অনুব্রত মণ্ডলের খাসতালুকে এক তৃণমূল নেতাকে খুনের চেষ্টার মামলায় জামিন হয়ে গেল পাড়ুইয়ের বিজেপি নেতা নিমাই দাসের!
ধরা পড়ার ৫৩ দিনের মাথায় জামিন পেলেন নিমাইবাবু (এক সময়কার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা)। বুধবার, বোলপুর অতিরিক্ত দায়রা ও জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। সরকারি আইনজীবী তপন দে বলেন, “নিমাইবাবুর বিরুদ্ধে একটি খুনের চেষ্টার অভিযোগের মামলা ছিল। অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর জামিন মঞ্জুর না করায়, অতিরিক্ত দায়রা জেলা জজের কাছে উনি জামিনের আবেদন করেন। ৫৩ দিনের মাথায় ৫০০০ টাকার বন্ডে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেছেন।”
যে পাড়ুই আজ শাসকদলের গলার কাঁটা, সেখানে বিজেপি-র সংগঠন বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন নিমাই দাস। বিজেপির অভিযোগ, নিমাইবাবুর এই অতিসক্রিয়তার কারণেই তাঁকে ফাঁসানো হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন এলাকার তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি শিবপদ ঘোষ। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম শিবপদবাবুকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর ছেলে ওই রাতেই বোলপুর থানায় ১১ জন বিজেপি নেতা-কর্মীর নামে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তদের তালিকায় প্রথম নামটিই ছিল নিমাই দাসের। ২৮ তারিখ সন্ধ্যায় পাড়ুইয়ের বাঁধনবগ্রামে নিজের বাড়ি থেকে নিমাইবাবুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। আদালতে হাজির করানো হলে বোলপুরের এসিজেএম ধৃতকে এক মাস জেল হাজতের নির্দেশ দেন।
এ দিন জামিনে মুক্ত হয়ে এই বিজেপি নেতা বলেন, “আমার বিরুদ্ধে বোলপুর (৪টি), ইলামবাজার(১টি) ও পাড়ুই(৩টি) থানা মিলিয়ে আটটি মিথ্যে মামলা দায়ের হয়েছিল। যার অধিকাংশতেই আমি জামিন পেয়েছিলাম। শুধুমাত্র সর্পলেহনা-আলবাঁধা পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি শিবপদ ঘোষকে মারধরের যে মিথ্যে মামলাটি হয়, সেটিতে এতদিন পরে আজ জামিন হল।” নিমাই দাসের জামিনের খবর শুনে কিন্তু অস্বস্তির ছায়া পড়েছে তৃণমূল শিবিরে। পাড়ুই অঞ্চলে এমনিতেই এখন শাসকদলকে সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে বিজেপি। এই অবস্থায় নিমাইবাবুর জামিন হওয়ায় এলাকার বিজেপি কর্মীদের মনোবল আরও চাঙ্গা করতে তুলবে। আর তাতেই প্রমাদ গুনছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
কিন্তু, কেন এই ভয়?
গত পঞ্চায়েত ভোট থেকেই বোলপুর ব্লকের কসবা-সহ ৯টি পঞ্চায়েত এলাকায় নিমাই দাস, নিখিল ঘোষ, নারায়ণ ভাণ্ডারী, বিকাশ মণ্ডল, হৃদয় ঘোষদের মতো কয়েক জনের নেতৃত্বেই একজোট হন এলাকার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তবে, একমাত্র কসবাতেই তাঁরা অনুব্রত-অনুগামীদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে পেরেছিলেন। ওই সময়ও নিমাইবাবুদের নামে পরের পর মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দল ও পুলিশের বিরুদ্ধে। এত কিছুর পরেও নিমাইবাবুরাই কসবা পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়েছেন। এই গ্রামেই গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে খুন হয়েছিলেন সে সময়ের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী (অধুনা নিমাইবাবুর সঙ্গে বিজেপি-তে নাম লেখানো) হৃদয় ঘোষের বৃদ্ধ বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষ। এবং পাড়ুই-কাণ্ডে প্রথম দিন থেকেই নিমাইবাবু হৃদয় ঘোষদের পাশে থেকেছেন। সেই আক্রোশ থেকেই তাঁর স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছিল বলে এ দিনও অভিযোগ করেছেন নিমাইবাবুর স্ত্রী তথা স্থানীয় কসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শঙ্করী দাস।
এ হেন বিজেপি নেতার জামিন মঞ্জুরের খবর প্রত্যাশিত ভাবেই অস্বস্তি বাড়িয়েছে জেলা তৃণমূলে। পাড়ুইয়ের দায়িত্বে থাকা শাসকদলের নেতা মুস্তাক হোসেন এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘এত দিন কসবা এলাকা শান্ত ছিল। এখন মানুষকে উত্তেজিত করে ফের এলাকায় গণ্ডগোল পাকাবে বিজেপি।” নিমাই দাসের জামিনের খবরে জেলা তৃণমূলের আর এক নেতার দাবি, “এ বার পাড়ুইয়ের সাত্তোর-কসবা অঞ্চলে অশান্তি বাড়বে। বিজেপি যে ভাবে গ্রামে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে, তাতে নিমাই দাসের জামিনে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াবে।”
এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি-র জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল এ দিন বলেন, “নিমাইবাবু আসলে শাসক দলের টার্গেট ছিলেন। মিথ্যে মামলায় তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ ভাবে অনুব্রত মণ্ডল বিজেপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ফাঁসিয়ে আমাদের সংগঠনের কাজে বাধা দিতে পারবেন না।” বিজেপি-র বোলপুর ব্লক সভাপতি বলাই চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নিমাইদা জামিন পাওয়ায় এলাকায় বিজেপির সংগঠনের কাজ করা আরও মজবুত হল। বৃহস্পতিবার সিউড়িতে আইন অমান্য আন্দোলনে উনি আমাদের সঙ্গে যাবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy