মৃত ছৌ শিল্পী প্রশান্ত কুমারের বাবা ভাদরি কুমার। মঙ্গলবার চিরুহাতু গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
ফের পিকআপ ভ্যান উল্টে মৃত্যু হল দুই ছৌ শিল্পীর। এ বার ঘটনাস্থল পুরুলিয়া মফস্সল থানার কড়াডি গ্রাম। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে অনুষ্ঠান সেরে বাড়ি ফেরার পথে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয় গিরিধারী কুমার (৪০) ও প্রশান্ত কুমারের (২৭)। তাঁরা দু’জনেই কোটশিলা থানার চিরুহাতু গ্রামের বাসিন্দা। আহত হন ওই দলের ২২ জন। দুর্ঘটনাটি ঘটে পুরুলিয়া-বান্দোয়ান রাস্তার উপরে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে কোটশিলার এই ছৌদলটি বান্দোয়ানে নাচ দেখিয়ে বাড়ি ফিরছিল। রাত ১টা নাগাদ কড়াডির কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিকআপ ভ্যানটি উল্টে যায়। টামনা ফাঁড়ি থেকে পুলিশ গিয়ে আহতদের পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা গিরিধারীকে মৃত বলে জানান। দুই শিল্পীর অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাঁদের ঝাড়খণ্ডের রাঁচীতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে প্রশান্ত কুমারকে পরে মৃত বলে জানানো হয়।
দুই সহ-শিল্পীকে হারিয়ে কার্যত নির্বাক হয়ে গিয়েছেন বরিষ্ঠ শিল্পী অজিত কুমার। সোমবার রাতে তিনিও ওই গাড়িতেই ছিলেন। অজিতবাবুর কথায়, ‘‘বান্দোয়ানের কায়রাডি গ্রামে ছিল আমাদের অনুষ্ঠান। ‘ভীম-রাক্ষস বধ’ এবং ‘মহাসতী নর্মদা’— এই দু’টি পালা করেছিলাম আমরা। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ পালা শেষ হয়ে গিয়েছিল। নাচ শেষে সবাই মিলে বাড়ি ফিরে আসছিলাম। তখনই দুর্ঘটনা।’’ তিনি জানান, তাঁরা ৩৬ জন শিল্পী সকলেই ওই পিকআপ ভ্যানে ছিলেন। ফাঁকা রাস্তায় ছুটছিল গাড়ি। হঠাৎ কেঁপে উঠে ঝাঁকুনি খায় পিকআপ ভ্যান। তারপরেই জ্ঞান হারান অজিতবাবু। গাড়িতে থাকা আর এক শিল্পী স্বরূপ কুমার বলেন, ‘‘ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ ছিটকে পড়ি। কী হয়েছে বুঝে ওঠার আগেই দেখি, আমার উপরে আরও অনেকে চাপা পড়েছে। তারপরেই জ্ঞান হারাই।’’ কৃষিজীবি গিরিধারী শিব সেজে নাচতেন। প্রশান্ত দলের নানা কাজে যুক্ত ছিলেন। রাঁচিতে নিয়ে যাওয়া অন্য দু’জনের অবস্থা মঙ্গলবার স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি আটক করা হয়েছে।
এই ঘটনায় এলাকায় শোক নেমে এসেছে। এ দিন বিকেলে চিরুহাতু গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুই শিল্পীর মৃত্যু নিয়ে আলোচনা চলছে। গিরিধারীর দেহ ময়না-তদন্তের পরে এ দিন দুপুরে আসে। তাঁর মা একাদশী কুমার দরজার পাশে গা এলিয়ে বসেছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘এক মাত্র ছেলে অকালে চলে গেল। সংসার চালাব কী করে?’’ গিরিধারীর পরিবারে স্ত্রী রম্ভা জানান, একটি ছেলে ও দু’টি মেয়ে রয়েছে। ওদের মুখে ভাত জোগাব কী করে?’’ প্রশান্তের বাবা ভাদরি কুমার বলেন, ‘‘দুই ছেলের মধ্যে প্রশান্ত বড়। ওর স্ত্রী সাধনা ও এক মেয়ে রয়েছে। ওদের সামনে দাঁড়াতে কষ্ট লাগছে।’’
জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। মৃত শিল্পীদের নিকটাত্মীয়দের হাতে সরকারি ক্ষতিপূরণ যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছে দেওয়া যায়, তা দেখা হচ্ছে।’’ এ দিন হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান জয়পুরের বিধায়ক শক্তিপদ মাহাতো। ১২ জানুয়ারি পাড়া থানার সড়বেড়িয়া গ্রামের ছৌশিল্পীরা রঘুনাথপুরে বিবেক উৎসবে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় পড়েন। সেখানেও দু’জন শিল্পীর মৃত্যু হয়। আহত হন ওই দলের অনেকে। তারও আগে ছৌশিল্পীদের দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছে। বার বার কেন এমন পরিণতি হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy