বাঁকুড়া মেডিক্যালে জখম দুই তৃণমূল কর্মী। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল প্রার্থীদের উপরে একই দিনে বাঁকুড়া জেলার দু’টি ভিন্ন জায়গায় হামলার অভিযোগ উঠল। মঙ্গলবারের ঘটনা। ইতিমধ্যেই একটি ঘটনায় তিন জন গ্রেফতার হলেও অন্যটিতে বুধবার পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।
মঙ্গলবার বিকেলে রাইপুর ব্লকের হিজলি এলাকায় জেলা পরিষদের ১৭ নম্বর আসনের তৃণমূল প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু দলীয় কর্মীদের নিয়ে বুথ-বৈঠক করছিলেন। অভিযোগ, বৈঠক চলাকালীন মোটরবাইকে চেপে প্রায় ১০০ জন দুষ্কৃতী এসে তাঁদের উপরে চড়াও হয়। তির, ধনুক, বোমা, বন্দুক-সহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতৃত্বের। অতর্কিত এই হানায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যান তৃণমূল কর্মীরা। অভিযোগ, ধারাল অস্ত্রের কোপে দুই তৃণমূল কর্মী জখম হন। এক জনের পায়ে তির লাগে। এরপরেই তৃণমূলের লোকজন আতঙ্কে এলাকায় লোকজনের বাড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেন। ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ এলাকায় গিয়ে উপস্থিত হলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।
মৃত্যুঞ্জয়বাবুর অবশ্য কিছু হয়নি। রাতে বারিকুল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তিন জনকে রাতেই আটক করে পরে গ্রেফতার করে। মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘বৈঠক চলাকালীন অতর্কিতে দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১০০ জন দুষ্কৃতী ঘিরে ফেলে তির, বোমা ছুড়তে থাকে। আমাদের তিন জন কর্মী জখম হন। লোকের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ায় অনেকে রক্ষা পেয়েছি।’’
মৃত্যুঞ্জয়বাবুর দাবি, এলাকার বিজেপি কর্মীদের নেতৃত্বেই এই হামলা হয়েছে। যদিও অভিযোগপত্রে তিনি কোনও দলের নাম উল্লেখ করেননি। তবে যাঁদের নাম অভিযোগপত্রে জানানো হয়েছে, তাঁরা এলাকায় বিজেপি কর্মী বলেই পরিচিত। তিনি বলেন, ‘‘হামলার সময় যাঁদের মুখ চিনতে পেরেছি, তাঁদের নাম অভিযোগেপত্রে লিখেছি।’’
রাইপুর ব্লকের জেলা পরিষদের ১৭ নম্বর আসনে তৃণমূল ছাড়া বিজেপি এবং সিপিএমেরও প্রার্থী রয়েছেন। হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির বাঁকুড়া জেলা সাংগঠনিক সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র দাবি করেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই হামলা। ওরা আমাদের উপরে মিথ্যা দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। সব ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিজেপি নেতা-কর্মীদের ভোটের মুখে মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল।’’ সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, ‘‘ওই হামলা কারা চালিয়েছে জানি না। তবে এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
অন্য দিকে, মঙ্গলবার রাতেই ওন্দা থানার পুনিশোল এলাকায় তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী রেজাউল হক মণ্ডলের উপরে হামলা হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের অভিযোগের তির ওই এলাকার নির্দল প্রার্থীর দিকে। মারধরে জখম রেজাউলকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাতে একা মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। সেই সময় নির্দল প্রার্থী-সহ দুষ্কৃতীরা ধারাল অস্ত্র নিয়ে আমাকে আক্রমণ করে। মোটরসাইকেল আটকে ওরা এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে। জখম হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।’’ পরে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারীরা তাঁকে পড়ে থাকতে দেখে তাঁর বাড়িতে ফোন করে খবর দেন। তাঁর বড় ছেলে জাকির হোসেন মণ্ডল পড়শিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরাই রেজাউলকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যান।
রাতেই জাকির ওন্দা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অবশ্য এ দিন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। চেষ্টা করেও অভিযুক্ত ওই নির্দল প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। জেলার দুই প্রান্তে দু’টি ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের জেলা নেতা অরূপ চক্রবর্তী মন্তব্য করেন, ‘‘ভোট যত এগিয়ে আসছে, হারার সম্ভাবনা প্রবল বুঝে বিরোধীরা আমাদের প্রার্থীদের উপরে হামলা চালাচ্ছে। পুলিশ কাউকে রেওয়াত করবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy