Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪

‘এ ভাবে কটা সঞ্জয়-ফুচুকে নিয়ে যাবে?’

অমিত জানিয়েছিলেন, জনসম্পর্কের মাধ্যমে দলের সমর্থন বাড়াতে দেশের ২ কোটি বিজেপি কর্মী অভিযানে নেমেছেন। দলের এক জন কার্যকর্তা হিসাবে তিনি লাগদা গ্রামে এসেছেন। বিজেপি সরকারের চার বছরে কাজকর্মের খতিয়ান লেখা একটি পুস্তিকা ওই বাড়ির লোকজনের হাতে তুলে দিয়েছেন। 

বাড়িতে সঞ্জয়ের কাকা চঞ্চল রাজোয়াড়। ছবি: সুজিত মাহাতো

বাড়িতে সঞ্জয়ের কাকা চঞ্চল রাজোয়াড়। ছবি: সুজিত মাহাতো

প্রশান্ত পাল
বলরামপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ০১:১৪
Share: Save:

অমিত শাহ ‘জনসম্পর্ক’ অভিযানে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া ১ ব্লকের লাগদা গ্রামের রাজোয়াড়পাড়ায় যান। তিনি যে বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেই পরিবারের মা ও ছেলে এবং পড়শি আরও দু’জনের হাতে শুক্রবার কলকাতার কালীঘাটে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেওয়া হয়।

অমিত যে বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেখানে চার-পাঁচটি আত্মীয়-পরিবার থাকে। তার মধ্যে শিশুবালা রাজোয়াড় ও তাঁর ছেলে সঞ্জয় রাজোয়াড় কলকাতা ‘গিয়েছেন’। আর ‘গিয়েছেন’ আত্মীয়-পড়শি অষ্টমী রাজোয়াড় ও তাঁর ছেলে ফুচু। তাঁরা সঞ্জয়দের চার-পাঁচটি বাড়ি পরে থাকেন। ফুচু এবং সঞ্জয় দু’জনেই দিনমজুরি করেন। দু’জনেরই বাবা নেই।

পড়শি এবং পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিত শাহ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ গিয়েছিলেন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে হাইস্কুলের সামনে কিছু লোকজন আসে। ফুচুর স্ত্রী হিমানী বলেন, ‘‘এক জন এসে আমার স্বামীকে স্কুলের সামনে ডেকে নিয়ে যায়। তার পরে আর ফেরেননি। সবাই বলল, কলকাতায় নিয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, স্বামীর ফোন সুইচ অফ থাকায় যোগাযোগ করতে পারেননি।

সঞ্জয়ের বছর দশেকের ছেলে জানায়, বাবাকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কিছু লোকজন ডেকে নিয়ে যায়। সঞ্জয়ের কাকা, পেশায় দিনমজুর চঞ্চল রাজোয়াড় বলেন, ‘‘কলকাতায় নিয়ে গিয়েছে শুনলাম।’’ কারা নিয়ে গিয়েছে? চঞ্চল বলেন, ‘‘সেটা জানি না।’’ স্থানীয় সূত্রের দাবি, লাগদা গ্রামের বাসিন্দা তৃণমূলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মানিকমণি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সঞ্জয়রা কলকাতা গিয়েছেন।

অমিত জানিয়েছিলেন, জনসম্পর্কের মাধ্যমে দলের সমর্থন বাড়াতে দেশের ২ কোটি বিজেপি কর্মী অভিযানে নেমেছেন। দলের এক জন কার্যকর্তা হিসাবে তিনি লাগদা গ্রামে এসেছেন। বিজেপি সরকারের চার বছরে কাজকর্মের খতিয়ান লেখা একটি পুস্তিকা ওই বাড়ির লোকজনের হাতে তুলে দিয়েছেন।

বাড়িটি মাটির। টালির চাল। কাঁচা উঠোন। পরিবারের সদস্যদের কারও পেশা দিনমজুরি। কেউ মিস্ত্রি বা জোগাড়ের কাজ করেন। সঞ্জয়ের পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন, বিপিএল তালিকায় তাঁদের নাম নেই। সরকারি কোনও সাহায্যও পাননি। দু’টাকা কিলো চাল পান না। তবে সেই সমস্ত কথা অমিত শাহকে ওই সময়ে বলতে পারেননি। সঞ্জয়ের আত্মীয়া রেখা রাজোয়াড়, শান্তময়ী রাজোয়াড়, জবা রাজোয়াড়রা বলেন, ‘‘আমাদের উনি কিছু জিজ্ঞাসা করেননি। প্রচুর লোক ঘিরে রেখেছিল। কথা বলার সুযোগও পাইনি।’’

লাগদা গ্রাম পঞ্চায়েত এ বারের ভোটে তৃণমূল জিতেছে। মোট আসন ১৩টি। বিজেপি পেয়েছে একটি। বিজেপির জেলা সম্পাদক বিবেক রঙ্গা বলেন, ‘‘অমিতজি পুরুলিয়ার মঞ্চ থেকে বলেছেন, তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরছে। ওরা সেটাই দেখিয়ে দিল। এত দিন ওই গরিব মানুষগুলোর দিকে নজর ছিল না। এখন তুলে নিয়ে গেল। এ ভাবে কটা পরিবারকে নিয়ে যাবে?’’

জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি মানিকমণি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁরা নিজেরাই কলকাতা গিয়েছেন। আমরা শুধু সাহায্য করেছি। তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ তাঁর দাবি, শেষ বিপিএল তালিকা হয়েছিল বাম আমলে। তিনি বলেন, ‘‘বাম আমলে ওঁদের বঞ্চনা করা হয়েছিল। আমরা পাশে থাকি। সেই জন্যই এ বারও ওই পঞ্চায়েতে জিতেছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah অমিত শাহ TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy