ইলামবাজারের শীর্ষা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
মাঠ কবে হয়েছে, আয়তন কত, কর্মদিবস কত তৈরি হয়েছিল, কাজের ফলক কী নতুন বসানো? এমন গুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে ইলামবাজারের শীর্ষা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১০০ দিনের কাজে তৈরি অজয় নদ ঘেঁষা শুকডালা আদিবাসী পাড়ার ফুটবল মাঠ পরিদর্শন করল কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল।
বৃহস্পতিবার সকালের আকাশ তখন কালো মেঘে ছেয়ে। তার মধ্যেই শীর্ষা পঞ্চায়েতের অজয় নদ ঘেঁষা শুকডালা আদিবাসী পাড়ার ফুটবল মাঠে পৌঁছন কেন্দ্রীয় দলের সদস্য, (বিডিও) ইলামবাজার, গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী এবং আধিকারিকরা। কাজ দেখতে দেখতেই নানা প্রশ্ন করছিলেন পর্যবেক্ষক দলের নেতৃত্বে থাকা উপসচিব পদমর্যাদার এইচ আর মিনা। যথাসাধ্য উত্তর দিচ্ছিলেন পঞ্চায়েতের কর্মী, আধিকারিকরা। তবে পঞ্চায়েতের তরফে মেনে নেওয়া হয়, বন্যায় ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে তৈরি হওয়া কাজের ফলক নষ্ট হওয়ায় নতুন করে বসানো হয়েছে। ফলক নিয়ে ‘কিন্তু’ থাকলেও কাজের মান সন্তুষ্ট দেখায় এইচ আর মিনাকে। তবে জানতে চান, মাঠের চারদিকে গাছ লাগানো হচ্ছে না কেন।
শুধু ওই মাঠ নয়। একশো দিনের কাজ, সরকারি আবাস যোজনা ও সড়ক যোজনার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পের একগুচ্ছ কাজ দেখে খুশি হয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ছাড়ার আগে গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক জ্যোতিরিন্দ্রনাথ চৌধুরীর পিঠ চাপড়ে কেন্দ্রীয় দলের আধিকারিকরা বলে গিয়েছেন, ‘গুড জব’। প্রশংসা পেয়ে পঞ্চায়েত তো বটেই, হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন ব্লক ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার সন্তু তরফদারের কথায়, ‘‘আমি ওই পঞ্চায়েতেই উপস্থিত ছিলাম। শুনলাম ওঁরা প্রকল্প রূপায়ণে খুশি হয়েছেন। লাভপুরের দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজেও সন্তোষ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় দল।’’
হিসেব জমায় গড়িমসির অভিযোগে চলতি অর্থবর্ষে ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ গত আট মাস। নাম বদলের অভিযোগ ছিল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার ক্ষেত্রেও। অভিযোগ, ‘প্রধানমন্ত্রী’ বাদ দিয়ে সেখানে ‘বাংলা’ যোগ করা হয়েছিল। এই প্রেক্ষিতে প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে গত ২৫ তারিখ সোমবার তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল জেলায় পৌঁছয়। তখন দুঃশ্চিন্তায় ছিল জেলা, ব্লক ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি। আবাস যোজনা ও গ্রাম সড়ক যোজনার ফলক থেকে রাতারাতি ‘বাংলা’ মুছে ‘প্রধানমন্ত্রী’ করা হলেও ১০০ দিনের কাজ নিয়ে উদ্বেগ ছিল। কেননা প্রতিনিধি দলের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী বরাদ্দ পাওয়া নির্ভর করছিল।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইলামবাজার ও লাভপুর ব্লকের কোন দুই তিনটি পঞ্চায়েতে কী কাজ দেখবেন জেলায় এসে সেটা জনিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় দল। ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পে হওয়া নানা কাজ দেখবেন বলেও জানান। মঙ্গল ও বুধ লাভপুর ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামে কাজ খতিয়ে দেখার পরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ইলামবাজারের শীর্ষা গ্রাম পঞ্চায়েতে পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা। তার পরে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন কাজ খতিয়ে দেখতে শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তারাপুর-রসিকচক রাস্তা, খরুই বন নবগ্রামে বৃক্ষরোপণ, শুকডালা আদিবাসী পাড়ার ফুটবল মাঠে সহ ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে হওয়া আরও দুটি ভূমি সংস্কারের কাজ এবং আবাস যোজনার কাজ খতিয়ে দেখেন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা। শীর্ষা পঞ্চায়েত ছাড়ার আগে জয়দেব কেঁদুলির টেরাকোটা সমৃদ্ধ রাধাবিনোদ মন্দিরেও ঘুরে যান কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা। দুপুর একটা নাগাদ ইলামবাজারের নানাশোল গ্রাম পঞ্চায়েত যাওয়ার ছিল। কিন্তু, বৃষ্টির জন্য সেখানে যাননি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এমন অগ্রগতি স্বস্তিতে রাখছে প্রশাসনকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy