বিশ্বভারতীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগের সেকশন অফিসার অর্ক দাসকে অবিলম্বে কাজ যোগ দিতে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার ওই নির্দেশ দিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে এ-ও জানিয়েছেন, ওই অফিসারের ছুটি মঞ্জুরের বিষয়টি তিন সপ্তাহের মধ্যে বিবেচনা করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং অবিলম্বে তাঁর বেতন চালু করতে হবে।
ওই অফিসারের আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য শুক্রবার জানান, তাঁর মক্কেল ১৯৯৮ সালের ৩ ডিসেম্বর গ্রন্থন বিভাগে যোগ দেন। চাকরির শর্ত ছিল, তাঁকে তাঁর অসুস্থ মাকে দেখাশোনা করতে হবে। দেখাশোনা না করলে তিনি কর্মচ্যুত হবেন। গত বছর ১৮ অক্টোবর অর্ককে গ্রন্থন বিভাগের কলকাতার এজেসি বোস রোডের অফিসে বদলি করা হয়। বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসারদের ইনক্রিমেন্টের দাবি তুলেছিল কর্মিসভা। বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরে বিক্ষোভও দেখান কর্মিসভার সদস্যেরা। এর পরেই অর্কবাবুকে বদলি করে দেওয়া হয়। কর্মীরা প্রশ্ন তোলেন, এক জন কর্মীর মা মরণাপন্ন, সেই অবস্থায় তাঁকে বদলি করার অর্থ কী? এই বদলির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত বছর অক্টোবরে উপাচার্যকে তাঁর অফিসে তালাবন্ধ করে রাখার অভিযোগ ওঠে কর্মিসভার বিরুদ্ধে। চলে লাগাতার বিক্ষোভও।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অবশ্য নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরেননি। অঞ্জনবাবু জানান, প্রতিদিন শান্তিনিকেতনের বাড়ি থেকে কলকাতার অফিসে যাতায়াত করতে করতে অর্কবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাকে দেখাশোনাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
বিশ্বভারতীর পিয়ার্সন হাসপাতালের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অর্কবাবুকে চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন। সেই মতো গত বছরের ১১ নভেম্বর তিন সপ্তাহের ‘মেডিক্যাল লিভ’-এর আবেদন জানান অর্ক। ওই দিনই অসুস্থ মাকে সঙ্গে নিয়ে চেন্নাই রওনা হন তিনি। কিন্তু মাঝরাস্তায় মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তিনি ফিরে মাকে পিয়ার্সন হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ২৮ নভেম্বর মা মারা যান। তার পরে অর্কবাবু চেন্নাই গিয়ে নিজের চিকিৎসা করান।
অঞ্জনবাবু জানান, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মায়ের শ্রাদ্ধ হয়। পরের দিনই অর্কবাবু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে জানান, তিনি কাজে যোগ দিতে চান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানান, ৭ ডিসেম্বরই তাঁকে ই-মেল মারফত জানানো হয়েছে, চেন্নাই হাসপাতালের চিকিৎসকের ‘সার্টিফিকেট’-কে পিয়ার্সন হাসপাতালের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বীকৃতি না দিলে তাঁর ‘মেডিক্যাল লিভ’ মঞ্জুর হবে না। অর্কবাবু চেন্নাই থেকে সার্টিফিকেট আনান। ওই সার্টিফিকেটে লেখা ছিল, ২৭ ডিসেম্বর থেকে তিনি কাজে যোগ দিতে পারবেন। ৩০ ডিসেম্বর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাঁকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, ছুটি মঞ্জুর না হওয়া পর্যন্ত তিনি কাজে যোগ দিতে পারবেন না। তাঁর বেতনও বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
বিশ্বভারতীর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করেন ওই সেকশন অফিসার। তাঁর আইনজীবী আদালতে জানান, অর্কবাবু নিজে চেন্নাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি। পিয়ার্সন হাসপাতালের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকই তাঁকে সেখানে যেতে পরামর্শ দেন। চেন্নাই হাসপাতালের সার্টিফিকেটকে পিয়ার্সন
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে স্বীকৃতি দিতে হবে, এমন কোনও নিয়ম বিশ্বভারতীর আইনে নেই। পাল্টা যুক্তি হিসেবে বিশ্বভারতীর আইনজীবী সৌম্য মজুমদার আদালতে জানান, কর্তৃপক্ষ অর্কবাবুর ছুটি মঞ্জুর করেননি। তাই ওই অফিসারকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি।
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বৃহস্পতিবার অর্কবাবুকে কাজে যোগ দিতে দেওয়ার এবং বেতন চালু করার নির্দেশ দেন বিচারপতি চক্রবর্তী। এই রায় প্রসঙ্গে কর্মিসভার সভাপতি গগন সরকারের প্রতিক্রিয়া, “একটি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তকে নাকচ করার জন্য আদালতকে ধন্যবাদ। সত্যের জয় হয়েছে।’’ এ ব্যাপারে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। মেসেজের জবাবও শুক্রবার রাত পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy