সিস্টেমের মধ্যে আবদ্ধ না রাখলে ভাল। যদি ওঁরা ছড়িয়েছিটিয়ে অন্য জায়গায় যান, তা হলে নতুন করে কাজ শিখতে পারবেন। যেমন আইএস অফিসারদের ক্ষেত্রে পোস্টিং হয়, তেমন। এ ভাবেই আমি ভেবেছিলাম, এঁদের ‘ডি-সেন্ট্রালাইজ’ করা যাবে। ওই কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই সব কিছুই উপাচার্যকেন্দ্রিক। আমি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে খুব পরিচিত। ওখানে ডিনের সঙ্গে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের লোক থাকেন। সব কিছু উপাচার্যের ঘাড়ে না দিয়ে তাঁদের অনেক দায়িত্বও আছে। এই ধারণা থেকেই আমি কিছু বদলি করেছিলাম।

আনন্দবাজার: এতেই কি কিছু লোকের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হল?

সুশান্ত: হতে পারে। পদ তো আমি তৈরি করিনি। পরীক্ষা নিয়ামক পদ তো ছিলই। প্রণবানন্দ যশ নামে এক জন সেই পদে ছিলেন।

আনন্দবাজার: প্রোভোস্ট পদও কি ছিল?

সুশান্ত: বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে হলে তার জন্য একটা ‘টিম’ দরকার। উপাচার্য তো বিভিন্ন কমিটি করেন। ‘ডেলিগেশন অব পাওয়ার’-ও করেন। কর্মসমিতি বা শিক্ষাসমিতি ছাড়াও আরও তো নানা কমিটি রয়েছে। এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কী করা যাবে! উপাচার্য কেবল ফাইলে সই করলে, বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কী করে! এটা আমার ধারণা। এ জন্যই টিম করা।

বিশ্বভারতী এমন একটা জায়গা হয়ে গিয়েছে, কেউ কিছু পেলে অন্যেরা মনে করে তারা বঞ্চিত হল। অন্যেরা ভাবতেই পারে, যে তারাও পাবে। তারাও কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে ধরবে। এখন পাওয়ার সঙ্গে তো যোগ্যতাও একটা বড় বিষয়। আমি অন্য যেখানে কাজ করেছি, সেখানে এমন দেখিনি।

আনন্দবাজার: ‘টিম’ গড়তে গিয়ে কি রাজনীতির শিকার হলেন?

সুশান্ত: সারা জীবনে কোনও দল বা রাজনীতি করিনি। তবে শান্তিনিকেতনি-রাজনীতির শিকার হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দলই সোচ্চার। সে অর্থে রাজনীতির শিকার তো বটেই!

আনন্দবাজার: ভেঙে বলবেন?

সুশান্ত: কিছু মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছে, কী করে আমাকে বিব্রত করা যায়। যাদের কাছে গিয়ে সেটা করা যায়, সেটাই করেছে। রাজনীতির কিছু লোকেরাও ভাবেন, এক জন উপাচার্যের বিরুদ্ধে বলে তাঁরাও গুরত্ব পেলেন। এক দলের নেতা লোকসভায় সোচ্চার হয়েছিলেন, তাঁকে তো সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে বিশ্বভারতীতে! আর একটি দলের লোক, আমারই সহকর্মী। আমারই বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। আর এক দলের নেতা কেন আমার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন, সেটাই জানি না!

আনন্দবাজার: পদ সৃষ্টি, আর্থিক অনিয়ম, যৌন হয়রানি—কী বলবেন এ সব অভিযোগ নিয়ে? সংবাদমাধ্যমে তো বিশদ বিবৃতি আগে দেননি।

সুশান্ত: নীরবতার কারণ, উপাচার্য হিসাবে মনে হয়েছে বক্তব্য রাখাটা ঠিক নয়। অনেকে মনে করতে পারেন সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছি। তাই ভেবেছি, তথ্য দিয়েই আমি লড়ব। অনেক অভিযোগের কথা উঠেছে, যা শো-কজের চিঠির মধ্যে নেই।

যৌন হেনস্থার কথা বললেন। উত্তর-পূর্ব ভারতের এক ছাত্রীকে নিয়ে একটি ঘটনা। তাতে উপাচার্যের নাম জড়ায় কী করে! আরেক জন মহিলা কর্মী, যিনি রবীন্দ্রভবনে কাজ করতেন, রবীন্দ্রভবন বলল, তিনি সেখানে কাজের উপযুক্ত নয়। এরপর গ্রন্থনবিভাগে বদলি করা হয় তাঁকে। সেখানে তিনি আপত্তি করায়, ফের কলাভবনে বদলি করা হয়। এটাকে বলা হচ্ছে যৌন হয়রানি! ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি পাঁচটি চার্জ এনেছে। তার মধ্যে যৌন হেনস্থা নেই।

প্রথম অভিযোগ—আমি কেন জেএনইউ থেকে পেনশন নিই। লেখা হচ্ছে বিশ্বভারতী থেকে স্যালারি নিই। এর মধ্যে অনেকগুলো ব্যাপার আছে। সাধারণ কর্মীদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও উপাচার্যের ক্ষেত্রে লেখা আছে, পেনশনের প্রসঙ্গ বিবেচনা হওয়ার কথা। সেটা হয়নি।

এ সব বিষয়কে নতুন করে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিতে নিয়ে আসা, আমার মনে হয় পুরোটাই ওদের ষড়যন্ত্র ছিল। পুরো কমিটিই একটা ষড়যন্ত্র।

আনন্দবাজার: ওদের মানে?

সুশান্ত: মন্ত্রকের কথা বলছি। আমার মনে হয়েছে ওই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি একটা শো ছিল। ওটা যেন ফুটবলের ‘ফিক্সড ম্যাচ’। ওই অভিযোগগুলো খুব হাস্যকর।

আনন্দবাজার: মদের বিল নিয়েও একটা অভিযোগ ছিল।

সুশান্ত: নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের (আইআইসি) কর্পোরেট মেম্বার বিশ্বভারতী। সেখানে আমি বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলছি। কেউ হয়তো মদ্যপান করেছেন। আমি যেহেতু বিশ্বভারতীর লোক, ওখানে সই করতে হয়। তারপর আইআইসি ওই বিল পাঠিয়ে দেয় বিশ্বভারতীকে। অ্যাকাউন্টস তো বলতেই পারত, যে এই বিল দেওয়া যাবে না। আমি তো বলিনি, যে পে করে দাও।

আনন্দবাজার: নিয়োগ দুর্নীতিতে বার বার জড়িয়েছে আপনার নাম।

সুশান্ত: এখন বেশিরভাগ পদই দীর্ঘ কাল ধরে ফাঁকা পড়েছিল। যেমন ডিরেক্টর এডুকেশন পদটি। এই অরাজকতা, অব্যবস্থায় ছিল বিশ্বভারতী। আমার মনে হল, এগুলো ভর্তি করে বিশ্বভারতীকে যদি একটু এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।

বিশ্বভারতী তো আর পাঁচটা বিশ্ববিদ্যালয় নয়। এখানকার ইউনিকনেস হল, গ্রাম পুনর্গঠন, গুরুদেবের শিক্ষা-ভাবনা। এখানে পাঠশালা থেকে গবেষণা— এই নানা স্তরের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চলতে হয়। সুতরাং এখানে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের প্রচণ্ড দায়িত্ব। আমাকে ডিল করতে হচ্ছে চার বছরের বাচ্চাদের সঙ্গে থেকে গবেষকদের। এবং রবীন্দ্রনাথের নানা দিক।

রবীন্দ্রনাথের গান ধরে রেখেছে সঙ্গীতভবন। এখন সেখানে ইউজিসির যে নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা হয়, কিছু হবে না ওখানে। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তো পিএইচডি, ছিল না। শান্তিদেব ঘোষের ছিল না। রামকিঙ্কর বেইজের ছিল না। তাঁরা তো বিশাল মাপের আর্টিস্ট। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া যাবে না? বিসমিল্লাকে বেনারস ইউনিভার্সিটি প্রফেসর করেনি?

এ নিয়ে কপিল সিব্বলের সঙ্গে কথা হয়েছিল একবার। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘একদম ঠিক করছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটি রয়েছে। কথা বলুন’। তখন মন্ত্রকের মীনাক্ষী গোপীনাথের সঙ্গে বসে একটা খসড়া করি। এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ফাইন আর্টসে আছে। গুরু পরম্পরা, অল ইন্ডিয়া রেডিও গ্রেড করে আছে। সেগুলো অ্যাপ্লাই করে যাঁরা খুব প্রতিষ্ঠিত, তাঁদের নিয়েছি। আমি তো আর রাবীন্দ্রিক মুটে নই। আমার মনে হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের এই আদর্শ বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেই সব নিয়োগ নিয়ে বলেছে ওঁরা।

আনন্দবাজার: বাংলা থেকে নাটকে একটি নিয়োগের কথাও আছে!

সুশান্ত: হ্যাঁ, তিনি বাংলা বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। এবং নাটক হচ্ছে তাঁর স্পেশালাইজেশন। বাংলা নাটক কি বাংলা ভাষার বাইরে? এ ভাবে দেখলে, বিশ্বভারতীর তো কোনও ফ্লেক্সিবিলিটি থাকবে না। আর এ সিদ্ধান্ত তো আমার একার নয়। ইন্টারভিউতে বাইরের এক্সপার্ট আসেন। তার জন্য উপাচার্যকে দায়ী করাটা মনে হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এর আগে যিনি (প্রাক্তন উপাচার্য রজতকান্ত রায়) আতঙ্ক ছড়ানোর কথা বলেছেন, তাঁর সময়ের কথা বলতে চাই না। তাঁর মেয়াদকালে অনেক নিয়োগ অনিয়ম হয়েছে, যার কোনও পদই ছিল না। এক জনের এক বছরের এমএ ডিগ্রি রয়েছে, তাঁকে সরাসরি অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর করা হয়েছে। এমন অনেক আছে।

[রজতকান্ত রায়: আমার সময়ে দুষ্ট অভিসন্ধিমূলক কোনও নিয়োগের কথা সব্যসাচী ভট্টাচার্য তাঁর রিপোর্টে বলেননি। কিন্তু প্রফেসর দত্তগুপ্তের সময়ে তদন্তে সেই রকম প্রমাণিত হয়েছে।]

আনন্দবাজার: মন্ত্রক তদন্ত শুরু করল, তখনও আপনি কনফিডেন্ট ছিলেন। নিজের দাবিতেই অটল ছিলেন। হঠাৎ পদত্যাগ করলেন কেন? করলেনই যখন, শান্তিনিকেতনে ফিরলেন কেন! আপনিই তো বলেছিলেন, ‘ওখানে কাজের আর পরিবেশ নেই!’

সুশান্ত: কাজের পরিবেশ নেই মানে, আমার স্ত্রীও বসে আছেন এখানে। আমাদের ৬০ ঘণ্টা ঘেরাও করা হয়। পূর্বিতা বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি। মাইকে বলছে, খিচুড়ি খান এসে। নানা অশ্লীল শব্দে গালাগাল করেছে আমার স্ত্রীকে-আমাকে। সেও সয়েছি। হঠাৎ খবর এল, রাষ্ট্রপতি বরখাস্ত করার চিঠিতে সই করে দিয়েছেন। তখন আমার মনে হল, এখানেও এমন বিশৃঙ্খলা, আর কেন্দ্রেও আমার যদি কোনও সমর্থন নেই। আমাকে যিনি নিয়োগ করেছেন, তাঁরও যদি কোনও সমর্থন না থাকে, তাহলে কীসের জন্য এখানে থাকব! সেই জন্য চলে এসেছিলাম। তাই পদত্যাগ করি। কিন্তু সেটা কেউ গ্রহণ করেনি। তাই ছুটি নিই। তখন কর্মসচিব বললেন, এভাবে ছুটি নিতে পারি না। তখন ফিরি। তখন পরিবেশ অতটা বিশৃঙ্খল ছিল না।

আনন্দবাজার: কারা গণ্ডগোল পাকাল?

সুশান্ত: সবাই নয়। অল্প কিছু মানুষ। হয়তো ১০ শতাংশ। বাকিরা কিন্তু নীরব দর্শক। তাঁরা যে সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ করছেন, তেমনও নয়। জেএনইউ-য়ের সঙ্গে তুলনা করি যদি, সেখানে সকলে সোচ্চার। সেখানে প্রাক্তনীরা সুপ্রিম কোর্টে কেস করছে। এখানে একটা প্রাক্তনীদের সংগঠন ঠিক করে তৈরি করতে পারলাম না।

আনন্দবাজার: কেন পারলেন না?

সুশান্ত: পারলাম না। অনেকেরই কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। সেই জন্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তারা।

আনন্দবাজার: নাকের মূল্যায়নে সেই কারণেই কি পিছিয়ে পড়া?

সুশান্ত: এখানে অনেক কালিদাস আছে। ওরা ভাবল নাকের গ্রেড খারাপ হলে, উপাচার্যকে বিপদে ফেলা যাবে। কিন্তু এতে বিশ্বভারতী নাকি আমার মুখ কালো হল? তো তারা গিয়ে যা-তা সব বলতে আরম্ভ করল। তারমধ্যে দু’একজন আছে নাকের মেম্বর, তারাও বলেছে। বিশেষ করে প্রাক্তনীরা। এর পরে ওরাই থাকবে ওখানে। এই ‘বি গ্রেড’ নিয়ে ভুগতে হবে।

আনন্দবাজার: এই প্রাক্তনীদের সঙ্গেই তো আপনার প্রথম বিরোধ। পুলক চক্রবর্তী, কিশোর ভট্টাচার্য।

সুশান্ত: এঁদের প্রাক্তনী বলা হচ্ছে, এতে আমার খুব অবাক লাগছে। শ্যামলী খাস্তগীর, সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুপ্রিয় ঠাকুরদের সঙ্গে তুলনা করার কথা ভাবতে পারছি না। প্রাক্তনীদের এটাই রোল নয়, যে ওখানে বসব, ঘোঁট পাকাব, কোথায় অ্যাডমিশন হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণে রাখব!

[কিশোর ভট্টাচার্য (কোষাধ্যক্ষ, অধ্যাপকসভা): আজ এই সব প্রশ্ন উঠছে কেন! সব প্রাক্তনীই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ওঁকে। মাঝপথে বিভাজনের খেলা খেলতে গেলেন কেন? আজ এমন ঘটনায় মাথা হেঁট হল সকলের।]

আনন্দবাজার: সরাসরি সংঘাত কি সেই ঘুঘুরবাসায় হাত পড়ায় হল?

সুশান্ত: বলতে পারেন। তবে, চেষ্টা করেছি। কিন্তু, সকলে সমান নয়। কেউ কেউ সপ্তাহে আট-দশ ঘণ্টা কাজ করেছেন। ভেবেছেন পাঁচ বছর কাটিয়ে দিলেই হবে। সে ভাবে চলে না।

(চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy