প্রতীকী ছবি
জেলার মেয়াদ উত্তীর্ণ রামপুরহাট, সাঁইথিয়া পুরসভার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তারই পুরাবৃত্তি ঘটল বোলপুর এবং সিউড়ির ক্ষেত্রে। দুই পুরসভারই প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন বিদায়ী পুরপ্রধানেরা। তফাত একটাই। রামপুরহাট ও সাঁইথিয়া পুরসভায় দুই সদস্যের প্রশাসক বোর্ড হলেও আয়তনে বড় বোলপুর ও সিউড়িতে বোর্ডের সদস্য সংখ্যা তিন জন করে।
বোলপুরে বিদায়ী পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতকে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন করল রাজ্য সরকার। তিন সদস্যের বোর্ডে আরও দুই বিদায়ী কাউন্সিলর শেখ ওমর ও সুকান্ত হাজরা রয়েছেন। তৃণমূল পরিচালিত বোলপুর পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে সোমবার। এ দিনই প্রশাসক বোর্ড পুরসভার দায়িত্ব নেয়। সিউড়ি পুরসভার অবশ্য মেয়াদ ফুরোতে কয়েক দিন বাকি। তার আগেই, শনিবার রাজ্য পুর দফতর থেকে প্রশাসক-নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশিকায় তিন সদস্যের প্রশাসক বোর্ড গঠন করে চেয়ারপার্সন করা হয়েছে বিদায়ী পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে। এ ছাড়া, বোর্ডে আছেন বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান বিদ্যাসাগর সাউ এবং বিদায়ী কাউন্সিলর কাজী ফরজুদ্দিন। সিউড়ির প্রশাসক বোর্ডকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে বুধবার থেকে।
জেলার মোট ছ’টি পুরসভার মধ্যে নলহাটি বাদ দিয়ে রামপুরহাট, সাঁইথিয়া, বোলপুর, সিউড়ি, দুবরাজপুর— এই পাঁচটি পুরসভায় ভোট হওয়ার কথা ছিল মে মাসের মধ্যেই। দুবরাজপুর পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়ে ছিল ২০১৭ সালেই। প্রশাসক হিসেবে তখন থেকেই ওই পুরসভার দায়িত্বে রয়েছেন মহকুমাশাসক (সিউড়ি)। বাকি চার পুরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছিল চলতি মাসেই। জেলার শীর্ষ তৃণমূল নেতাদের কথায়, ‘‘যেহেতু ভোট করানো যাচ্ছে না, তার আগেই সরকারের নির্দেশে পুরপ্রধানদের মাথায় রেখে প্রশাসক বোর্ড গড়ে পুর-পরিষেবা সচল রাখার কাজ সম্পন্ন হল।’’
লকডাউন পরিস্থিতিতে পুরভোট করাতে না পারলেও এ ভাবে একের পর এক মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরসভার ক্ষেত্রে সরকারি আধিকারিকদের বদলে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের রেখে দেওয়া নিয়ে বিরোধীরা সরকারকে বিঁধতে ছাড়েনি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকার নীতিহীনতায় ভূগছে। যদি প্রশাসক হিসেবে সরকারি আধিকারিকদের রাখা হয়ে থাকে, তা হলে সব মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরসভার ক্ষেত্রেই সেটা হওয়া উচিত। আবার প্রশাসক বোর্ড থাকলে সব পুরসভার ক্ষেত্রেই ওই নীতি অনুসরণ করা উচিত।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কলকাতা কর্পোরেশন বা অন্যান্য পুরসভার ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত, সেটা শিলিগুড়ি ও নদিয়ার তাহেরপুর পুরসভার ক্ষেত্রে হয়নি। এটা রাজনৈতিক ফায়দা তোলার কৌশল ছাড়া কিছু নয়।’’ অন্য দিকে বোলপুরের বিদায়ী বিজেপি কাউন্সিলর বিকাশ মিশ্রের বক্তব্য, ‘‘মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে প্রশাসক পদে সরকারি আধিকারিক না বসলে মানুষের পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিরপক্ষেতা বজায় রাখা যায় না।’’
অভিযোগ না মেনে রাজ্য সরকার যথার্থ সিদ্ধান্তই নিয়েছে বলে দাবি করছেন জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে করোনা মোকাবিলা এবং ঘূর্ণিঝড় আমপানের পরে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তাতে এই মূহূর্তে মহকুমাশাসক থেকে অন্য আধিকারিকেরা নানা দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সেই সঙ্গে প্রশাসনিক কাজও দেখতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যাঁরা পুরসভার কাজ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল, তাঁদেরই প্রশাসক বোর্ডের মাথায় রেখে সরকার ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘যাঁরা আপত্তি তুলছেন তাঁদের মাথায় রাখা উচিত, গত পাঁচ বছর ওই বোর্ডে থেকেই পুর-পরিষেবা পেয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy