Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকের চরম সঙ্কট পুরুলিয়ায়। কেন এই পরিস্থিতি, কী ভাবছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর, প্রত্যন্ত এলাকায় চিকিৎসায় কী ভূমিকা নিচ্ছেন গ্রামীণ চিকিৎসকেরা— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।
purulia

Purulia: প্রয়োজন ২৯৪, আছেন মাত্র ৯৪

‘ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ স্ট্যান্ডার্ড’ অনুযায়ী ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিএমওএইচ-সহ অন্তত ন’জন চিকিৎসক থাকার কথা।

পরিষেবায় সমস্যার অভিযোগ ওঠে পুরুলিয়ার বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই।

পরিষেবায় সমস্যার অভিযোগ ওঠে পুরুলিয়ার বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই। নিজস্ব চিত্র।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২২ ০৭:৪৮
Share: Save:

থাকার কথা ২৯৪ জনের। পরিবর্তে আছেন মাত্র ৯৪ জন। পুরুলিয়ার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মহকুমা হাসপাতাল মিলিয়ে চিকিৎসকের এমন সার্বিক সঙ্কটে রোগীদের ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। বহু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের অভাবে রোগী দেখে ওষুধ দেন ফার্মাসিস্টেরা। কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নার্সেরা ওষুধ দিচ্ছেন— এমন ছবিও দেখা যায়। রাজ্যের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় সার্বিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন মহলের।

সম্প্রতি এই সমস্যার কথা জানিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে সমাধানের আর্জি জানিয়েছে সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম’। সংগঠনের পুরুলিয়ার সম্পাদক কালীসেন মুর্মুর কথায়, ‘‘চিকিৎসকের অভাবে জেলায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। দ্রুত পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা না করা হলে, পরিষেবা আরও বেহাল হয়ে পড়বে।’’

পুরুলিয়া জেলায় কুড়িটি ব্লকে রয়েছে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পঞ্চাশের বেশি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। চিকিৎসকদের ওই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সজল বিশ্বাসের দাবি, ‘ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ স্ট্যান্ডার্ড’ অনুযায়ী ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিএমওএইচ-সহ অন্তত ন’জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পুরুলিয়ায় আছেন গড়ে দু’-তিন জন চিকিৎসক। পরিস্থিতি কেমন, তার উদাহরণ হিসেবে তাঁরা সম্প্রতি রঘুনাথপুর ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা তুলে ধরেন। সেখানে একমাত্র মেডিক্যাল অফিসার বদলি হওয়ায়, টানা এক সপ্তাহ বহির্বিভাগ বন্ধ ছিল। সজলবাবু বলেন, ‘‘রাজ্যর অন্য জেলাতেও চিকিৎসকের ঘাটতি আছে। কিন্তু পুরুলিয়ায় তা মারাত্মক আকার নিয়েছে। চিকিৎসকের অভাবে বেশ কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।’’ সংগঠনের দাবি, প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিৎসক মেলে না।

সজলবাবুর মতে, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার তিনটি ধাপ। গোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরের ধাপে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও শেষ ধাপে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজ। প্রথম ধাপেই পরিষেবা বিঘ্নিত হলে, স্বাস্থ্য পরিষেবার শৃঙ্খলই ভেঙে পড়ে। যা ইতিমধ্যে পুরুলিয়ায় ঘটছে বলে তাঁর দাবি। ওই সংগঠনের দাবি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা না পেয়ে গ্রামের মানুষজন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। সেখানে বহির্বিভাগে দিনে গড়ে শ’দুয়েক রোগীর দেখেন চিকিৎসকেরা। ইন্ডোরে ভর্তি রোগীর চাপ সামলে এত রোগী দেখতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার মান খারাপ হয়ে পড়ে। সজলবাবু বলেন, ‘‘প্রায় সব ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই দিনে শতাধিক রোগী দেখতে বাধ্য হন দুই বা তিন জন চিকিৎসক। ফলে, রোগের ঠিকঠাক চিহ্নিতকরণের কাজ ব্যাহত হয়।’’

এই জেলায় ডাক্তারের এত ঘাটতি কেন? চিকিৎসকদের একাংশের মতে, রাজ্যের অন্যত্র নানা মেডিক্যাল কলেজ থেকে উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের বড় অংশই প্রান্তিক এই জেলায় আসতে চান না। চাকরি পেয়ে এলেও কয়েক মাসে বদলি নিয়ে নিজের জেলা বা পড়শি জেলায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। ‘সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম’-এর সদস্যদের অনেকের দাবি, পুরুলিয়ায় চিকিৎসত-ঘাটতির অন্যতম কারণ, বদলির ক্ষেত্রে ভ্রান্ত নীতি। অন্য জেলা থেকে পুরুলিয়ায় চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু দেখা যায়, তাঁদের দীর্ঘ সময় এই জেলাতেই রেখে দেওয়া হচ্ছে। সজলবাবুর দাবি, ‘‘যদি বদলির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় বাঁধা থাকত, তাহলে এই সমস্যা তৈরি হত না।’’

ডাক্তারদের একটি অংশের আবার দাবি, চাকরির শর্ত অনুযায়ী, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তারদের আবাসনে থাকতে হয়। কিন্তু বহু ব্লক বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসন বেহাল। বহু আবাসনে বর্ষায় ছাদ থেকে জল পড়ে। গরমে জলের সঙ্কট তৈরি হয়। তাই অন্য জেলা থেকে আসা চিকিৎসকদের অনেকেই বেশি দিন থাকতে চান না। চিকিৎসক সংগঠনের কর্তা কালীসেন মুর্মুর কথায়, ‘‘বহির্বিভাগে সাধ্যর বাইরে রোগী দেখা, ইন্ডোরে ভর্তি রোগীদের চাপ সামলে চিকিৎসকদের উপযুক্ত বিশ্রাম খুব প্রয়োজন। কিন্তু বেহাল আবাসনে সে সুযোগ মেলে না।’’

পুরুলিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কুণালকান্তি দে বলেন, ‘‘প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসকের ঘাটতি আছেই। তার উপরে, অনেকে উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটি নিচ্ছেন। কেউ চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সমস্যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের তহবিলে চিকিৎসকদের আবাসনের পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া।

অন্য বিষয়গুলি:

purulia Health center
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy