Advertisement
E-Paper

বৃষ্টির ঘাটতি প্রায় ৫০ শতাংশ, চাষ পিছিয়েই

চলতি জুলাইয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ১৫৫ মিলিমিটার (গড় স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ ৩১৯.৩ মিলিমিটার)। সে অর্থে ঘাটতি ৫০ শতাংশেরও বেশি।

পুকুরের জলই ভরসা। পুরুলিয়ার চাকলতোড়ে।

পুকুরের জলই ভরসা। পুরুলিয়ার চাকলতোড়ে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৪ ১০:১৩
Share
Save

কখনও এক পশলা, কখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টি। এতে কোনওরকমে বীজতলা রক্ষা পেলেও জমিতে জল না জমায় ধান রোয়ার কাজ অনেক জায়গায় থমকে রয়েছে। গত বছরের মতো এ বারেও আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে চাষিরা সংশয়ে।

এ বার বিরূপ আবহাওয়ার জেরে খরিফ চাষের লক্ষ্যমাত্রা আগেই কমানো হয়েছে। বাঁকুড়া জেলায় প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে খরিফের চাষ হত। গত দু’বছর বৃষ্টির ঘাটতিতে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ বারও পরিস্থিতি প্রতিকূল। তাই লক্ষ্যমাত্রাও কমিয়ে আনা হয়েছে ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার হেক্টরে।

এ দিকে চলতি জুলাইয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ১৫৫ মিলিমিটার (গড় স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ ৩১৯.৩ মিলিমিটার)। সে অর্থে ঘাটতি ৫০ শতাংশেরও বেশি। তবে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে অল্প মাত্রায় ধান রোপণ শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, জেলায় এখনও পর্যন্ত ৯ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করা গিয়েছে। বীজতলা হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার ৩০৪ হেক্টর জমিতে। ছাতনার চাষি বসন্ত কর্মকার, বাঁকুড়া ২ ব্লকের চাষি নারায়ণ মণ্ডল বলেন, “দু’দিনের বৃষ্টিতে জমিতে কিছুটা কাদা জমেছে। ধার রোপণের কাজ শুরু করেছি। তবে আরও বৃষ্টি দরকার।”

বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বরূপা সেনগুপ্ত বলেন, “ধান বীজ বিলির কাজ প্রায় শেষের মুখে। বৃষ্টির অভাবে চাষিরা চিন্তায় পড়েছিলেন। তবে গত কয়েকদিনের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে আশা কিছুটা হলেও ফিরেছে। এ মাসের শেষের দিকে একটু ভাল বৃষ্টি হয়ে গেলেই চিন্তা কেটে যাবে।”

পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, চলতি বছরও ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে গত বছর বৃষ্টির অভাবে ২ লক্ষ ১,৯৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪১ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাষ হলে যেখানে প্রায় ১০ লক্ষ টন ধান উৎপন্ন হতে পারত, সেখানে ৬ লক্ষ টনের কিছু ধান হয়েছিল।

এ বার প্রাক্‌ বর্ষার (মার্চ থেকে মে) বৃষ্টিপাতে ঘাটতি না থাকলেও জুন থেকে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ঘাটতির পরিমাণ ৪০ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছে। জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, সোমবার পর্যন্ত গড় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪০৬.৯৭ মিলিমিটার হলেও এই সময়ের মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে ২৪০.৮৬ মিলিমিটার। ঘাটতির পরিমাণ ৪০.৮ শতাংশ।

মানবাজার থানার তুইড়াং গ্রামের চাষি নির্মল মাহাতোর আক্ষেপ, ‘‘গত বছর বৃষ্টির অভাবে ১৬ বিঘা জমির মধ্যে সাত বিঘায় চাষ করতে পেরেছিলাম। এ বার যতখানি জমিতে বীজ ফেলেছিলাম, তার অর্ধেক চারা বেরিয়েছে। পরে আরও বীজ কিনতে হয়েছে।’’ মানবাজার ২ ব্লকের আঁকরো গ্রামের গোপাল মাহাতোর অভিজ্ঞতা আরও খারাপ। তাঁর দাবি, গত বছর ১০ বিঘা জমির মধ্যে মাত্র এক বিঘাতে চাষ করেছিলেন। তাঁর নিজের নামে জমির রেকর্ড নেই বলে বিমার ক্ষতিপূরণও পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার ৩৫ কেজি বীজ কিনে ছড়িয়েছিলাম। বৃষ্টি প্রায় নেই। অর্ধেক বীজতলায় চারা বেরোয়নি। আরও ১৫ কেজি বীজ কিনে ফেলেছি। দেখি ভাগ্যে কী আছে?’’

জয়পুর ব্লকের কর্মাটাঁড়ের চাষি চক্রধর মাহাতো বলেন, ‘‘বিমার অর্থে চাষের খরচের কিছুটা হয়তো মেলে। কিন্তু ধান চাষ না হলে সারা বছর খাব কী?’’ পুরুলিয়ার জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা আদিত্য দুয়ারি বলেন, ‘‘১৪,৮০০ হেক্টর বীজতলার ৮০ শতাংশের বৃদ্ধি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে অবিলম্বে ভারী বৃষ্টি প্রয়োজন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

purulia agriculture

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}