চৈত্যগৃহের বর্তমান অবস্থা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
মৃদু ভূমিকম্প ও লাগাতার বৃষ্টিপাতের পরে গোড়া থেকে উপড়ে গিয়েছিল পুরনো ঘণ্টাতলা সংলগ্ন প্রাচীন বটগাছ। গত ২৬ অগস্ট দুর্যোগের দিনে শুধু গাছই ওপড়ায়নি, ভাল রকম ক্ষতি হয় ঘণ্টাতলার কাঠামোটিরও। সেই ঘটনার তিন মাসেরও বেশি সময় কেটে গেল, তবু ন্যূনতম সংস্কার হয়নি ঘণ্টাতলার। এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ রয়েছে।
উপড়ে পড়া গাছটি এখনও সেই একই ভাবে পড়ে আছে। অন্যদিকে, ঐতিহ্যশালী চৈত্যগৃহেরও অবস্থাও তথৈবচ। দেওয়াল থেকে খসে পড়ছে মাটির প্রলেপ, জানালার একটি কাচ সম্পূর্ণ উধাও। গোটা শরীরে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে শেষের দিন গুনছে শান্তিনিকেতনের সাধের ‘চৈতীবাড়ি’। মৃণালিনী ছাত্রীনিবাসের বেড়ার গায়ে বিনা বাধায় জেগে উঠেছে মানুষ সমান আগাছার জঙ্গল। পাঠভবনের আত্মার আত্মীয় সুসজ্জিত আম্রকুঞ্জেও আগাছার ছড়াছড়ি। সবমিলিয়ে এক অদ্ভুত দৈন্যদশায় দিন কাটাচ্ছে শান্তিনিকেতনের মূল আশ্রমপ্রাঙ্গণ। অন্যদিকে, পাঁচিল তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে। মেলার মাঠ ঘেরার কাজ প্রায় শেষ। বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও আন্তর্জাতিক অতিথিনিবাসের সামনেও তৈরি হয়েছে দুটি বিশাল দরজা। যাদের নামকরণ করা হয়েছে যথাক্রমে ‘বলাকা’ ও ‘পূরবী’।
আশ্রমিকদের একাংশের স্পষ্ট বক্তব্য, দরজার নামকরণে গুরুদেবের সৃষ্টিকে ব্যবহার করা হচ্ছে কিন্তু আশ্রমের ঐতিহ্যরক্ষার দিকে কোনও নজরই নেই কর্তৃপক্ষের। আশ্রমিক শুভলক্ষ্মী গোস্বামী বলেন, “রবীন্দ্র আদর্শ ও ঐতিহ্যকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে এখন দরজার নামকরণে রবীন্দ্রনাথকে ঢাল করছেন উপাচার্য। উপাচার্যের প্রত্যেকটি পদক্ষেপেই প্রকাশ পায়, যে তিনি রবীন্দ্রনাথকে জানেন না, চেনেন না।”
করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ পাঠভবনের পঠনপাঠন। বন্ধ বহিরাগতদের প্রবেশও। এমনকি সাংবাদিকদেরও প্রবেশাধিকার নেই আশ্রম প্রাঙ্গণে। ফলে আশ্রমের অভ্যন্তরীণ অবস্থা সম্পর্কে কিছু ভেসে আসা টুকরো কথা আর টুকরো ছবিই ছিল একমাত্র ভরসা। তবে, শনিবার আশ্রমে প্রবেশ করে দেখা গেল প্রকৃত অবস্থা শোচনীয়। ঘণ্টাতলার পুনর্নির্মাণ ও চৈত্যগৃহের আশু সংস্কার না হলে বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য থেকেই হারিয়ে যাবে এই দুই বিখ্যাত স্থাপত্য। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র ঋষভ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঘণ্টাতলা ও চৈত্যগৃহ বিশ্বভারতীর কৃষ্টির অঙ্গ। সেগুলি সংরক্ষণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের এই নিরাসক্তি যেমন আশ্চর্যের, তেমনই আশঙ্কারও।” বর্তমানে বেশকিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি বা জিনিসপত্র নিতে সাময়িকভাবে হস্টেলে আসছেন ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশ। মৃণালিনী ছাত্রীনিবাসে আগাছার স্তূপ সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিশ্বভারতীর ছাত্র সোমনাথ সৌ বলেন, “হস্টেলের যা অবস্থা তাতে ভিতরের ঘরগুলিতে সাপখোপ থাকাও বিচিত্র নয়। কোনও ছাত্রীর কিছু হলে তার দায় কিন্তু কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।”
এ বিষয়ে ফোন ও এসএমএস-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে কোনও উত্তর দেননি বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy