সবার মাঝে: সিবিআই নোটিস পাঠানোর পরে সোনামুখীর রোড-শোতে অভিষেক। ছবি: শুভ্র মিত্র
প্রখর রোদের মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। সোনামুখীতে পৌঁছে তাঁরাই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পড়লেন। তার উপরে যাঁকে দেখতে আসা, সিবিআইয়ের তলব পেয়ে সেই তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নবজোয়ার কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়ে কলকাতা ফিরে যাচ্ছেন শুনে মুষড়ে পড়েছিলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। তবে তাঁদের হতাশ করেননি অভিষেক। সোনামুখীতে নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক পরে পৌঁছলেও অভিষেক রোড-শো করলেন। কর্মীদের মনোবল যাতে ভেঙে না পরে সে জন্য তলবের পাল্টা ঝাঁঝালো বক্তৃতাও দিলেন। কর্মীদের বললেন, ‘‘যা করার এরা করুক। আমার জন্য কাউকে রাস্তায় নামতে হবে না। বুক ঠুকে বলে যাচ্ছি, আমার লড়াই আমি নিজে লড়ে নেব।’’
এ দিন দুপুরে সিবিআইয়ের নোটিস পাওয়ার পরে বাঁকুড়ার বলরামপুরের অধিবেশনের শিবির থেকে বেরোনোর সময় অভিষেককে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত মনে হয়েছিল। তবে বৃষ্টির মধ্যেও বেলিয়াতোড়ে তাঁর অপেক্ষায় ছিলেন লোকজন। সোনামুখীতেও ভিড় ছিল। তা দেখে বৃষ্টি থামতেই তিনি সোনামুখীর দেওয়ানবাজারে গাড়ির ছাদে উঠে পড়েন। রোড-শো করে সোনামুখীর চৌমাথায় গিয়ে মাইক্রোফোন হাতে বক্তৃতা শুরু করেন। তখন তাঁকে অনেকটাই উজ্জীবিত দেখাচ্ছিল।
২০১৬ সালের এই দিনেই দ্বিতীয়বারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন জানিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘সহকর্মীরা বলছিলেন, এত জোরে বৃষ্টি হচ্ছে, সবাই ভিজে গিয়েছেন, সভা হবে না। আমি বলেছিলাম, কথা যখন দিয়েছি, আমি সবার সঙ্গে অন্তত দেখা করতে যাব।’’ তিনি দাবি করেন, কর্মীদের এই ভিড়ের ছবি দেখে বিজেপির রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।
সিবিআই-এর তলব করা নিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘অন্তত দু’টো দিন যদি সময় দিত তাহলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোকে ফিরে যেতে হত না। আইনজীবীরা বলেছিলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট কর্মসূচিতে বেরিয়েছেন। মানুষের স্বার্থের উপরে কিছু না। আপনি যাবেন না। আপনি মানুষের জন্য কাজ করুন।’ আমি বললাম, আমি যাব। কারণ তারা চায় এই নবজোয়ার যাত্রা থমকে যাক। বাঁকুড়াবাসীকে কথা দিয়ে যাচ্ছি, এ দিন কলকাতায় ফিরছি। শনিবার সিবিআইয়ের মুখোমুখি হব। সোমবার এই বাঁকুড়ার মাটি থেকে আমি দশ গুণ উৎসাহ নিয়ে নবজোয়ার কর্মসূচি শুরু করব। যদি কারও ক্ষমতা থাকে, আটকে দেখাক।’’
তবে গত নির্বাচনগুলিতে বাঁকুড়ার দলের ভোট কমা নিয়ে তাঁর আক্ষেপের কথা এ দিনও তুলেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা নিজেদের অধিকারকে সামনে রেখে লড়াই করেননি। আপনারা ধর্ম আর রামমন্দিরকে দেখে ভোট দিয়েছিলেন। আজকে দেশের চারপাশে ধর্মের ঝনঝনানি হচ্ছে, কিন্তু আপনার আবাসের টাকা বন্ধ, ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু আমাদের হারানো জায়গায় বিরোধীরাও দাবি করতে পারবেন না তাঁদের কেউ লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছেন না।’’ জনতাকে তিনি কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে, নিজেদের অধিকারকে সামনে রেখে লড়াই করার ডাক দেন।
পাত্রসায়রে সভায় যেতে না পারার জন্য তিনি বলেন, ‘‘সেখানে প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন। আমি নেত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। তিনি বললেন, চিন্তা করিস না। আমি ভার্চুয়ালি বলব। অভিষেককে আটকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নামিয়ে দিলে! ভালই হল।’’
বিষ্ণুপুরে অভিষেকের এ দিন রাতে অধিবেশন করার কথা ছিল। সেখানেও বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছিলেন। তবে কর্মসূচি স্থগিত করার খবর পেয়ে তাঁরা বাড়ির পথ ধরেন। বিকেলে তাঁবুর সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন পঞ্চায়েত প্রধান, অঞ্চল সভাপতি ও কর্মাধ্যক্ষেরা অধিবেশন পিছিয়ে যাওয়ায় হতাশার কথা জানান।
কেউ কেউ বলেন, ‘‘অভিষেককে কিছু কথা বলার ছিল। তিনি আবার যখন আসব, তখন বলব।’’ দলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নবজোয়ার কর্মসূচি ফের শুরু হবে। অভিষেক সোমবার আসবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা সবাই তাঁর অপেক্ষায় রয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy