Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Purulia

৪৭ হাজার বাড়ি শৌচাগারহীন

বারবার প্রকল্পের নাম বদলেছে। কিন্তু এখনও জেলার বহু বাসিন্দা শৌচকর্ম সারতে মাঠেঘাটে যান। কেন এই অবস্থা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।বারবার প্রকল্পের নাম বদলেছে। কিন্তু এখনও জেলার বহু বাসিন্দা শৌচকর্ম সারতে মাঠেঘাটে যান। কেন এই অবস্থা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

শৌচাগার থাকলেও দরজা ভেঙে যাওয়ায় ব্যবহার করা হয় না। বান্দোয়ানের বুড়িঝোরে। নিজস্ব চিত্র

শৌচাগার থাকলেও দরজা ভেঙে যাওয়ায় ব্যবহার করা হয় না। বান্দোয়ানের বুড়িঝোরে। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল 
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০১:১৭
Share: Save:

করোনা-পরিস্থিতিতে ‘হোম কোয়রান্টিন’ করতে গিয়ে ফের বহু বাড়িতে শৌচাগার না থাকার বিষয়টি সামনে এসে পড়েছে। সে জন্য পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন বিভিন্ন ব্লকে থমকে থাকা ‘মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্প’-এর কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে। সম্প্রতি এক প্রশাসনিক বৈঠকে চলতি জুন মাসের মধ্যেই প্রতিটি ব্লককে শৌচাগার তৈরির বকেয়া কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (‌জেলা পরিষদ) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর।

জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় কমবেশি ৪৭ হাজার পরিবারে এখনও শৌচাগার নেই।’’ সেই প্রেক্ষিতে আকাঙ্ক্ষাদেবী বলেন, ‘‘করোনা-পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে সংক্রমণের খবর আসছে। আক্রান্তদের বা তাঁদের বাড়ির লোকজনকে বাইরে বেরোনো বন্ধ করা প্রয়োজন। তাঁদের কথা মাথায় রেখে বাড়ি-বাড়ি শৌচাগার করা দরকার।’’

লকডাউনের গোড়ার দিকে বাইরে থেকে ফেরা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে প্রথমে তাঁদের ‘হোম কোয়রান্টিন-এ থাকতে বলা হচ্ছিল। তখনই প্রশ্ন ওঠে, তাঁদের বাড়ির শৌচাগার ব্যবহার কতটা স্বাস্থ্যসম্মত হবে। কারণ, করোনা-আক্রান্তদের আলাদা শৌচাগার ব্যবহার করতে বলেছে সরকার। সে ক্ষেত্রে পরিযায়ীদের মধ্যে কে করোনা আক্রান্ত, কে সুস্থ, তা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে আসার আগে পর্যন্ত জানার উপায় নেই।

সে সময় নিচুতলার স্বাস্থ্যকর্মীদের থেকেও প্রশাসনের কাছে খবর আসে, পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেরই বাড়িতে শৌচাগার না থাকায়, তাঁরা মাঠে-ঘাটে যাচ্ছেন। যেখানে গ্রামের অনেকেই শৌচকর্ম করতে যান। ফলে, সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। পরিযায়ীদের বাড়ির বদলে প্রাতিষ্ঠানিক ‘কোয়রান্টিন’-এ রাখার দাবিতে পুঞ্চার নপাড়া মোড় অবরোধও করেন বাসিন্দারা।

এর পরেই প্রশাসন জেলায় জেলায় নির্দেশ পাঠায়, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু— এই পাঁচ রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিক পরিযায়ীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ‘কোয়রান্টিন’-এ রাখতে হবে। পরে আক্রান্তদের জন্য চালু হয় ‘সেফ হোম’। এ ভাবে করোনা আক্রান্তদের শৌচাগারের সমস্যা মেটানো গেলেও, জেলায় বহু বাড়ি যে এখনও শৌচাগারহীন রয়ে গিয়েছে, সেই বিষয়টি ফের সামনে এসেছে। তার পরেই প্রশাসন নতুন করে ওই প্রকল্পে গতি আনতে তৎপর হয়েছে।

পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘করোনা-পরিস্থিতিতে বাড়ি-বাড়ি শৌচাগার থাকাটা খুবই প্রয়োজন। তাই বর্তমান পরিস্থিতিই হচ্ছে এই প্রকল্পের লক্ষ্যপূরণের আদর্শ সময়। বকেয়া কাজ সম্পূর্ণ করতে এই সময়টাকেই কাজে লাগাতে হবে।’’

কিন্তু সব বাড়িতে শৌচাগার নেই কেন? এ প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তথা অধ্যক্ষ বিজেপির অজিত বাউড়ির কটাক্ষ, ‘‘কেন্দ্র সরকার উন্নয়নের জন্য টাকা পাঠাচ্ছে। আর রাজ্য সরকার খালি প্রকল্পের নাম পাল্টাচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই করছে না।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূলের জেলা বরিষ্ঠ সহ-সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি সস্তা রাজনীতির জন্য মন্তব্য করছে। ‘মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্প’-এর কাজ পিছিয়ে গিয়েছে ‘লডডাউন’-এর জন্য। গতি আনতে সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে জেলায় ‘সার্বিক স্বাস্থ্য বিধান’ প্রকল্প নামে বাড়ি-বাড়ি শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। তার পরে ‘নির্মল ভারত অভিযান’ ও বর্তমানে ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্প চলছে।

২০১২ সালে জেলায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তার আগে জেলা জুড়ে একটি সমীক্ষা করা হয়। তাতে উঠে আসে পুরুলিয়া জেলার পাঁচ লক্ষ ৩১ হাজার ৭৮২টি পরিবারের মধ্যে ৯৮,২১৭টি পরিবারে শৌচাগার রয়েছে। বাকি চার লক্ষ ৩৩ হাজার ৫৬৫টি পরিবারে শৌচাগার গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জেলায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

কিছু ব্লক সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারলেও, বেশ কিছু ব্লক তা থেকে দূরেই থমকে যায়। কেন এই অবস্থা?

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia Toilet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy