সাবেক পুজোর পাশাপাশি, এবার পাল্লা দিয়ে বোলপুরে থিম পুজোর রমরমা। থিমের ধূম সর্বত্র। কোথাও মণ্ডপ সজ্জায় থিমের ছোঁওয়া তো কোথাও আবার থিমের প্রতিমা। উদ্যোক্তাদের নির্দেশ মত, শিল্পীরা সাম্প্রতিক অতীতের ঘটনা ফুটিয়ে তুলেছেন। সামাজিক ও পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও জায়গা করে নিয়েছে কোনও কোনও থিমে।
প্রাচীন প্রথা মেনে প্রতিমায় সাবেকিয়ানা রেখে, সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে ‘হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনায় নজরুল, অঙ্কনে যামিনী রায়’ ভাবনায় মণ্ডপ সজ্জায় মেতে উঠেছে বোলপুর শুড়িপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। অগ্রগামী সংঘের পরিচালনায় ওই পুজো কমিটি এইবার বাইরের চাকচিক্য এবং প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে কম বাজেটের পুজো আয়োজন করেছে। আয়োজকদের পক্ষে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র চন্দন মণ্ডল বলেন, “পঞ্চাশ বছরের পুজো। মণ্ডপ সজ্জায় থিমের বৈচিত্র লেগেছিল বছর তিনেক আগে। সে বার রবীন্দ্রনাথকে সামনে রেখে ‘কুমোরপাড়া গোরুর গাড়ি’ থিমে মণ্ডপ সজ্জা হয়েছিল। পরের বার সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’ ছিল থিম। এবারের থিম শিল্পী যামিনী রায়ের শিল্প অবলম্বনে মণ্ডপ।” শুড়িপাড়া সর্বজনীন পুজোতে কলস, সরায় স্থানীয় আর্ট স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে শিল্প কর্ম ফুটিয়ে তুলেছেন শিক্ষক রঞ্জন সরকার।
বোলপুরের কালিকাপুরে আদ্যাশক্তি সংঘের পরিচালনায় গোটা ‘অজন্তা ইলোরা’ উঠে এসেছে, তাদের মণ্ডপ সজ্জায়। আদ্যাশক্তি সংঘের পক্ষে অমরনাথ রায় বলেন, “সাবেকি প্রতিমায় প্রাচীন প্রথা মেনে দুর্গা পুজিত হন। মণ্ডপে থার্মকলের কাজে বালি ও রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে অজন্তা এলরার গুহা চিত্র। পরিবেশ বান্ধব মণ্ডপে এবারের আকর্ষণ আলোকসজ্জা।”
সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে মাদুর দিয়ে মন্দির আকৃতির মণ্ডপ সজ্জা করেছে বোলপুরের কাছারীপট্টী যুব সম্প্রদায়ের সর্বজনীন পুজো। উদ্যোক্তাদের পক্ষে রানু মণ্ডল বলেন, “গোটা মণ্ডপটি মাদুর দিয়ে সাজানো হয়েছে। মণ্ডপে রয়েছে বসার জায়গা। নানা রকমের মাদুরের নক্সা দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপের ভিতরের অংশগুলি।” আদিবাসী গ্রামের আদলে, পল্লি, প্রকৃতির দৃশ্য দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়েছে মিশন কম্পাউন্ডের পুজো উদ্যোক্তারা। ক্লাবের সদস্য প্রেমদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বোলপুর অ্যাথলেটিক অ্যান্ড কালচারাল এ্যাসোসিয়েশন সর্বদা পরিবেশ নিয়ে সচেতন। আদিবাসী পল্লি প্রকৃতির পরিচ্ছন ভাবমূর্তি এই বার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপে।”
রাজস্থানের শিস মহলের আদলে জামবুনী সর্বজনীনের মণ্ডপটি সাজানো হয়েছে কাঁচ দিয়ে। উদ্যোক্তাদের পক্ষে তাপস মণ্ডল ও নরেশ চন্দ্র বাউরী বলেন, “দর্শকদের এটি মুখ্য আকর্ষণের কেন্দ্র হবে এই মণ্ডপ।” এখানে লোক নৃত্য ও লোক সঙ্গীতের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি যাত্রানুস্থান রয়েছে। ‘পৃথিবী আজ গভীর সঙ্কটে’ থিমের ওপর মণ্ডপ করে দর্শকদের নজর কেড়েছে বোলপুরের সংগ্রাম সংঘের মাধুপুকুর দক্ষিণপাড় সর্বজনীন পুজো।
চোখ ধাঁধানো থিম পুজোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নজরকাড়া প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছে সাবেকী প্রতিমা ও মণ্ডপের পুজোগুলিও। রেল ময়দান, ভুবনড়াঙা, বাঁধগোড়া, শ্যামবাটি সহ একাধিক জায়গায় দেবী দুর্গা পূজিত হন সাবেকী প্রতিমায়। প্রাচীন সেই প্রথা মেনে সুরুল সরকার বাড়ির পুজোর মত এলাকার একাধিক বাড়ি পুজো আজও চলছে। পুজো ক’দিন এইসব পরিবারের মিলন উৎসবে সামিল হন পরিবারের সকলে।
স্কুলবাগান সর্বজনীন এবার পড়ল ৬৮ বছরে। উদ্যোক্তাদের পক্ষে দেবাসিশ রায়, সুরজিৎ চক্রবর্তী বলেন, মণ্ডপটি ঝিনুক, গুগলি ও মার্বেল পাথর দিয়ে সাজানো হয়েছে। নতুনপল্লি- অধ্যাপক পল্লি এই বার ২৯ বছরে পালন করছে। উদ্যোক্তাদের পক্ষে ছোট্টু তুরি, শান্তনু দাস বিশ্বাসরা বলেন, “প্রায় ৮০০ পরিবার এই পুজোতে সামিল হন এই ক’দিন। ঘরোয়া পরিবেশে কৃষ্ণনগরের প্রতিমা পুজিত হন এই মণ্ডপে। মাটির সাবেকি প্রতিমায় দেবী দুর্গার পিত্তলের অস্ত্রশস্ত্র অন্যতম মুখ্য আকর্ষণ।”
বাড়ির পুজোতেও জাঁক নজরে এল এবার শান্তিনিকেতন এলাকায়। সেন্ট্রাল লন্ডনের রিজেন্ট’স পার্ক এলাকায় নিজের বাসভবনে পুজো ছেড়ে নিষ্ঠার সঙ্গে একযোগে দুর্গা এবং জগধাত্রীর আরাধনা করতে শান্তিনিকেতনে হাজির প্রবাসী বাঙালি বিজ্ঞানী অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়। বিশ্বভারতীর পাঠভবনের এই প্রাক্তনী শান্তিনিকেতনের ‘পথের শেষে’ বাড়িতে শুরু হয়েছে দুর্গা ও জগধাত্রীর আরাধনা। তাঁর বাড়ির পুজোতে রয়েছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। আমেরিকা ইউরোপ, লন্ডনের বিভিন্ন জায়গার কনসার্টের ভায়োলিন বাদক শিল্পী আন্নাকে সুদূর লন্ডন থেকে এসেছেন এই অনুষ্ঠানে। পুজোয় রয়েছে ছোটদের কন্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠানও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy