Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

বই উপহার পেল জেল লাইব্রেরি

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নতুন কোনও বই ঠাঁই পায়নি এই লাইব্রেরিতে। রাজ্য সরকার উদ্যোগী না হলেও লাইব্রেরির সেই করুণ দশা ঘোচাতে এগিয়ে এলেন জেলার সরকারি আইনজীবীই! যাঁর ব্যক্তিগত চেষ্টায় শুক্রবার নেতাজি-জয়ন্তীতে এক লক্ষ টাকার নতুন বই পেয়ে সমৃদ্ধ হল সিউড়ি সংশোধনাগারে বন্দিদের জন্য থাকা প্রায় দুশো বছরের প্রাচীন ওই লাইব্রেরি।

সিউড়ির সংশোধনাগারে দান করা বই ও টিভি।—নিজস্ব চিত্র

সিউড়ির সংশোধনাগারে দান করা বই ও টিভি।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৭
Share: Save:

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নতুন কোনও বই ঠাঁই পায়নি এই লাইব্রেরিতে। রাজ্য সরকার উদ্যোগী না হলেও লাইব্রেরির সেই করুণ দশা ঘোচাতে এগিয়ে এলেন জেলার সরকারি আইনজীবীই! যাঁর ব্যক্তিগত চেষ্টায় শুক্রবার নেতাজি-জয়ন্তীতে এক লক্ষ টাকার নতুন বই পেয়ে সমৃদ্ধ হল সিউড়ি সংশোধনাগারে বন্দিদের জন্য থাকা প্রায় দুশো বছরের প্রাচীন ওই লাইব্রেরি।

কারা দফতর সূত্রের খবর, সাজাপ্রাপ্ত থেকে বিচারাধীন বন্দি সকলের জন্যই সংশোধনাগারে বিভিন্ন রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে। নানা রকম আউটডোর-ইন্ডোর খেলাধুলো, টিভি প্রভৃতির মতোই সেখানে থাকে একটি লাইব্রেরিও। বন্দিদের পড়ার জন্য গল্প-উপন্যাস-কবিতার পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ, এমনকী আইনের বইও থাকে সেই লাইব্রেরিতে। এমনিতে সিউড়িতে প্রথমে একটি মাটির জেলখানা ছিল। ব্রিটিশ শাসকদের উদ্যোগে ১৮১৯ সালে তৈরি হয় ওই সংশোধনাগারের বর্তমান কাঠামোটি। বন্দীদের কথা মাথায় রেখে তখনই নানা বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। আর যাঁরা পড়াশোনা করতে চান, তাঁদের জন্য তৈরি হয় লাইব্রেরি। সে দিক থেকে দেখতে গেলে সিউড়ি সংশোধনাগারের লাইব্রেরিটি বহু প্রাচীন হলেও এতদিন অবধি সেখানে মাত্র ৪৮২টি বই ছিল। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন্দিদের পছন্দ মতো বইয়ের জোগান দিতে পারেন না সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। সংশোধনাগারের বর্তমান কর্তৃপক্ষের দাবি, ষাটের দশকের পরে ওই লাইব্রেরির জন্য আর কোনও বই কেনা হয়নি। তাই ষাটের দশকের পর থেকে বর্তমান সময় এই বিশাল সময়পর্বের কোনও বই-ই বর্তমানে সিউড়ি সংশোধনাগারের লাইব্রেরির সংগ্রহে নেই। যার জেরে দীর্ঘ দিন ধরেই বিড়ম্বনায় ভুগছিলেন তাঁরা। জেলার সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন লাইব্রেরির জন্য অজস্র নতুন বই উপহার দিয়ে সেই বিড়ম্বনা থেকেই বাঁচালেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

সিউড়ি সংশোধনাগার সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিউড়ি সংশোধনাগারে ৯৭ জন সাজাপ্রাপ্ত এবং ১৮০ জন বিচারাধীন বন্দি আছেন। দুই ধরনের বন্দিদের জন্য পৃথক দু’টি ভলিবল খেলার মাঠ আছে। এ ছাড়া ফুটবল, ক্রিকেট, তাস, লুডো, দাবা প্রভৃতি খেলার বন্দোবস্তও রয়েছে। পাশাপাশি বিচারাধীন বন্দিদের পাঁচটি, সাজাপ্রাপ্তদের একটি, মহিলাদের একটি মিলিয়ে সাতটি ওয়ার্ডে মোট সাতটি টিভি রয়েছে। একটি টিভি রয়েছে জেল হাসপাতালেও। সেই সঙ্গে বন্দিরা খবরের কাগজ পড়া সুযোগও পান। বন্দিদের অনেকেই অবসর সময়ে ননা রকমের বই পড়তে চান। তা ছাড়া প্রতি বছর ওই সংশোধনাগারের বহু বন্দি নানা পরীক্ষায় বসেন। এ বছরই যেমন সাজাপ্রাপ্ত পাঁচ বন্দি মাধ্যমিক দেবেন। ছ’জন বসবেন উচ্চমাধ্যমিকে। আবার নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পরীক্ষায় বসবেন এক বন্দি। কিন্তু, জেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রয়োজন মতো বই জোগান দিতে পারেন না। কারণ, তাঁদের লাইব্রেরির ভাঁড়ারে অধিকাংশ বই-ই থাকে না।

মুশকিল আসানের জন্য এগিয়ে দিলেন রণজিৎবাবু। সিউড়ি সংশোধনাগারের ওয়েলফেয়ার অফিসার শুভদীপ মুখোপাধ্যায় এবং সুপার সরোজকুমার ঘোষ বলছেন, “মনোরঞ্জনের জন্য যত কিছুই থাকুক না কেন, বইয়ের বিকল্প খুব কমই আছে। বন্দিদের মধ্যে যাঁরা বইপ্রেমী, তাঁরা আর অন্য কোনও কিছুতে সন্তুষ্ট হতে পারেন না। কিন্তু, আমাদের সংশোধনাগারে বইয়ের সংখ্যা খুব সামান্যই। তা-ও আবার ষাটের দশকের। কার্যত ষাটের দশকের পরের কোনও বই আমাদের সংশোধনাগারে নেই। সে আইনেরই হোক বা সাধারণ গল্প, উপন্যাস, কবিতার বই।” তাই সম্প্রতি রণজিৎবাবুকে তাঁরা লাইব্রেরির জন্য কিছু বই দেওয়ার অনুরোধ করেন। এক কথায় রাজি হয়ে যান জেলার সরকারি আইনজীবী। এ দিন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন উপলক্ষে সংশোধনাগারের মধ্যেই তিনি একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বইগুলি তুলে দিলেন। অনুষ্ঠানের পরে রণজিতবাবু বলেন, “কিছু শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সহযোগিতায় প্রায় এক লক্ষ টাকার বই কেনা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে দ্বিভাষিক (ইংরেজি ও বাংলা) আইনের বিভিন্ন বই। এ ছাড়া রয়েছে মহাশ্বেতা ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ রায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচনাসমগ্র, লীলা মজুমদার রচনা সমগ্র, অবনী দাস (জিম কর্বেট), বুদ্ধদেব গুহ, স্বামী বিবেকানন্দের ১৬ খণ্ড প্রভৃতি বই।” পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে গীতা, মহাভারত, বেদ, বাইবেল, কোরানের মতো ধর্মীয় গ্রন্থও। এ দিনের অনুষ্ঠানে জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী, পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া, সংশোধনাগারের জেলার অসিতবরণ নস্কর প্রমুখ যোগ দিয়েছিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

prison library siuri library book
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy