সরগরম: বলরামপুরের জয়ী বিজেপি সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলের পতাকা।
বিজেপির আট সদস্যের হাতে দলের পতাকা তুলে দিয়ে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতি তাঁরাই দখল করতে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মৌতোড়ে সভা করতে এসেছিলেন যুব সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক। সেখানে তৃণমূলে যোগ দিলেন বিজেপির প্রতীকে জিতে আসা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নিতাই মণ্ডল, বন্দনা মাহাতো, ছবি সিং সর্দার, উর্মিলা মাহাতো, লক্ষ্মী মাহাতো, প্রতিমা কিস্কু, চরণ কৈবর্ত্য, বিহারীলাল টুডু। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ভয় ও প্রলোভন দেখিয়েই দলবদল করানো হয়েছে। তা অবশ্য মানতে চাননি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
২০ আসনের বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে ভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ৩টি। বাকি ১৭টি যায় বিজেপির দখলে। পরে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বলরামপুরে অভিষেকের সভায় বিজেপি থেকে তৃণমূলে যান কল্পনা রুইদাস। এ দিন বিজেপির আরও আট জন যোগ দেওয়ায় তৃণমূলের আসন তিন থেকে বেড়ে দাঁড়াল ১২। বিজেপিতে রইলেন আট জন।
যোগদানের পরে মঞ্চে অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি বলেছিল, তৃণমূল পুরুলিয়া জেলায় জমি হারাতে শুরু করেছে। তারা যেখানে জমি তৈরি করেছিল, সেই বলরামপুরেই আজকে বিজেপি থেকে সমিতির সদস্যেরা তৃণমূলে যোগ দিলেন। বলরামপুর ঘিরে কত বিতর্ক। বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ থেকে দিলীপ ঘোষ, বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীরা হুঙ্কার দিয়েছেন। সেই বলরামপুরের পঞ্চায়েত সমিতি এ বার তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে চলে এল।’’
ঘটনা হল, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রশাসন বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে এখনও বোর্ড গঠনের ছাড়পত্র দেয়নি। প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি দিলে সেখানে তাঁরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে বোর্ড গঠন করবেন বলে দাবি করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
পুরুলিয়া জেলার কিছু এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি ভাল ফল করে। তার মধ্যে বিশেষ করে নজর টানে প্রাক্তন সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর নিজের তালুক বলরামপুরেই পরাজয়ের ঘটনা। সৃষ্টিধর-সহ বলরামপুরে জেলা পরিষদের অন্য আসনেও পরাজিত হয় তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে সাতটি পঞ্চায়েতও হাতছাড়া হয় শাসকদলের।
এরই মধ্যে বলরামপুরে বিজেপির দুই কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। খুনের পিছনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাত রয়েছে অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামে বিজেপি। তৃণমূল নেতৃত্ব এই খুনের সঙ্গে তাঁদের যোগ নেই বলে বরাবর দাবি করে আসছে। বলরামপুরে জনসমর্থন ফিরে পেতে একাধিক মন্ত্রী থেকে অভিষেক পর্যন্ত সভা করেন। নভেম্বরের শেষে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলরামপুরে সভা করতে এসে যাঁরা দল থেকে সরে গিয়েছেন, তাঁদের কাছে গিয়ে ফেরানোর নির্দেশ দেন।
এ দিন যাঁরা যোগ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে নিতাই মণ্ডল ওরফে মন্টু নিজেকে বলরামপুর ব্লকের বিজেপির এসসি মোর্চার সম্পাদক বলে দাবি করেন। তিনি দাবি করেন, ‘‘আমরা আগে তৃণমূল করতাম। কিন্তু, সষ্টিধর মাহাতো-সহ কয়েকজনের কাজে বীতশ্রদ্ধ হয়ে বিজেপি শুরু করেছিলাম। এখানে দেখি, পঞ্চায়েত সমিতিতে কে কোন পদ নেবে, তাই নিয়ে আবার কোন্দল শুরু হয়েছে। কলকাতার নেতারা এসে উল্টে কোন্দলে উস্কানি দিচ্ছিলেন। জেলা নেতৃত্বও উদাসীন। এত দিন বোর্ড গঠন না হওয়ায়, তা নিয়ে দলের তরফে যে আন্দোলন করা উচিত ছিল, তাও কেউ করেনি।’’ তাঁরা দাবি করেছেন, তৃণমূল ছাড়া উন্নয়নের কাজ সম্ভব নয় বুঝতে পেরে আবার তৃণমূলেরই পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন।
অভিষেক ঘোষণা করেন, এখনও যাঁরা বলরামপুরে বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য রয়েছেন, তাঁরাও আগামী দিনে তৃণমূলে আসবেন।
তবে, বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল আমাদের সদস্যদের দলে টেনে আখেরে গণতন্ত্রকে খুন করছে। আগামী দিনে বলরামপুরের মানুষই এর যোগ্য জবাব দেবেন।’’ অন্যদিকে, অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘গণতন্ত্র না থাকলে বিজেপি কী ভাবে ৪০টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করল? জেলা পরিষদের কয়েকটি আসনে জিতল কী ভাবে?’’
নিতাইয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিলীপবাবুর দাবি, ‘‘যাঁরা তৃণমূলে গেলেন, তাঁদের বিজেপির বদনাম করাটাই স্বাভাবিক। তাঁদের যে ভয়, প্রলোভন দিয়ে তৃণমূল নিয়ে গেল, সে কথা তো আর বলতে পারবেন না।’’
সে অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো দাবি করেন, ‘‘বলরামপুরে বিজেপির কোনও দিনই সমর্থক ছিল না। আমাদের কিছু কর্মী ভুল বুঝে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। বিজেপির আসল চেহারা বোঝার পরে তাঁরা আবার ফিরে আসছেন। বলরামপুরে তৃণমূলের জনভিত্তি অটুট রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy