Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bishnupur Municipality

জঙ্গল সাফ, যায়নি জঞ্জাল-যন্ত্রণা

মাড়ুইবাজার গয়লাপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা সুভাষ পাল বলেন, “শৈশবে সরকারি কুয়োর সামনে স্নান করার জন্য লাইন পড়ত। রাজদরবার এলাকার ছিল জঙ্গলে ভর্তি।

বিষ্ণুপুর পৌরসভা।

বিষ্ণুপুর পৌরসভা। —নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ অধিকারী
 বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২৪
Share: Save:

রাজ-রাজাদের ঐতিহ্যকে আঁকড়ে সার্ধশতবর্ষ ছুঁল বিষ্ণুপুর পুরসভা। এই দিনে প্রবীণ পুরবাসীদের স্মৃতিতে ফিরে আসছে নিজের শহরের ছেলেবেলার কথা। তুলনা টানছেন বর্তমান নাগরিক পরিবেষা নিয়েও।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, সে সময় পুরএলাকা চারটি জ়োনে বিভক্ত ছিল। পুরভবন, রসিকগঞ্জ, চিঁড়াকলের গলি ইত্যাদি এলাকা নিয়ে ছিল ‘এ জ়োন’, তন্তুবায় সম্প্রদায় বাস মাধবগঞ্জ ও কৃষ্ণগঞ্জ নিয়ে ‘বি জ়োন’, হাজরাপাড়া, কাটানধার ও রাজদরবার নিয়ে ‘সি জ়োন’ এবং মল্লেশ্বর, কাদাকুলি বিশ্বাসপাড়া,শাঁখারি বাজার নিয়ে ‘ডি জ়োন’। স্টেশনরোড এলাকায় অল্প বসতি ছিল।

শহরের জমজমাট এলাকা ছিল মাধবগঞ্জ ও কৃষ্ণগঞ্জ। সপ্তাহে একদিন শুক্রবার চকবাজারে হাট বসত। রবিবার ছুটির দিনেও চাষিরা গামছা, চাল, ডাল, সর্ষে, শাক ইত্যাদির পসরা নিয়ে বসতেন। তখন বিনিময় প্রথা ছিল। শহরে চুরি-ডাকাতি বিশেষ ছিল না। অল্প কয়েকজন চৌকিদার ছিলেন।

বিষ্ণুপুরে প্রথম ঢালাই রাস্তা হয় ১৮৮২ সালে। এখন যেখানে কুমারী টকিজ়, সেখান থেকে গড়দরজা পর্যন্ত প্রথম পাকা রাস্তা হয়। তা-ও ২০ ফুটের বেশি চওড়া ছিল না। স্টেশন রোডের বাসিন্দা আশি ছোঁয়া প্রবীণ ব্যবসায়ী সাধন ঘোষ জানান, শহরের বাকি রাস্তা বর্ষায় হাঁটু-সমান জল কাদায় ভরে থাকত। তিনি বলেন, ‘‘১৯৭০ সালেও আমাদের এলাকা ফাঁকা, ঝোপ-জঙ্গলে ভরা ছিল। বিকেল হলেই চার দিকে শেয়াল ছোটাছুটি করত। রক্ষাকালী মন্দিরের পাশ দিয়ে ফাঁকা মাঠ পেরিয়ে সবাই ট্রেন ধরতে যেতেন। তারপর সার্কাসের তাঁবু বসল। সেই থেকেই সার্কাস ময়দান তৈরি হল। তবে মাটির রাস্তায় জল ছড়িয়ে ধুলো কমানোর ব্যবস্থা ছিল পুরসভার।’’

মাড়ুইবাজার গয়লাপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা সুভাষ পাল বলেন, “শৈশবে সরকারি কুয়োর সামনে স্নান করার জন্য লাইন পড়ত। রাজদরবার এলাকার ছিল জঙ্গলে ভর্তি। ১৯৮৮ সালে বিষ্ণুপুর মেলা শুরু হতে পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠে রাজদরবার।’’

তবে শহরে ঢালাই রাস্তা ও নিকাশি ব্যবস্থা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে তৎকালীন পুরপ্রধান প্রয়াত তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের হাত ধরে। ১৯৯০-২০২০ দীর্ঘ তিন দশকের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় জানান, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মোষে টানা গাড়িতেই শহরের আবর্জনা সংগ্রহ করা চলেছে। রাস্তায় জ্বলত কেরোসিনের ‘বিদ্যাসাগর বাতি’। পুরসভার কর্মীরা বিকেলে কেরোসিন দিয়ে আলো জ্বালাতেন। পরের দিন ভোরে তাঁরা নিভিয়ে দিতেন। ১৯৯০ সালে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে মোড়ে একটি করে বৈদ্যুতিক পথবাতি বসানো হয়। পরে অলিগলিতেও পথবাতি বসায় পুরসভা। তবে পানীয় জলের জন্য ইঁদারাই ছিল ভরসা। তিনি পুরপ্রধান হয়ে প্রথমেই ৬৫টি নলকূপ বসান। বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন উপপুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায় জানান, এরপর ধীরে ধীরে পুরসভার উদ্যোগে বিষ্ণুপুরে আধুনিক বাস টার্মিনাস, মোড়ে মোড়ে হাইমাস্ট আলো প্রভৃতি বসেছে।

এখন শহরে মাথা তুলছে বহুতল। অলি-গলিও ঢালাইয়ে মোড়া। ঘরে ঘরে নলবাহিত জল। তবে নিকাশি সমস্যা ও আবর্জনা ফেলা নিয়ে ভোগান্তি পুরোপুরি কাটেনি। পুরবাসীর আক্ষেপ, শহরের আবর্জনা ফেলার জন্য ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জমি সদ্য মিললেও তা পুরোপুরি তৈরি হয়নি। ফলে শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন জায়গায় পুরসভার ফেলা আবর্জনার স্তূপ তাঁদের যন্ত্রণা দেয়। শহরের ঘিঞ্জি রাস্তায় যানজট-সমস্যাও মাথাব্যথার কারণ। পর্যটন নগরী গড়ে ওঠার পথে এগুলো অবশ্যই অন্তরায়। পুরবাসীর দাবি, সার্ধশতবর্ষে এই সব সমস্যা দূর করে ঝকঝকে বিষ্ণুপুর উপহার দিন পুরপ্রতিনিধিরা। (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Bishnupur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy