বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। খয়রাশোলে বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
আধার কার্ড নিয়ে গিয়ে আঙুলের ছাপ না-মেলালে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি মিলবে না শুনেই মঙ্গলবার স্থানীয় রান্নার গ্যাসের ডিলারের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন রাজনগরের হাসিনা বিবি। একই উদ্বেগ নিয়ে তিন কিলোমিটার ছুটে পুরন্দরপুরের গ্যাস ডিলারের কাছে গিয়েছিলেন সিউড়ি ২ ব্লকের বৃদ্ধা গয়াদাসী সাহা। তিনি উজ্জ্বলা যোজনায় সংযোগ পেয়েছেন। গয়াদাসীর সমস্যা মিটলেও কপালে ভাঁজ হাসিনার। কারণ, আঙুলের ছাপ মেলেনি তাঁর।
বুধবার বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে রান্নার গ্যাসের ডিলারের কাছে যান খয়রাশোলের নাকড়াকোন্দার অশীতিপর হারাধন ঘোষ। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে শেষ পর্যন্ত কাজ হয়েছে। বৃদ্ধ বলছেন, ‘‘এই বয়সে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়েছে। তবু আসতেই হল।’’
এই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা জেলার হাজার হাজার গ্রাহকের। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে উজ্জ্বলা যোজনা-সহ ভর্তুকিযোগ্য রান্নার গ্যাসের (এলপিজি) সব গ্রাহকের আধার যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে তাঁদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এত কম সময়ে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের তথ্য যাচাই সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয়ে গ্রাহক ও ডিলার, দুই পক্ষই। গ্রাহকগের মূল আশঙ্কা, দুর্ভোগের। ফের সেই লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতীক্ষা, বিভ্রান্তির শিকার হতে হবে হয়তো।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, গ্রাহকেরা সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে বায়োমেট্রিক দিয়ে আসতে পারেন অথবা সিলিন্ডার বাহকেরা (ডেলিভারি ম্যান) গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বায়োমেট্রিক করাবেন। সে জন্য আঙুলের ছাপ দিতে হবে। সেটা না মিললে মুখের ছবি নেওয়ার উপায় থাকছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে। তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অধীনে থাকা রান্নার গ্যাসের ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখনও সকলের কাছে নির্দেশিকা স্পষ্ট নয়। কী ভাবে কাজ তোলা যাবে, তা নিয়েও তাঁরা চিন্তায়। তার উপরে জেলায় সব মিলিয়ে অন্তত ৮ লক্ষ গ্রাহকের (উজ্জ্বলা গ্রাহকই ছয় লক্ষের বেশি) আধার যাচাই ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ এত কম সময়ে কী ভাবে সম্ভব, বুঝতে পারছেন না ডিলারেরা।
সিউড়ি ২ ব্লকের এলপিজি ডিলার অমিত সাহা বলছেন, ‘‘সমস্যায় তো পড়তেই হবে। কারণ, সকলে এখানে আসতে পারবেন না। সিলিন্ডার বাহকদের গ্রাহকের বাড়িতে পাঠিয়ে করতে হবে।’’ সেটাও খুব সহজ নয়। অমিত জানালেন, এক জন বাহক হাজারেরও বেশি পরিবারে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করেন। তাঁদের কাছে সেই মানের স্মার্টফোন থাকে না। তার সঙ্গে বায়োমেট্রিক ডিভাইস লাগাতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকায় সমস্যা হবে ইন্টারনেট সংযোগ পেতেও।
লাভপুরের এলপিজি ডিলার সুশান্ত চৌধুরীর অধীনে রয়েছেন ৪০ হাজার গ্রাহক। তাঁর কথায়, ‘‘তেল সংস্থার আধিকারিরকেরা যা বলেছেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বায়োমেট্রিক না-হলে ভর্তুকি বন্ধ হবে। স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগ রয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে। আমরা কাজ শুরু করেছি। কিন্তু, গ্রাহকদের মধ্যে অনেকেই প্রবীণ। বাড়িও গ্যাস অফিস থেকে ১৫-২০ কিমি দূরে। তাঁদের অসুবিধা হবে।’’ সুশান্তর সংযোজন, কিছু কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট আছে। যাঁরা সেখানে যেতে পারবেন না, ডেলিভারি ম্যান তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে যাবে, আপাতত এটাই ঠিক হয়েছে।
২০ হাজার গ্রাহক রয়েছে রাজনগরের গ্যাস ডিলার লাল্টু গড়াইয়ের। তিনি জানিয়েছেন, শিবির করার ভাবনা রয়েছে। তবে, গ্রাহকদের অনেককেই লাইনে দাঁড়াতে হবে, এতে তাঁর বিশেষ সন্দেহ নেই। সদাইপুর থানা এলাকায় সঞ্জু দাসের অধীনেও প্রায় সমসংখ্যক গ্রাহক। তিনি বলেন, ‘‘এক জন গ্রাহক ভর্তুকি পান কম বেশি ৩০ টাকা। আর উজ্জ্বলা গ্রাহক প্রায় ৩৩০ টাকা ভর্তুকি পান। এই টাকা চলে যাবে শুনে উদ্বেগ বাড়বেই। ফলে, বাড়বে ভিড়ও।’’
এ দিন খয়রাশোলের গ্যাস ডিলারের কাছে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন প্রতিমা মেটে, কল্পনা ধীবর-সহ বেশ কয়েক জন মহিলা। তাঁরা উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাসের সংযোগ পেয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘খেটে খাই। এতগুলো টাকা চলে যাবে শুনে এসেছি কাজ কামাই করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy