আহতদের নিয়ে বিষ্ণুপুর থানার সামনে। নিজস্ব চিত্র।
বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে মহকুমা দফতরে। তার পরে, ঘরছাড়া প্রায় একশো জনকে নিয়ে শুক্রবার বিষ্ণুপুরের বেলিয়াড়া গ্রামে ঢুকতে গিয়েছিল পুলিশ। অভিযোগ, এক পক্ষ বাধা দেয়। পুলিশের সামনেই চলে বেধড়ক মারধর। ঘটনায় শিশু-সহ প্রায় ১০ জন জখম হয়েছেন। চার জনকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়েছে। মোট ১৮ জনের নাম করে এ দিন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শেখ মুক্তার নামে এক আহতের স্ত্রী জীবন বিবি। থানার সামনে চলেছে বিক্ষোভ।
গত বছর ১ অগস্ট বেলিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা, স্থানীয় উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান শেখ বাবর আলিকে খুনের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্তদের অন্যতম তৃণমূলেরই বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধান তসমিনা খাতুনের স্বামী রহিম মণ্ডল। ঘটনার পর থেকে তসমিনারা এবং গ্রামের আরও শতাধিক মানুষ ঘরছাড়া। প্রধান না আসায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে উলিয়াড়া পঞ্চায়েতেও। সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করছে প্রশাসনও। বৃহস্পতিবার মহকুমা দফতরে একটি বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, শুক্রবার ঘরছাড়াদের ফেরানো হবে। তবে তসমিনা, রহিম-সহ প্রায় ১৮ জনকে এ দিন গ্রামে না ঢুকতে বলেছিল প্রশাসন।
শুক্রবার দুপুরে ৯০ জন পুরুষ, মহিলা ও শিশুকে নিয়ে রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি বাস ছাড়ে বেলিয়াড়া গ্রামের উদ্দেশে। দু’টি ভাগে তাঁদের গ্রামে ঢোকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুলিশ। কয়েক জনকে বেলিয়াড়া বাস স্টপে রেখে বাকিদের গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় প্রথমে। অভিযোগ, সেই সময়ে আচমকা স্টপে দাঁড়িয়ে থাকা বাস আক্রমণ করে গ্রামের কিছু লোকজন। লাঠিসোটা দিয়ে তাঁদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ঘরছাড়া সেরিনা বিবি, জীবন বিবি, হাসিনা বিবি, বদরু আলম মণ্ডলের।
ঘরে ফিরতে না পারা মনিরুদ্দিন মিদ্যা শুক্রবার বলেন, “প্রশাসনের কথা মতো আমরা গ্রামে ফিরছিলাম। প্রায় ৩৫ জনকে নিয়ে পুলিশ গ্রামে যায়। তৃণমূল নেতারাও সঙ্গে যান। আমরা জনা পঞ্চাশ বাসের কাছে অপেক্ষা করছিলাম। দ্বিতীয় দফায় আমাদের বাড়ি ঢোকানোর কথা ছিল।’’
তাঁর অভিযোগ, সেই ফাঁকে কয়েক জন মোটরবাইকে এসে হাজির হয়। লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে পুলিশের সামনেই। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে অনেকেই ছুটে যে দিকে পেরেছে পালিয়েছে। আহতদের বাসে তুলে কোনও রকমে বিষ্ণুপুর থানায় চলে আসি।”
থানার সামনে রাস্তায় আহতদের রেখে বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চলে। পরে পুলিশ তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এ দিন বাড়ি ঢুকেও আতঙ্কে প্রায় ৫ কিলোমিটার ছুটে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান শেখ বাপন। ঘরছাড়াদের মধ্যে বদরু আলম মণ্ডল বলেন, “আমি মারধরের ভিডিও করছিলাম। চড়চাপড় দিয়ে মোবাইল ছিনিয়ে নিতে চায়। ছুটে পালাই। পুলিশকেও ওরা মারধর করেছে। নেতাদের কথাও মানেনি।’’
তাঁর অভিযোগ, এক মহিলা ও এক শিশু-সহ মোট পাঁচ জন মারধরে জখম হয়েছেন। বদরু বলেন, ‘‘গ্রাম থেকে বেরিয়ে কে কোথায় লুকিয়ে আছে, জানি না। পুলিশের ভূমিকা মোটেই ইতিবাচক নয়।”
ঘটনার বিষয়ে এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) কুতুবউদ্দিন খান বলেন, “ঘরছাড়াদের ফেরাতেই পুলিশ উদ্যোগী হয়েছিল। গ্রামের মানুষের মধ্যে একটা ক্ষোভ ছিল। আমরা বুঝিয়েছি, মিলেমিশে থাকার কথা হয়েছে। কিছু লোক বাইরে আছেন। তাঁদেরও গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।”
মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত করছি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে দোষীদের বিরুদ্ধে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy