Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Chilkigarh Biodiversity Heritage

জীব বৈচিত্র রক্ষায় তৎপরতা নেই পর্ষদের

তথ্যচিত্র তৈরির জন্য এ দিন সকালেই চিল্পিগড়ে পৌঁছয় একটি বিশেষ দল। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য জীব বৈচিত্র পর্ষদের গবেষক অর্নিবাণ রায়, জীব বৈচিত্র পর্ষদের জেলা কো-অডিনের্টর দেবজ্যোতি নন্দ।

চিল্কিগড়ে তথ্যচিত্র তৈরির কাজ চলছে।

চিল্কিগড়ে তথ্যচিত্র তৈরির কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।

রঞ্জন পাল
জামবনি শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:০৪
Share: Save:

জামবনির চিল্কিগড়ের কনক দুর্গা মন্দির ও সংলগ্ন এলাকা রাজ্যের মধ্যে তৃতীয় ও দেশের মধ্যে দশম ‘বায়ো ডাইভারসিটি হেরিটেজে’র তকমা পেয়েছে। রাজ্য জীব বৈচিত্র পর্ষদ ‘হেরিটেজ’ জায়গাগুলিকে নিয়ে সামগ্রিক ভাবে তথ্যচিত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বভাবতই সেই তথ্যচিত্র থাকবে চিল্কিগড়ও। তথ্যচিত্রের কাজেই বৃহস্পতিবার চিল্কিগড় এসেছিলেন রাজ্য জীব বৈচিত্র পর্ষদের কর্তারা। এসে দেখলেন, চিল্কিগড়ের হতশ্রী অবস্থা। মানলেন, রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা।

তথ্যচিত্র তৈরির জন্য এ দিন সকালেই চিল্পিগড়ে পৌঁছয় একটি বিশেষ দল। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য জীব বৈচিত্র পর্ষদের গবেষক অর্নিবাণ রায়, জীব বৈচিত্র পর্ষদের জেলা কো-অডিনের্টর দেবজ্যোতি নন্দ। এ ছাড়াও ছিলেন জামবনির বিডিও দেবব্রত জানা। ২০১৮ সালের গোড়ায় চিল্কিগড় ‘বায়ো ডাইভারসিটি হেরিটেজে’র তকমা পেয়েছে। তারপর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একটি হেরিটেজ কমিটি গঠন হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, রক্ষণাবেক্ষণ সহ নানা কাজের জন্য পরিকল্পনা করে জীব বৈচিত্র পর্ষদের কাছে পাঠানোর কথা ওই কমিটির। রাজ্য জীব বৈচিত্র পর্ষদের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, গত ছ’বছরে জেলা থেকে কোনও পরিকল্পনা দফতরে এসে পৌঁছায়নি। ব্লকস্তর থেকে একটি পরিকল্পনা গিয়েছে। তবে তা পড়েরয়েছে জেলাস্তরে।

চিল্কিগড় কনকদুর্গার মন্দিরকে ঘিরে চারপাশে ৬১ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিরল প্রজাতির গাছ রয়েছে। সেই সঙ্গে দুষ্প্রাপ্য ভেষজ উদ্ভিদও রয়েছে। মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ডুলুং নদী। কিন্তু এই জঙ্গলে প্রায় তিনশো যে বিরল প্রজাতির গাছ রয়েছে তা এই জেলায় আর কোথায় নেই। তাই গাছগুলি চিহ্নিতকরণ করে সেগুলির নামকরণ করা হয়েছিল। এই জঙ্গলটি আগে অসংরক্ষিত ছিল। ২০১৭ সালে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ থেকে ৪১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জঙ্গলে ঘেরাটোপ করা হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটি মরচে পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনকি অনেক জায়গায় ঘেরাটোপ ভেঙে গিয়েছে। এক জায়গায় দেখা গেল, সেই ঘেরাটোপ ভেঙে মানুষজন জঙ্গলের ভিতরে ঢোকার রাস্তা তৈরি করেছেন। সেখান থেকে শুকনো কাঠ সংগ্রহ করছেন। কনক দুর্গা মন্দির সংলগ্ন এলাকাটি প্লাস্টিক মুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু জীব বৈচিত্র পর্যদের কর্তারা এ দিন দেখেন, জঙ্গল চত্বরে ইতি উতি প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকের বোতল পড়ে রয়েছে। মন্দিরকে ঘিরে জঙ্গলের মাঝে রয়েছে অর্ধচন্দ্রাকৃতি পরিখা। প্রাকৃতিক ওই পরিখার নাম বুড়ি ডুলুং। জঙ্গলের মাঝে বুড়ি ডুলুং এর উপর লোহার রেলিং দিয়ে সেতু নির্মাণ হয়েছিল। সেই সেতুর লোহার পাইপ মরচে ধরে ক্ষয় হয়ে নষ্টহয়ে যাচ্ছে।

এ দিন জীব বৈচিত্র পর্ষদের গবেষক অনির্বাণ রায় বিডিওকে জানান, ঘেরাটোপ ঠিক করা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে নদীর পাড় সংলগ্ন অনেক জায়গায় ভেঙে গিয়ে গাছ পড়ে যাচ্ছে। এ সম্পর্কে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন গবেষক। জামবনির বিডিও দেবব্রত জানা বলেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জীব বৈচিত্র পর্যদের কর্তারা যেভাবে বলেছেন সেভাবে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’’ আগে মন্দির বা জঙ্গলে ঢোকার জন্য ৫টাকার টিকিট করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে শাসক দলের এক জনপ্রিতিনিধির চাপে তৎকালীন ব্লক প্রশাসন টিকিটের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। ফলে আয় বন্ধ হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় রক্ষণাবেক্ষণও।

কনকদুর্গা মন্দির কল্যাণ সমিতির কার্যকরী সভাপতি সমীর ধল বলছেন, ‘‘মন্দির চত্বরে ঢোকার এন্ট্রি ফি নেওয়াও দু’বছর ধরে বন্ধ। ফলে মন্দির সমিতির আয়ও বন্ধ। এ জন্যই রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসন রক্ষণাবেক্ষণ না করলে ওই ঘেরাটোপ কিছুদিন পর উল্টে পড়ে যাবে।’’ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে কনকদুর্গা মন্দির চত্বর সংস্কার ও পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য দু’কোটি টাকা বরাদ্দ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই টাকায় কনকদুর্গার মূল মন্দিরের সংস্কার ও ভোগ খাওয়ানোর জন্য একটি খাবার ঘর তৈরি হয়েছে। ভোগের জন্য রান্নার ঘরের সংস্কার হয়েছে। একটি অতিথিশালা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়াও নষ্ট হয়ে যাওয়া বিষ্ণু মন্দির সংস্কার হয়েছে।

মন্দির পেয়েছে যত্নের ছোঁওয়া। অযত্নে রয়েছে ভেষজ উদ্ভিদেভরা জঙ্গল।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Biodiversity Board Jambani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy