Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সি়উড়িতে অস্ত্রোপচার

নাকে গেঁথে সেফটিপিন, বেরোল তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে

প্রায় তিন ঘণ্টার ওই অস্ত্রোপচার করেলেন সিউড়ি জেলা হাসপাতালের নাক-কান-গলার শল্য চিকিৎসক (ইএনটি সার্জন) শুভেন্দু ভট্টাচার্য। সঙ্গী ছিলেন অ্যানাস্থেটিস্ট দেবজ্যোতি চক্রবর্তী। 

অস্ত্রোপচারের পরে

অস্ত্রোপচারের পরে

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:১০
Share: Save:

নাকের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল খোলা সেফটিপিন। রক্ত ঝরছিল। যন্ত্রণায় ছটফট করছিল বছর দশেকের মেয়েটি। প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন বাবা-মা। সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যে জেলা হাসপাতালে এমন অস্ত্রোপচার করা যায় কিনা, এই নিয়ে যখন দ্বিমত দেখা দিয়েছে, তখন সকলকে স্বস্তি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে মেয়েটির নাক থেকে সেফটিপিন বের করে আনলেন চিকিৎসক।

শনিবার রাতে প্রায় তিন ঘণ্টার ওই অস্ত্রোপচার করেলেন সিউড়ি জেলা হাসপাতালের নাক-কান-গলার শল্য চিকিৎসক (ইএনটি সার্জন) শুভেন্দু ভট্টাচার্য। সঙ্গী ছিলেন অ্যানাস্থেটিস্ট দেবজ্যোতি চক্রবর্তী।

সিউড়ি হাসপতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও মৌমিতা লেট নামে ওই পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া এখন সুস্থ আছে। বিরল না হলেও এমন অস্ত্রোপচারে যে যথেষ্ট ঝুঁকি ছিল, সে কথা মানছেন হাসপাতাল সুপার শোভন দে। মেয়েকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ায় চিকিৎসকের প্রতি কৃতজ্ঞ মৌমিতার পরিবার।

মৌমিতাদের বাড়ি ময়ূরেশ্বর থানার গুমটার গ্রামে। শনিবার সকালে বাবা–মা উজ্জ্বল ও সীমা লেট কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকায় বাড়িতে একাই ছিল ছোট্ট মৌমিতা। পুতুল খেলছিল। পুতুলের জামা বদলানোর সময় জামায় লাগানো খোলা সেফটিপিনটি কোনও ভাবে মেয়েটির বাঁ নাকের ফুটোয় ঢুকে যায়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে সে। খবর পেয়ে বাড়িতে পৌঁছে বাবা-মা তাকে সাঁইথিয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সিউড়ি রেফার করে দেওয়া হয়। জেলা হাসপাতালে এক্স-রে করে দেখা যায়, নাকের শেষের দিকে আটকে গেঁথে রয়েছে সেফটিপিন। ঝুঁকি না নিয়ে মৌমিতাকে সিউড়ি থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু প্রান্তিক পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখে এবং মেয়েটির যন্ত্রণা দেখে অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নেন শল্য চিকিৎসক।

কেন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল অস্ত্রোপচার?

জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের একমাত্র ইএনটি সার্জন শুভেন্দুবাবু জানাচ্ছেন, এক্স-রে দেখা যায়, এমন ভাবে সেফটিপিনটি নাকের ভিতর গেঁথে ছিল ও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল যে, তাতে সামনের দিক থেকে সেটি বের করার কোনও সম্ভাবনা ছিল না। একমাত্র উপায় ছিল সেফটিপিনটি ঠেলে পিছনের দিক থেকে মুখ দিয়ে বের করা। তাতে অন্য ভয় ছিল। প্রথমত, আরও গেঁথে গিয়ে শ্বাসনালীতে রক্ত জমে সমস্যা তৈরি হওয়া। দ্বিতীয়ত, ঠেলতে গিয়ে যদি খাদ্যনালীর মধ্যে সেফটিপিনটি আটকে যায়, তা হলে আরও বিপদ। কৃত্রিম ভাবে শ্বাস চালু রাখার ব্যবস্থা ও খাদ্যনালী আটকানোর প্যাক ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।

শুভেন্দুবাবুর সংযোজন, ‘‘এই অস্ত্রোপচার এন্ডোস্কোপি করেই করতে হত। জেলা হাসপাতালে সেই উপকরণ ও মনিটর নেই। আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে এন্ডোস্কোপি করার উপকরণ থাকলেও মনিটর ছিল না। কিন্তু, সেটা এনেই অস্ত্রোপচার করা হয়। বাচ্চা মেয়েটিকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করেই এ কাজ করতে হয়েছে সেটাও ঝুঁকির।’’ সেই কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করেছেন অ্যানাস্থেটিস্ট দেবজ্যোতি চক্রবর্তী। মৌমিতার বাবা-মায়ের কথায়, ‘‘ভাগ্যি ডাক্তারবাবু ছিলেন। ওঁর জন্যই মেয়েটা আমাদের বাঁচল।’’

বীরভূমের স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা ও জেলা হাসপাতাল নিয়ে নানা অভিযোগ হয়তো বিভিন্ন সময় উঠে। কিন্তু, এটাও সমান ভাবে সত্যি, স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য জেলার বহু মানুষ এই হাসপাতালের উপরেই নির্ভরশীল। শনিবারের এই ঘটনার পরে হাসপাতালের প্রতি রোগীর আস্থা আরও বাড়ল।

অন্য বিষয়গুলি:

Operation Girl Safety Pin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE