মল্লারপুরে খুনে ধৃত সুকুমার দাই। নিজস্ব চিত্র।
প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক ও সেই সংক্রান্ত অশান্তির জেরেই মল্লারপুরে পড়শি মহিলাকে খুন করা হয়েছে বলে জানাল পুলিশ। ধৃত বিজেপি কর্মী সুকুমার দাই খুনের কথা স্বীকার করেছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। খুন করে গ্রামে ফিরে সে একেবারে স্বাভাবিক ছন্দে চাষের কাজেও গিয়েছিল বলে জেনেছে পুলিশ। রবিবার গ্রাম থেকে সাত কিলোমিটার দূরে একটি ইটভাটা থেকে উদ্ধার হয় মল্লারপুরের দক্ষিণগ্রামের বাসিন্দা কল্যাণী ধীবরের দেহ। মৃত মহিলাকে নিজেদের সমর্থক বলে দাবি করে রবিবার বিক্ষোভও দেখায় তৃণমূল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালেই পুলিশ সুকুমার দাইকে গ্রাম থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। রাতে তাকে গ্রেফতার করে প্রতিবেশী মহিলাকে খুন ও প্রমাণ লোপের চেষ্টার মামলা রুজু করে পুলিশ। সোমবার দশ দিনের পুলিশ হেফাজত চেয়ে সুকুমার দাইকে রামপুরহাট আদালতে হাজির করানো হয়। আদালত আট দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। রামপুরহাটের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক গোবিন্দ শিকদার বলেন, ‘‘দক্ষিণগ্রামে মহিলা খুনের ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না পুলিশ তার তদন্ত চালাচ্ছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পেশায় চাষি বছর চল্লিশের সুকুমারের সঙ্গে প্রতিবেশী কল্যাণীর দীর্ঘদিন সম্পর্ক ছিল। গ্রামবাসীর দাবি, সেই সম্পর্কের কথা গ্রামেরই অনেকেই জানতেন। কল্যাণীর স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন এবং তেমন কোনও কাজকর্ম করতে পারেন না। দিনমজুরি করে কল্যাণী সংসার চালাতেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কল্যাণী ঋণের জন্য গ্রামেরই এক বাসিন্দার কাছে নথি জমা দিয়েছিলেন। সেই কাজে ওই ব্যক্তির বাড়িতে কল্যাণী যাতায়াতও করতেন। সুকুমার তা নিয়েই আপত্তি জানায় ও কল্যাণীকে সন্দেহ করতে থাকে বলে পুলিশ সূত্রে দাবি।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, কল্যাণীর সঙ্গে অন্য পুরুষের সম্পর্ককে মেনে নিতে না পেরে সুকুমার দিন কয়েক ধরেই তাঁকে খুন করার পরিকল্পনা করে। পুলিশ সূত্রে দাবি, ধৃতকে জেরায় জানা গিয়েছে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছটা নাগাদ কল্যাণীকে বাড়ি থেকে ডেকে মোটরবাইকে গ্রাম থেকে সাত কিলোমিটার দূরে খরাসিনপুরের মাঠে একটি পরিত্যক্ত ইটভাটার কাছে নিয়ে যায় সুকুমার। সেখানেই কল্যাণীর শাড়ির আঁচল ছিঁড়্রে গলায় জড়িয়ে সুকুমার তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, খুনের পর সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ সুকুমার গ্রামে ফিরে আসে। নিজেই গ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে ফোনে কল্যাণীর দাদাকে বোনের খোঁজ করতে বলেন। সকালে মাঠের কাজেও বেরিয়ে যায় সুকুমার। রবিবার সকালে কল্যাণীর মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানাজানি হয়। তখনও সুকুমার মাঠের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পরে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলে কল্যাণীর নাবালিকা মেয়ে তাদের বাড়িতে সুকুমারের অবাধ যাতায়াতের কথা পুলিশকে জানায়। এর পরেই পুলিশ সুকুমারকে আটক করে।
কল্যাণীকে নিজেদের সমর্থক দাবি করে রবিবারই অবরোধে নেমেছিল তৃণমূল। সেই কাণ্ডে বিজেপি কর্মী সুকুমার দাই গ্রেফতার হওয়ার পরে সুর আরও চড়িয়েছে রাজ্যের শাসক দল। ময়ূরেশ্বর বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ রায় বলেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই ঘটনার প্রকৃত দোষীকে গ্রেফতারের দাবি-সহ উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছি। পুলিশ সঠিক তদন্ত চালিয়ে আসল দোষীকেই গ্রেফতার করেছে।’’ বিজেপির ময়ূরেশ্বর বিধানসভার আহ্বায়ক সুবীর রায় বলেন, ‘‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।’’ এ দিন ঘটনার প্রতিবাদে মল্লারপুর থানায় বিক্ষোভ দেখায় সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি ও সিপিএমের ময়ূরেশ্বর ১ এরিয়া কমিটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy