Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Worker Death

সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে বিষ-গ্যাসে মৃত তিন

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতরা হলেন বাড়ির মালিক সনাতন ধীবর (৪৯), স্বপন বাদ্যকর ওরফে বীরবল (৪৬) এবং তাঁর ভাইপো অমৃত বাদ্যকর (৩২)। একই পাড়ার তিনজনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ এলাকা।

Septic tank death at kakartala

দেহ উদ্ধার করে আনছেন দমকলবাহিনীর কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র senguptadayal@gmail.com

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকরতলা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ০৯:৪৬
Share: Save:

সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে আটকে গিয়েছিলেন বাড়ির মালিক ও দুই মিস্ত্রি। শনিবার রাতে, পাঁচ ঘণ্টা পর উদ্ধার হল তাঁদের নিথর দেহ। বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আরও এক শ্রমিক। কাঁকরতলার হজরতপুরের ওই ঘটনায় স্বজনহারা পরিবারগুলিকে সমবেদনা জানাতে রবিবার এলাকায় এসেছিলেন সিউড়ির বিধায়ক তথা জেলাপরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতরা হলেন বাড়ির মালিক সনাতন ধীবর (৪৯), স্বপন বাদ্যকর ওরফে বীরবল (৪৬) এবং তাঁর ভাইপো অমৃত বাদ্যকর (৩২)। একই পাড়ার তিনজনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ এলাকা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হজরতপুর গ্রামের বাউড়িপাড়ায় শনিবার বিকেলে সনাতন ধীবরের বাড়িতে একটি পুরোনো সেপটিক ট্যাঙ্কের সঙ্গে নতুন প্যান লাগানোর কাজ করতে গিয়েছিলেন রাজমিস্ত্রী স্বপন বাদ্যকর। পাইপলাইনে সমস্যা হওয়ায় সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে সেই পাইপলাইনে শাবল চালাতেই দীর্ঘদিনের বন্ধ চেম্বার থেকে বিষাক্ত গ্যাস বের হতে শুরু করে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সংজ্ঞাহীন হয়ে ট্যাঙ্কের মধ্যেই আটকে পড়েন স্বপন।

কী ঘটল বুঝতে না পেরে ট্যাঙ্কে নামেন বাড়ির মালিক সনাতন ধীবরও। তিনিও জ্ঞান হারান। খবর পেয়ে ছুটে আসেন রাজমিস্ত্রি স্বপনের ভাইপো অমৃত। একই অবস্থা হয় তাঁরও। তিন জনের অবস্থা দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন পাড়ার বাসিন্দারা। দড়ি বেঁধে ওই ট্যাঙ্কে নামানো হয় আর এক প্রৌঢ়, আকাল বাগদিকে। জ্ঞান হারান তিনিও। তবে দড়ি থাকায় তাঁকে কোনও ক্রমে তুলে নেন স্থানীয়রা।

খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ পরে দমকল বাহিনী এসে ঘন্টা পাঁচেকের চেষ্টার পর রাত ১০টা নাগাদ যখন সকলকে উদ্ধার করে তখন সব শেষ। খয়রাশোলের নাকড়াকোন্দা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়ে দেন, সকলেই মৃত। রবিবার সিউড়ি জেলা হাসপাতালে দেহগুলির ময়না তদন্ত হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে সেপটিক ট্যাঙ্কের উপর রান্নাঘর এবং বদ্ধ জায়গা থাকায় উদ্ধারকাজেও দেরি হয়। বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েকজন দমকল কর্মীও।

যে বাড়িতে ঘটনা ঘটে তার মালিক সনাতন মারা গেলেও কেন এমন মরণফাঁদে কাজের জন্য পাড়ার রাজমিস্ত্রিকে ডাকা হয়েছিল তা নিয়ে পরিবারের উপর ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। শনিবার রাতে ডেপুটি পুলিশ সুপার, সিআই এবং ওসির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে থেকে পরিস্থিতি সামলায়। রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায় বাড়ি তালাবন্ধ। বাইরে পাহারায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। মৃত সনাতনের পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

ওই বাড়ি থেকে ৭০ -৮০ মিটার দূরেই প্রান্তিক দুই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে দিশেহারা দুই পরিবার। তিন নাবালিকা মেয়ে রয়েছে রাজমিস্ত্রি স্বপন ওরফে বীরবল বাদ্যকরের। তাঁর স্ত্রী মঞ্জু কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘কী করে মেয়েগুলোকে মানুষ করব? বহুবার সনাতনের স্ত্রী আমার স্বামীকে ডাকতে এসেছিল। কিন্তু যায়নি। কাল অন্য জায়গায় কাজ সেরে বাড়ি ফিরেছিল।বিকেলে ডাকার পর ওদের বাড়ি যেতেই সব শেষ হয়ে গেল।’’ স্বপনের ভাইপো অমৃতের বাড়িতে সমানে কেঁদে চলেছেন স্ত্রী নয়নতারা, বোন আহ্লাদিরা। নয়নতারা বলেন, ‘‘কাকা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল শুনে স্বামী ছুটেছিল।আর ফিরল না। কী হবে আমাদের ছোট ছেলেটার!’’

বরাত জোরে বেঁচে যাওয়া আকাল বাগদি জানান, এক সঙ্গেই কাজ করতেন তাঁরা। তিনজন আটকে আছে শুনে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। আকালের কথায়, ‘‘কী করে ওদের উদ্ধার করা হবে সেটা কেউ বুঝতে পারছিল না। কিছু লোক বলল তুমি নেমে দেখবে নাকি? স্বপন আমার বন্ধুর মতো, তাই ভাবলাম দেখি বাঁচাতে পারি কি না। এক মূহূর্তেই জ্ঞান হারাই। ওই অবস্থায় আমাকে তুলে হাসপাতালে পাঠায়। ভাগ্যিস দড়ি বেঁধে নামানো হয়েছিল আমায়, তাই বেঁচে গেলাম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Worker Death Septic Tank Septic Tank Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE