বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়ায় দুর্ঘটনাস্থলে মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
ওভারহেড ক্রেনের ‘ল্যাডেল’ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তপ্ত গলিত ধাতু। পথে হুক ভেঙে ‘ল্যাডেল’ নীচে পড়লে তা ছিটকে পড়ে ঝলসে গেলেন কর্মরত শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার সকালে বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়ার একটি ইস্পাত কারখানার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় ১৭ জন শ্রমিক গুরুতর জখম হন। তাঁদের মধ্যে ১৪ জনকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আট জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুর্গাপুরের ওই হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল সুপার দুর্গাদাস রায় বলেন, “মেডিক্যাল টিম গড়ে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আট জনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।”
দুর্ঘটনার পরে ইনস্পেক্টর অব ফ্যাক্টরি (বাঁকুড়া) অনিমেষ প্রামাণিক ঘটনার তদন্তে কারখানায় যান। পরে, তিনি বলেন, “কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ওভারহেড ক্রেনের যন্ত্রপাতি পর্যবেক্ষণ করত কি না, দক্ষ লোক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে কি না, এ সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কারখানার ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজিত মহতা ফোনে জানান, বিশেষ কাজে বাইরে রয়েছেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ফেরার চেষ্টা করছেন। কী ভাবে এই ঘটনা, খতিয়ে দেখা হবে। জখম শ্রমিকদের চিকিৎসায় জোর দেওয়া হচ্ছে।
ঘড়িতে তখন প্রায় বেলা ১১টা। কারখানা সূত্রে খবর, অন্য দিনের ম তো কারখানার ওভারহেড ক্রেনের ‘ল্যাডেল’-এ গলিত ধাতু নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। হঠাৎই তীব্র শব্দে পড়ে যায় ল্যাডেলটি। তরল গলিত ধাতু ছিটকে পড়ে ঝলসে দেয় শ্রমিকদের শরীর। সঙ্গে সঙ্গে কারখানার অ্যাম্বুল্যান্স, আধিকারিকদের গাড়িতে জখম শ্রমিকদের বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটিতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ১৪ জনকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়। পথে অ্যাম্বুল্যান্স যাতে যানজটে না পড়ে, তার জন্য বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজ পর্যন্ত রাস্তা ‘গ্রিন করিডর’ করে পুলিশ।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কারখানার আইএনটিটিইউসি ইউনিটের সম্পাদক দিলীপ পাল বলেন, “ঘটনার সময়ে আমরা কয়েক জন শ্রমিক কারখানার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করছিলাম। দুর্ঘটনার খবর শুনে ভিতরে গিয়ে দেখি, চারদিকে গলিত ধাতু ছড়িয়ে রয়েছে। ধোঁয়া বেরোচ্ছে। শ্রমিকেরা এ দিক ও দিকে শুয়ে কাতরাচ্ছেন। সবারই চামড়া, চুল পুড়ে ঝলসে গিয়েছে।” তিনি আরও জানান, কেন এই দুর্ঘটনা ঘটল, কোথাও গাফিলতি ছিল কি না, আগামী দিনে শ্রমিক স্বার্থেই তা খতিয়ে দেখা দরকার।
জখম হয়ে ‘আইসিইউ’তে ভর্তি এক শ্রমিক পিণ্টু ঘোড়ুইয়ের বাবা অমর ঘোড়ুই বলেন, “শুনছি ছেলের পিঠ, হাত, পা পুড়ে গিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ায় দেখতে পাইনি।” বড়জোড়ার হাসপাতালে জখম শ্রমিকদের দেখতে যান বড়জোড়ার বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায়, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুখেন বিদ প্রমুখ। দুর্গাপুরের হাসপাতালে জখম শ্রমিকদের দেখতে যান মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) সুশান্তকুমার ভক্ত, বিডিও (বড়জোড়া) সুরজিৎ পণ্ডিত।
ঘটনা হল, গত কয়েক বছরে কখনও বয়লার ফেটে, কখনও কর্মরত অবস্থায় উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলিতে একাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পরে প্রতি বারই প্রশাসনের তরফে শ্রমিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হলেও দুর্ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে দাবি। স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘুটগোড়িয়ার ওই কারখানাটি ২০০৭-এ চালু হয়। প্রায় ১ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। অতীতে শ্রমিক নিরাপত্তা নিয়ে ওই কারখানায় নানা কর্মসূচি হতে দেখা গেলেও এ দিনের দুর্ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পশ্চিমাঞ্চল চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরকার বলেন, “কারখানাগুলিতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কারখানা কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের যে আরও সচেতন হওয়া দরকার, এ দিনের ঘটনা আবারও বুঝিয়ে দিল।”
দুর্ঘটনার পরে বাঁকুড়ার ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) সুপ্রকাশ দাসও এ দিন কারখানায় যান। তিনি বলেন, “গোটা বিষয়টি নিয়ে ইনস্পেক্টর অব ফ্যাক্টরি তদন্ত করছেন।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তাও জানান, কোনও গাফিলতিতে ঘটনাটি ঘটলে তা তদন্তে উঠে আসবে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রতিটি কারখানাকেই সতর্ক করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy