Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

হ্যাম রেডিয়োয় সন্ধান পরিবারের 

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১১ জানুয়ারি ওই ব্যক্তিকে কে বা কারা তারাপীঠ থেকে ভর্তি করে চলে যায়।

 মোবাইলে ছেলের সঙ্গে কথা বলছেন পলাশ পোড়েল। নিজস্ব ছবি

মোবাইলে ছেলের সঙ্গে কথা বলছেন পলাশ পোড়েল। নিজস্ব ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৫৩
Share: Save:

হ্যাম রেডিয়োর সাহায্যে মানসিক সমস্যা থাকা এক ব্যক্তি বছর দেড়েক পরে পরিবারের সন্ধান পেলেন। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ব্যক্তিকে হাওড়ার আমতা থানা এলাকায়, নিজের বাড়িতে ফেরানোর জন্য সোমবার বিকেলে হাসপাতালে আসেন ওই ব্যক্তির জামাই-সহ দু’জন। পরিজনদের পরিচয় এবং ঠিকানা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল সুপার কাম ভাইস প্রিন্সিপাল (এমএসভিপি) সুজয় মিস্ত্রি এ দিন বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি যেহেতু মানসিক ভারসাম্যহীন, তাই তাঁর আত্মীয়-পরিজনেদের ঠিক ঠিকানা ও পরিচয় খতিয়ে দেখার জন্য রামপুরহাট থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১১ জানুয়ারি ওই ব্যক্তিকে কে বা কারা তারাপীঠ থেকে ভর্তি করে চলে যায়। তাঁর গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসার সময় তাঁর অসংলগ্ন আচরণে বোঝা যায়, তাঁর মানসিক সমস্যা রয়েছে। সেই রোগেরও চিকিৎসা শুরু হয়। রোগীর নজরদারির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দু’জন নিরাপত্তা রক্ষীকে বিশেষ ভাবে নিয়োগ করা হয়। তবে, ওই রোগীকে কত দিন রাখা যাবে, কোথায় তাঁর বাড়ি—এ সব নিয়ে চিন্তায় ছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, ওই ব্যক্তির নাম পলাশ পোড়েল। বাড়ি আমতা থানার ছোট মহুরা গ্রামে। বাড়িতে ওই ব্যক্তির স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক ছেলে আছেন বলেও জানা যায়।

পলাশ ঠিকঠাক ঠিকানা বলছেন কিনা, সেটা খতিয়ে দেখতে হাসপাতালের তরফে রামপুরহাটের মহকুমাশাসক, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অম্বরীশবাবু এ দিন বলেন, ‘‘এর আগেও রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চার জন রোগীর নাম, পরিচয়, ঠিকানা সন্ধান করে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ১৪ জানুয়ারি হাসপাতাল আর এক জন মানসিক রোগীর ছবি পাঠিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমরা রেডিয়ো ক্লাবের তরফ থেকে ইকো লিঙ্কের মাধ্যমে যুবকটির ছবি সব হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরের কাছে পাঠিয়ে দিই।’’ সেই সূত্রেই পলাশের ঠিকানা এবং পরিচয় পেয়ে অম্বরীশবাবুরা যোগাযোগ করেন হাসপাতালের সঙ্গে।

হ্যাম রেডিয়োর তরফ থেকে আমতার ওই গ্রামে যাওয়া হয়। সেখানেই পলাশের ছবি দেখে অনেকে চিনতে পারেন। পলাশের ছেলে, বছর বাইশের রাকেশ পোড়েল গুরুগ্রামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাঁকেও ছবি পাঠানো হয়। রাকেশ জানান, মা ও বোন তাঁর কাছে থাকেন। দিদির বিয়ে হওয়ার পরে ডোমজুড়ে থাকেন। রাকেশের কথায়, ‘‘বাবা দেড় বছর আগে বাইরে কাজ করতে যাচ্ছেন বলে বেরিয়ে গিয়েছিল। তার পর থেকেই আর কোনও যোগাযোগ ছিল না। বাবা ফিরে আসবে এই আশায় আমরা পুলিশে কোথাও নিখোঁজ ডায়েরি করিনি। দেড় বছর পরে বাবার ছবি দেখেই চিনতে পারি। রামপুরহাট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু আমি দিল্লিতে থাকায় যেতে পারিনি। জামাইবাবুকে রামপুরহাটে পাঠাই।’’

পলাশের দাবি, বছর দেড়েক আগে একটি গাড়ি বিক্রি করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তার পরে কেরল, টাটা, রাঁচী-সহ নানা জায়গায় কাজ করে মাস পাঁচেক আগে সিউড়ির পাথরচাপুড়িতে আসেন। দিন পনেরো আগে তারাপীঠে যান। সেখান থেকে কে বা কারা তাঁকে হাসপাতালে দিয়ে য়ায়, তিনি জানেন না। তবে, দীর্ঘদিন পরে ছেলেমেয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পেরে কেঁদে ফেলেন বছর ৪৯-এর পলাশ। বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরব, কিন্তু একটু সময় দেওয়া হোক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ham Radio Rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy