প্রতীকী ছবি।
কোভিড পজ়িটিভ এক প্রসূতিকে তাঁর সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে নিজের এলাকায় ফিরতে হল বেসরকারি বাসে। অভিযোগ, করোনা আক্রান্ত জেনেও তাঁকে কোভিড হাসপাতাল বা সেফ হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করেনি সিউড়ি জেলা হাসপাতাল। প্রসূতির স্বামীর আরও অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হলেও তাঁর স্ত্রী করোনা আক্রান্ত শুনেই চালক তাঁদের নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন। নিরুপায় হয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ওই দম্পতিকে বাসে চেপে কাঁকরতলায় ফিরতে হয়েছে।
হাসপাতালের ‘গাফিলতি’-র জেরে সংক্রমণ হুট করে কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে খয়রাশোলের নানা এলাকায়। সেটা নিয়ে যেমন ক্ষোভ বেড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে, তেমনই উদ্বেগে স্থানীয় প্রশাসন। বিডিও (খয়রাশোল) বিডিও সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে বাসেই বাড়ি ফিরছেন ওই প্রসূতি বলে আমি জেনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি।’’
যা শুনে বীরভূম স্বাস্থ্যজেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘এমনটা হওয়ার কোনও কারণ নেই। ঠিক কী ঘটেছে খোঁজ নিচ্ছি।’’ অ্যাম্বুল্যান্স না দেওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি সিউড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার শোভন দে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হাসপাতাল নয়! শুনেছি ওঁর জন্য ১০২ অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু এটাও সত্যি— ওঁরা সেই গাড়িতে যাননি।’’ তাঁর দাবি, গাড়ির তরফে হাসপাতালকে কিছুই জানানো হয়নি। অ্যাম্বুল্যান্স চালক ওঁদের নিতে অস্বীকার করেছেন কিনা বা আর কোথায় বিচ্যুতি, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রাতে ওই প্রসূতি ও তাঁর শিশুকন্যাকে বোলপুর কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোলের কাঁকরতলা থানা এলাকার প্রত্যন্ত কদমডাঙা গ্রামের বাসিন্দা ওই প্রসূতিকে গত শনিবার সকালে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান পরিবারের লোকজন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতেই অস্ত্রোপচার করে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা। এটি তাঁর দ্বিতীয় সন্তান। সিজারিয়ানের পাশাপাশি তাঁর লাইগেশনও হয়। এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু, নিয়ম মেনে অস্ত্রোপচারের আগে নেওয়া তাঁর লালারসের নমুনার রিপোর্ট করোনা পজিটিভ আসে মঙ্গলবার রাতে।
জানা গিয়েছে, এই খবর জেনে খয়রাশোল ব্লক প্রশাসন ও পুলিশের তরফে বুধবার সকালে ওই প্রসূতির ৯ সদস্যের পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয় কেউ যেন বাড়ি থেকে বাইরে বের না হয়। তাঁদের গৃহ-নিভৃতবাসে থাকতেও বলা হয়। কোভিড পজিটিভ প্রসূতিকে নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল, সেটা নিয়ে যখন স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনে চর্চা চলছে, তখন সকলে জানতে পারেন, ওই প্রসূতিকে ছেড়ে দিয়েছে হাসপাতাল। এর পরে তাঁরা জানতে পারেন, ওই দম্পতি ও তাঁদের সদ্যোজাত সন্তান এবং পাড়ার এক মহিলা অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে বাসেই ফিরছেন। তার পরেই উৎকন্ঠা শুরু। ক্ষোভও বাড়তে থাকে এলাকায়। কাঁকরতলা থানা সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করে কদমডাঙা বাসস্ট্যান্ড ও প্রসূতির বাড়িতে।
ওই দম্পতি জানান, হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এ দিন তাঁরা একটি বাসে চেপে খয়রাশোলের পাঁচড়া মোড় নামেন। সেখান থেকে আবার বাবুইজোরগামী বাসে চেপে বিকেল পাঁচটা নাগাদ কদমডাঙা নামেন। এলাকার মানুষের ক্ষোভ, এত প্রচার, এত সাবধানতার পরেওও কী করে এক জন করোনা আক্রান্ত প্রসূতিকে এ ভাবে ছেড়ে দিল সরকারি হাসপাতাল!
ওই প্রসূতির স্বামী অসহায়ের সুরে বলছেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে গাড়ি মেলেনি, আমরাই বা কী করব! বাধ্য হয়েছি বাসে উঠতে।’’ তবে থানার পক্ষ থেকে বাসের সমস্ত যাত্রী এবং চালক-খালাসিকে আইসোলেশনে রেখে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy