গ্রামে কোনও সর্বজনীন পুজো নেই। কিন্তু রঘুনাথপুর থানার চোরহাপাড়ি পঞ্চায়েতের শিমূলকুঁদি গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির সাবেকি পুজোর নবমীতে পাত পেড়ে খিচুড়ি খাওয়ায় সেই খামতিটাও আর থাকে না। এই পুজোর জন্যই সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন গ্রামের বাসিন্দারা।
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বর্তমান সদস্যেরা জানান, তাঁর বাবা কাশীনাথবাবু নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ ছিলেন। নিত্যপূজায় কোনও ফাঁকি ছিল না। দুর্গাপুজোর চারদিন পটে দেবীর আরাধনা করতেন। বংশরক্ষার জন্য মন্দির প্রতিষ্ঠার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন তিনি। ইচ্ছাপূরণও হয়। ১৩৯১ বঙ্গাব্দে কাশীনাথবাবুর শুরু করা সেই পুজো এখনও চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর চার ছেলে গুরুপদ, শ্যামাপদ, রঞ্জিত এবং সঞ্জিত। আর সেই পুজোয় মিশে গিয়েছে গ্রামের বাসিন্দাদের আবেগ।
কাশীনাথবাবুর বড়ছেলে শ্যামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই গ্রামে তাঁদের আদি বসত নয়। তাঁদের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন খাজুরা পঞ্চায়েতের দুলালপুর গ্রামে। বর্গি আক্রমণের আশঙ্কায় জঙ্গলে ঘেরা দুলালপুর ছেড়ে তাঁরা চলে এসেছিলেন পাশের মধুতটিতে। শিমুলকঁদি গ্রামের মৌজার একাংশ বেড়ো গ্রামের পঞ্চকোট রাজবংশের রাজপুরোহিতদের পরিবারের কাছ থেকে কিনে সেখানে এসে বসত শুরু করেন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা কাশীনাথবাবু এবং তাঁর কাকা গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্যামাপদবাবু বলেন, ‘‘ছোটবেলায় শুনেছি, সমস্ত সম্বল দিয়ে এই জমিটা কেনা হয়েছিল।’’
কাশীনাথবাবুর সেজ ছেলে রঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘বাবা পুজোর জন্য ব্যাঙ্কে আমানত রেখে গিয়েছেন। তার সুদের সঙ্গে ভাইয়েরা চাঁদা দিয়ে পুজোর খরচ চালাই। কিন্তু এই সমস্ত আয়োজনই সম্ভব হত না যদি গ্রামের অন্য বাসিন্দারা এগিয়ে আসতেন। শুরুর থেকেই এই পুজো আসলে গ্রামের সবাই মিলে করেন।’’
স্থানীয় বাসিন্দা অনিল গড়াই, জিতেন পরামাণিকেরা বলেন, ‘‘পুজোর চারটে দিন গ্রাম উৎসবে মেতে ওঠে। কোনও দিন মনে হয়নি পুজোটা আমাদেরও নয়।’’
এই পুজো নিয়ে জনশ্রুতিও রয়েছে। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যেরা জানান, মন্দির প্রতিষ্ঠার পরের বছরই ফাল্গুনের এক দুপুরে গ্রামে আগুন লাগে। দাউদাউ করে ঘরবাড়ি জ্বলে ওঠে। তাঁদের দাবি, গ্রামের বাসিন্দারা যখন অনেক চেষ্টায় আগুন নেভান, দেখা যায় আশপাশের ঘর পুড়ে গেলেও খড়ের চালার মন্দির অক্ষত রয়েছে। তার কয়েক বছর পরে অবশ্য মন্দিরের জন্য পাকা বাড়ি গড়ে তোলা হয়। জনশ্রুিত আর বিশ্বাসেই এই পুজো এখন গ্রামের সবার পুজো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy