Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

১৫ দিন অন্তর মেয়ে নিয়ে হাজিরার নির্দেশ

জেলায় নাবালিকা বিয়ে আটকানোর ঘটনা বহু ঘটেছে। তবে, আইন ভেঙে বিয়ে দেওয়ার পরে কোনও নাবালিকার পরিবারের প্রতি এমন কঠোর অবস্থান ব্যতিক্রমী।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দয়াল সেনগুপ্ত 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৯
Share: Save:

লুকিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল পরিবার। কিন্তু, শেষ রক্ষা হল না। প্রশাসনের তৎপরতায় সেই নাবালিকা ফিরল তার নিজের বাড়িতেই। জেলা শিশু কল্যাণ কমিটি তার বাবাকে কড়া নির্দেশ দিল, আঠারোর নীচে মেয়েকে কোনও ভাবেই শ্বশুরবাড়ি বা স্বামীর কাছে পাঠানো যাবে না। রাখতে হবে বাড়িতেই। এর অন্যথা হলেই আইনানুগ ব্যবস্থা হবে।

জেলায় নাবালিকা বিয়ে আটকানোর ঘটনা বহু ঘটেছে। তবে, আইন ভেঙে বিয়ে দেওয়ার পরে কোনও নাবালিকার পরিবারের প্রতি এমন কঠোর অবস্থান ব্যতিক্রমী। নাবালিকার বাবাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে প্রতি ১৫ দিন অন্তর মেয়েকে নিয়ে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি বা সিডব্লিউসি বেঞ্চে হাজিরা দিতে হবে। ওই নাবালিকা বাপের বাড়িতে আদৌ রয়েছে কিনা, তা নজরে থাকবে ভিলেজ লেভেল শিশু সুরক্ষা কমিটি এবং চাইল্ড লাইনের সদস্যদের। সিডব্লিউসি-র চেয়ারপার্সন শাশ্বতী সাহার বক্তব্য, ‘‘১৮-র নীচে বিয়েকে বিয়ে বলে গণ্য করা যাবে না। ফলে, এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের যা করণীয় সেটাই করা হয়েছে।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, মহম্মদবাজারের হিংলো গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা একটি পরিবারে বাবা-মা জোর করে তাঁদের নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন, গত ২৩ নভেম্বর চাইল্ড লাইনের টোলফ্রি নম্বর ১০৯৮-এ এই মর্মে একটি ফোন আসে। বিষয়টি জানতে পারেন জেলাশাসকও। তৎপরতা শুরু হয়েছিল তার পরেই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রশাসন জানতে পারে, ওই এলাকার স্কুলছুট বছর ষোলোর এক নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হবে বক্রেশ্বর ধামে। সেই খবর পেতেই দুবরাজপুর থানার পুলিশ বক্রেশ্বরে নজরদারি চালায়। কিন্তু, তেমন কোনও বিয়ের খবর সেদিন (২৩ তারিখ) পায়নি পুলিশ।

যদিও খোঁজখবর নিয়ে চাইল্ড লাইন ও প্রশাসন জানতে পারে, বিয়ে পণ্ড হতে পারে আশঙ্কা করে নাবালিকার পরিবার বক্রেশ্বর এড়িয়ে দুবরাজপুরের গুণডোবা গ্রামে গিয়ে ওই মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। পর দিন, ২৪ তারিখ মহম্মদবাজার থানা নাবালিকার বাবাকে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে থানায় হাজিরা হওয়ার নির্দেশ দেয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, থানায় একা এসে নাবালিকার বাবা দাবি করেন, তাঁর মেয়ে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছে। পুলিশ জেরা করায় কয়েক ঘণ্টা পরেই অবশ্য মেয়েকে নিয়ে থানায় হাজির হন বাবা। তবে, পোশাক দেখে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে কিনা, সেটা পুলিশ বুঝতে পারেনি। ১৮ বছর হওয়ার আগে বেয়ে দেবেন না, এই মর্মে বাবার কাছ থেকে একটি মুচলেকা নিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু, এখানেই বিষয়টি থেমে থাকেনি। ২৪ তারিখ সিডব্লিউসি বেঞ্চ উঠে যাওয়ায়, বাবা ও মেয়েকে ২৫ তারিখ সেখানে হাজির করানো হয়।

সিউড়ি চাইল্ডলাইনের কর্মী শুচিস্মিতা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘আমাদের মনে হয়েছিল, কিছু লোকানো হচ্ছে। মেয়েটির ও তার পরিবারের কথাবর্তায় অসঙ্গতি ছিল। মেয়েটির চুলটা এমন ভাবে বাঁধা ছিল, যাতে সিঁদুর দেখা না যায়। কিন্তু চুল খুলিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, সত্যিই ওই নাবালিকার বিয়ে হয়েছে।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, সিঁদুর দেখার পরে মেয়েটির পরিবার নাবালিকা বিয়ের কথা মেনে নেয়। অন্যায় হয়েছে এ কথা মেনে নিয়েছে নাবালিকার পরিবার। সেই সময় মেয়েটির বাবা তো ছিলেনই, আত্মীয়ের বেশে ঘুরছিলেন শ্বশুরও। প্রশাসনের তরফে তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, এ পথে পা বাড়ালে হাজতবাস করতে হবে।

চাইল্ড লাইন সূত্রে বলা হচ্ছে, মহম্মদবাজারের এই ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। চলতি সপ্তাহে আরও দুই নাবালিকাকে তাদের ‘শ্বশুরবাড়ি’ থেকে উদ্ধার করে সিডব্লিউসি-র বেঞ্চের সামনে হাজিরার পরে নিজেদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘নাবালিকা বিয়ে হলেও, যাতে সেই মেয়ে ১৮-র নীচে শ্বশুরবাড়িতে না যায়, তার উপরে নজরদারি করা চলছে। সচেতন করা হচ্ছে মন্দিরের পুরোহিত এবং মৌলবীদের। তার পরেও কোনও পরিবার যদি আইন ভেঙে মেয়ের বিয়ে দেয়, তা হলে কঠোর পদক্ষেপই করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage Child Welfare Committee Suri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE