কোর্টে কাজল শাহ। নিজস্ব চিত্র
জেলাশাসকের বাংলো চত্বরে বোমাবাজির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ বার গ্রেফতার হলেন এক তৃণমূল নেতা। সোমবার রাতে সিউড়ি কাছে জাতীয় সড়ক ঘেঁষা একটি হোটেল থেকে কাজল শাহ নামে ওই নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি ২০১৩ থেকে ’১৮ সাল পর্যন্ত সিউড়ি ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। গ্রেফতার হয়েছে তাঁর চার সঙ্গীও।
এই ঘটনায় অস্বস্তি ছড়িয়েছে জেলা তৃণমূলে। শাসকদলকে আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীরা। যদিও জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, ‘‘কাজল খুব ভাল ছেলে, ভাল কাজ করেছে। ওর নাম এফআইআরেও নেই।’’ তা হলে কেন গ্রেফতার হলেন? অনুব্রত বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’’ বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানিয়েছেন, জেলাশাসকের বাংলো চত্বরে বোমাবাজি কাণ্ডের তদন্তেই কাজল শাহের নাম উঠে এসেছে। কেন কী ভাবে তিনি জড়িত, তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জেলা আদালতের অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর কেশব দেওয়াসী জানান, মঙ্গলবার সিউড়ি আদালতের নির্দেশে কাজল-সহ ধৃত পাঁচ জনকেই সাত দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
সিউড়ি শহর লাগোয়া রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ঘেঁষেই রয়েছে জেলাশাসকের বাংলো। গত ২৯ জুলাই রাত আড়াইটে নাগাদ ওই বাংলো লক্ষ্য বেশ কয়েকটি বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ঘটনাস্থলে ঘুরে দেখে সিআইডির বম্ব স্কোয়াড। আসে পুলিশ কুকুরও। পুলিশ সুপারের নির্দেশে স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করা হয়। প্রথম থেকেই পুলিশের সন্দেহ ছিল, অবৈধ ভাবে বালি মজুত নিয়ে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর কড়া অবস্থানই ওই আক্রমণের নেপথ্যে। সেই সূত্র ধরে এগিয়ে ৩০ জুলাই রাতের মধ্যেই চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ধৃতদের তিন জনের বাড়ি সিউড়ির তিলপাড়া পঞ্চায়েতের বাঁশজোড়ে। ৩১ জুলাই সংবাদমাধ্যমকে ডেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবিমল পাল জানিয়েছিলেন, ধৃতেরা প্রত্যেকেই ময়ূরাক্ষীর বাঁশজোড় বালিঘাটের সঙ্গে যুক্ত এবং বোমাবাজির কথা স্বীকার করেছে। পুলিশের দাবি, প্রশাসনিক অভিযানের ফলে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। সেই রাগেই হামলা। পরে আরও এক জনকে ধরে পুলিশ।
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ধৃতদের জেরা করেই কাজলের নাম উঠে আসে। কাজলের বাড়িও বাঁশজোড়ে। সরাসরি বালিঘাটের মালিক নন কাজল। বালির লিজ তাঁর ভাইয়ের নামে। কিন্তু, এলাকায় কান পাতলেই জানা যাবে, সিউড়ি লাগোয়া ময়ূরাক্ষী বালি কারবারের নিয়ন্ত্রক কাজলই। এক সময়ের সামান্য আনাজ বিক্রেতা কাজলের এই উত্থানের নেপথ্যে বালি কারবার ও তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মদত রয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি। তৃণমূল সূত্রের খবর, গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দিলেও পরে দলের নির্দেশে কাজল তা প্রত্যাহার করে নেন। তিনি দলের সিউড়ি ১ ব্লক সভাপতি স্বর্ণশঙ্কর সিংহের ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। যদিও স্বর্ণশঙ্করবাবু বলছেন, ‘‘কাজল বর্তমানে দলের কোনও পদে নেই। আইন আইনের পথে চলবে।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদার অভিযোগ, ‘‘গোটা শাসকদলটাই দুষ্কৃতী দ্বারা পরিচালিত। লুটতরাজের পথে বাধা হলে এরা ব্যক্তি, বিরোধী দল, শীর্ষ আমলা— কাউকেই বাদ দেয় না! কাজল শাহের গ্রেফতারি সেটাই প্রমাণ করল।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের দাবি, ‘‘এমন অনেক কাজল তৃণমূলে রয়েছে। পুলিশ নিরপেক্ষ হলে তাঁরা ধরা পড়বেন।’’ তাঁর মতে, বোমাবাজি যেহেতু জেলাশাসকের বাংলো লক্ষ্য করে হয়েছিল, তাই পুলিশ কাজলকে ধরতে বাধ্য হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy