Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

আগুন তুলে দিল বহু প্রশ্ন

নিমেষে ভস্মীভূত হয়ে গেল পাশাপাশি আটটি গ্যারাজ। পুড়ে ছাই হয়ে গেল সারাইয়ের জন্য আসা কয়েকটি গাড়িও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৩
Share: Save:

নিমেষে ভস্মীভূত হয়ে গেল পাশাপাশি আটটি গ্যারাজ। পুড়ে ছাই হয়ে গেল সারাইয়ের জন্য আসা কয়েকটি গাড়িও।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এই অগ্নিকাণ্ডটি ঘটেছে জেলা সদর সিউড়ির সুভাষপল্লি এলাকায় সিউড়ি-দুবরাজপুর রাস্তার ধারে। আগুনে নেভাতে গিয়ে এবং দেখতে গিয়ে মোট চার জন জখম হয়েছেন। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও এড়ানো যায়নি ক্ষয়ক্ষতি। আহতেরা সিউড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রত্যেকেরই অবস্থা স্থিতিশীল।

দমকল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সিউড়ি শহরে ঢোকার মুখে রেলের আন্ডারপাস সংলগ্ন এলাকায় মূল রাস্তার বাঁ দিকে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী গ্যারাজ রয়েছে। দুপুর সওয়া ২টো নাগাদ হঠাৎ-ই কোনও ভাবে তার একটিতে আগুন লাগে। এর পরে গ্যারাজের ভিতরে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কোন গ্যারাজে প্রথম আগুন লাগে, তা এখনও নিশ্চিত করে জানা না গেলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, প্রথম আগুন লাগে শাহজাদ শেখ নামে এক ব্যবসায়ীর গ্যারাজে। সেই আগুন নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে পরপর গা লেগে থাকা মুন্না শেখ, ছটু শেখ, বাপি শেখদের গ্যারাজেও। লেলিয়ান শিখায় সব কিছু পুড়তে শুরু করে।

এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ব্যাপক ভিড় জমতে শুরু করে। পাশের একটি মোটরবাইকের শো-রুম থেকে ছুটে আসেন কৃষ্ণ অঙ্কুর নামে এক মেকানিক। তখনই কোনও একটি গ্যারাজের গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে তিনি মাথায় আঘাত পান। আবার বিস্ফোরণের শব্দে অসুস্থ হয়ে পড়েন পিন্টু শেখ নামে গ্যারাজগুলির এক কর্মী। অন্য দিকে, ঘটনার সময় আহত হন বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের এক ছাত্র মহম্মদ আজম মল্লিক এবং রাজু ভাণ্ডারী নামে এক সেলুন কর্মী। কিছু ক্ষণের মধ্যেই দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আসে। চার দিকে তখন আতঙ্কের ছাপ। প্রায় ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এ দিকে, যে সময় ঘটনাটি ঘটে, তখন গ্যারাজগুলির অধিকাংশ লোকই দুপুরের খাবার খেতে গিয়েছিলেন। তাই প্রাণহানির হাত থেকে বাঁচা গিয়েছে। যাঁর গ্যারাজে প্রথম আগুন লেগেছে বলে অনুমান, সেই শাহজাদ সিউড়ি রুটি পাড়ার বাসিন্দা। বছর পাঁচেক আগে তিনি ওই গ্যারাজটি খুলেছিলেন। তাঁরই সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শাহজাদ বলছেন, ‘‘শরীর খারাপ ছিল বলে বাড়ি গিয়েছিলাম। ঈশ্বরের কৃপায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছি।’’ এক লহমায় সব হারিয়ে মাথায় হাত মুন্না শেখ, ছটু শেখ, বাপি শেখদেরও।

জেলা সদরের এই ঘটনা বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। গ্যাসের কারবারে যুক্তদের অনেকেরই বক্তব্য, এই ধরনের রাস্তা দখল করে থাকা গ্যারাজগুলিতে সাধারণত বেআইনি ভাবে রান্নার গ্যাস দিয়ে সিলিন্ডার ফিলিং করা হয়। সেই গ্যাস অত্যন্ত দাহ্য। সাবধানে ব্যবহার না করলে যে কোনও দিন বড় বিপদ ঘটতে পারে। পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে এমন অবৈধ কারবার কী করে চলছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ঘটনার পরে সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘ওই গ্যারেজগুলি অবৈধ। শুধু ওখানকার কর্মীদেরই নয়, আশপাশের সাধারণ মানুষের বড় বিপদ ঘটতে পারত। আজকের দুর্ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা দ্রুত অভিযান চালিয়ে ওদের হঠাব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Garage Fire Ash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE