সার নিয়ে যাচ্ছেন চাষী। —নিজস্ব চিত্র।
আমনের মরসুমে সারের দাম নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ উঠছে। পুরুলিয়া জেলার একাধিক ব্লকে চাষিদের বড় অংশ মূলত দু’ধরনের রাসায়নিক সার খোলা বাজারে চড়া দামে বিকোচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন। সারের বস্তায় উল্লেখ করা দামের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে বলে দাবি তাঁদের। জেলা কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা আদিত্য দুয়ারি বলেন, “অভিযোগ কানে এসেছে। বিভিন্ন বাজারে গিয়ে সরজমিনে সারের দাম খতিয়ে দেখা হবে।”
চলতি মরসুমে জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেরিতে। শ্রাবণের গোড়া থেকে মাঠে বীজতলা তৈরি করে চাষিরা অপেক্ষা করলেও বৃষ্টি মিলেছে শ্রাবণের শেষের দিকে। চাষিরা জানান, ধান রোয়ার আগে জমি তৈরির সময়ে এক বার সার দিতে হয়। পরে, ধান বেড়ে ওঠার সময়ে প্রয়োজন বুঝে সার দেওয়া হয়, যাকে ‘চাপান সার’ বলে। বর্ষা ঢোকার পরে রোয়ার জন্য হাতে সময় খুব একটা বেশি না থাকায় স্থানীয় বাজারে যে দামে সার বিক্রি হয়, সে দামেই কিনতে বাধ্য হন চাষিরা। তাঁদের একাংশ জানান, প্রথমত রোয়ার জন্য শ্রমিক পাওয়ার সমস্যা রয়েছে। কারণ, এ সময়ে প্রতিটি গ্রামেই চাষের মরসুম তুঙ্গে। বাড়তি মজুরি দিয়ে শ্রমিক জোগাড় করতে হচ্ছে। জমি তৈরির জন্য ঘণ্টা প্রতি এগারোশো-বারোশো টাকায় ট্রাক্টরও ভাড়া করতে হচ্ছে। গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে সারের দাম।
আড়শার বামুনডিহা গ্রামের আশুতোষ যোগী, কুদাগাড়া গ্রামের মধুসূদন মাহাতোদের কথায়, “রোয়ার সময়ে জমিতে দেওয়ার জন্য স্থানীয় বাজার থেকে ইউরিয়া সার কিনতে হয়েছে। তবে, বস্তার গায়ে যে দাম লেখা রয়েছে, তার চেয়ে দেড়শো টাকা বেশি দিতে হয়েছে। অন্যত্রও খোঁজ নিয়ে দেখলাম, প্রায় একই দামে ওই সার বিক্রি হচ্ছে।” জয়পুর ব্লকের কর্মাটাঁড় গ্রামের বাসিন্দা মণীন্দ্র মাহাতো জানান, কৃষি সমবায় সমিতিতে সার মিলছে না। খোলা বাজার থেকে বস্তায় লেখা দামের চেয়ে একশো টাকারও বেশি দামে সার কিনেছেন। শুধু ইউরিয়া নয়, ধান রোয়ার সময়ে যে ‘ডিএপি’ সার ব্যবহার করা হয়, তা-ও বস্তায় লেখা দামের চেয়ে দুশো টাকারও বেশিতে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি কাশীপুর ব্লকের পাঁড়াশোল গ্রামের নন্দকিশোর মাহাতো, কমল মাহাতোদের। তাঁরা জানান, ধান রোয়ার জন্য হাতে আর সময় নেই। তাই যা দাম চাইছে, দিতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাইকারি সার ব্যবসায়ীর দাবি, “চাহিদামতো মালপত্র পাওয়া যায় না। বিভিন্ন জায়গা থেকে তা আনতে হয়। পরিবহণ খরচ অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই একটু বেশি দামে বেচা ছাড়া ব্যবসায়ীদের উপায় থাকে না।” এ দিকে, আড়শার শিরকাবাদ কৃষি সমবায়ের তরফে অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের কাছে চাহিদামতো মাল আসছে না। সার পেলে নির্ধারিত যে দাম রয়েছে, তাতেই বিক্রি করা হয়। তবে না পাওয়া গেলে কী ভাবে দেব!” পুরুলিয়া জেলা পরিষদের বিদায়ী বোর্ডের কৃষি ও সেচ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ মীরা বাউরির আশ্বাস, অভিযোগ নিয়ে জেলা কৃষি দফতরের সঙ্গে কথা বলবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy