Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

সেনাবাহিনীতে এসো, ছাত্রদের বলে গেলেন বায়ু সেনা প্রধান

নিজের স্কুলে এসে বর্তমান ছাত্রদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেন পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের প্রাক্তণী তথা বায়ুসেনা প্রধান অরূপ রাহা। আগেও তিনি এই স্কুলে এসেছেন। তবে মাস তিনেক আগে তিনি দেশের এয়ার চিফ মার্শাল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে এই প্রথম তিনি স্কুলে এলেন।

ছেলেবেলার ছাত্রাবাস কর্মীকে দেখে খুশি বায়ু সেনা প্রধান। —নিজস্ব চিত্র।

ছেলেবেলার ছাত্রাবাস কর্মীকে দেখে খুশি বায়ু সেনা প্রধান। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০১:৩১
Share: Save:

নিজের স্কুলে এসে বর্তমান ছাত্রদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেন পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের প্রাক্তণী তথা বায়ুসেনা প্রধান অরূপ রাহা।

আগেও তিনি এই স্কুলে এসেছেন। তবে মাস তিনেক আগে তিনি দেশের এয়ার চিফ মার্শাল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে এই প্রথম তিনি স্কুলে এলেন। নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনীর মধ্যেও তাঁকে ঘিরে ধরল ছাত্ররা, অভিভাবকেরাও। স্কুল ছেড়ে যাওয়ার আগে অরূপবাবু বলে গেলেন, “এই স্কুল শুধু শৃঙ্খলাবোধই শেখায় না, চরিত্র গঠনে, মানসিক ভাবে দৃঢ় হতে ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে শেখায়।” ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ, “তোমাদের সকলের সঙ্গে থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এখান থেকে পাশ করে তোমরাও সেনাবাহিনীতে যোগদান কর।”

কলাইকুণ্ডা থেকে বায়ুসেনার বিশেষ চপারে এ দিন দুপুরে তিনি সৈনিক স্কুলের হেলিপ্যাডে নামেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহধর্মিনী লিলি রাহাও। ক্যাডেটরা তাঁকে গার্ড অব অনার দেয়। স্কুলের টিচার্স রুমে তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান। ১৯৬৫ সালে এই স্কুলে পড়তে আসেন অরূপবাবু। তখন স্কুল ভবন ছিল শহরের অন্য প্রান্তে বোঙাবাড়িতে। পরবর্তী কালে স্কুল উঠে আসে শহরের অন্য প্রান্তে রাঁচি রোডে। দু’টি জায়গাতেই ছাত্র জীবন কাটিয়েছেন অরূপবাবু। ১৯৭০ সালে তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। বছর দুয়েক আগে স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন।

ছাত্রদের কাছে তিনি তাঁর নিজের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এই যে আমি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছি। নিজে তৃপ্ত বোধ করছি।’’ অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা নিশ্চয়ই সন্তানদের এখানে পাঠাতে পেরে খুশী। যদিও এখন নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের কাজের সুযোগ রয়েছে, তবু সেনাবাহিনীতে ছেলে যোগদান করলে সৈনিক স্কুলের একজন ছাত্রের অভিভাবক হিসেবে আপনাদেরও একটা আলাদা তৃপ্তির জায়গা তৈরি হবে। আপনারাও গর্ব অনুভব করবেন।”

একদা স্কুলের প্যাটেল হাউসের (ছাত্রবাস) আবাসিক অরূপ রাহাকে ঘিরে ধরেন ক্যাডেটরা। ওই হাউসের আবাসিক অষ্টম শ্রেণির রাহুল মণ্ডল, গগন কুমার বা ষষ্ঠ শ্রেণির অণু কল্পরাজ, শৌর্য সরকার বলে, “আমরা অভিভূত। দেশের বায়ুসেনা প্রধান আমাদের স্কুলের প্রাক্তণী, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আমাদের নিয়ে তাঁর যে স্বপ্ন, তা আমরা পূরণ করার চেষ্টা করব।” পটনার কুমার সত্যম বলে, “আমি ঠিক করেছি, সেনাবাহিনীতেই যাব।” এসেছিলেন তার বাবা পেশায় শিক্ষক শিশুপাল কুমার। তিনিও বলেন, “আমি ছেলেকে এতক্ষণ এই কথাই বলছিলাম। আজ আমারই গর্ব হচ্ছে।

ভিড়ের মধ্যেই ছাত্রাবাসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অক্ষয় মাহাতো অরূপবাবুর দিকে এগিয়ে যান। “চিনতে পারছেন”তাঁর প্রশ্ন শুনে এগিয়ে গিয়ে অক্ষয়বাবুর হাত চেপে ধরেন অরূপবাবু। জানতে চান, “কেমন আছেন এখন? অনেকদিন অগের কথা। ভালো থাকবেন। অনেকদিন বাঁচবেন।” অরূপবাবুর চপাল আকাশে উড়তে অক্ষয়বাবু বলেন, “উনি ছোটবেলায় খুব ডানপিটে ছিলেন। ঘাড়ে চড়ে বসে থাকতেন।” অরূপবাবুও যাওয়ার আগে বলে যান, “এখানে এসে দারুণ লাগছে। আজ এখানে আসা আমার জন্য অবশ্যই স্মরণীয়। এই স্কুল একজনকে সুনাগরিক হতে নানা ভাবে সাহায্য করে।” স্কুলের অধ্যক্ষ বি এস ঘোরপোড়ের হাতে স্কুলের জন্য ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন এই প্রাক্তনী। অধ্যক্ষ বলেন, “এই দিনটা আমাদের স্কুলের জন্যও স্মরণীয়।”

অন্য বিষয়গুলি:

arup raha air chief marshal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE