Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪

দোষীদের শাস্তি চেয়ে জ্বলল মোমবাতি

রাতের রাস্তায় পড়ে থাকা তার জড়িয়ে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই কিশোরের মৃত্যুর পরে ক্ষোভে ফুঁসছে মানবাজারের গোপালনগর। বিদ্যুৎ দফতরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল শুক্রবার রাতে ঘটনার পরেই। বাসিন্দারা দেহ দু’টি আটকে বিক্ষোভ দেখান। শনিবারও সে ক্ষোভ কমেনি। রবিবার বিকেলে গোপালনগর পঞ্চায়েত অফিসে ব্লক ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা গিয়ে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার আধিকারিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠকে বসলেন।

রাস্তায় বিদ্যুতের পড়ে থাকা তার জড়িয়ে মৃত দুই ভাই রাহুল ও সৌমেনের স্মরণসভা। মানবাজারের গোপালনগরে রবিবার সমীর দত্তের তোলা ছবি।

রাস্তায় বিদ্যুতের পড়ে থাকা তার জড়িয়ে মৃত দুই ভাই রাহুল ও সৌমেনের স্মরণসভা। মানবাজারের গোপালনগরে রবিবার সমীর দত্তের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

রাতের রাস্তায় পড়ে থাকা তার জড়িয়ে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই কিশোরের মৃত্যুর পরে ক্ষোভে ফুঁসছে মানবাজারের গোপালনগর। বিদ্যুৎ দফতরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল শুক্রবার রাতে ঘটনার পরেই। বাসিন্দারা দেহ দু’টি আটকে বিক্ষোভ দেখান। শনিবারও সে ক্ষোভ কমেনি। রবিবার বিকেলে গোপালনগর পঞ্চায়েত অফিসে ব্লক ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা গিয়ে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার আধিকারিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠকে বসলেন।

মানবাজার ১ বিডিও সায়ক দেব বলেন, “বাসিন্দারা মূলত বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কর্তাদের সাথেই কথা বলেছেন। দু’টি পরিবারকে তাঁরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ, চাকরি ও বিদ্যুত বন্টন সংস্থার যে কর্মীদের গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা, তাঁদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।” বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার পুরুলিয়ার ডিভিশনাল ম্যানেজার দয়াময় সেন বাসিন্দাদের জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে রাজ্যস্তরে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি কলকাতায় রিপোর্ট জমা করার পরে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারিত হবে। তবে চাকরি বা অভিযুক্ত বিদ্যুৎ কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে তিনি কিছু স্পষ্ট করে জানাননি। দু’সপ্তাহ পরে এই ঘটনা নিয়ে ফের বৈঠকে বসা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এই বৈঠকে সন্তুষ্ট নয় স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের মধ্যে বুলেট চক্রবর্তী, মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, মলয় মাহাতো বলেন, “বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার জেলা আধিকারিকরা আমাদের প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেন নি। দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলনে নামব।”

শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ গোপালনগরের দুই কিশোর (সম্পর্কে জ্যাঠতুতো ও খুড়তুতো ভাই) রাহুল কর্মকার (১৭) ও সৌমেন কর্মকার (১৬) মোটরবাইকে চড়ে দুই কিলোমিটার দূরে মেটালা গ্রামে কালীপূজোর প্রসাদ খেতে এখ আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিল। রাস্তায় একটি ডুংরি পেরোনোর সময় একটি খুঁটি থেকে খুলে যাওয়া বিদ্যুতের তার আড়াআড়ি ভাবে রাস্তার উপরে ঝুলছিল। ওই তারে জড়িয়ে ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়।

রাহুল মেধাবী ছাত্র হিসাবে এলাকায় পরিচিত। বাঁকুড়ার কমলপুর হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে সে পড়ত। রাহুলের বাবা মুরুলি কর্মকারের গোপালনগরে একটি মোটরবাইক সারানোর গ্যারাজ রয়েছে। কাকার সেই গ্যারাজে কাজ শিখছিল সৌমেন।

গোপালনগরের বাসিন্দা প্রাথমিক শিক্ষক বুলেট চক্রবর্তী, হাইস্কুলের শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার গাফিলতিতেই দু’টি প্রাণ অকালে চলে গেল। জেলা প্রশাসন ও বিদ্যুৎ সংস্থার পক্ষ থেকে ওই দু’টি পরিবারকে আর্থিক সাহায্য, পরিবারের এক সদস্যকে চাকরি এবং যাদের গাফিলতির জন্য দু’টি প্রাণ চলে গেল তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। শনিবার জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো, মানবাজারের বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতদের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানান। সৃষ্টিধরবাবু বলেন, “কী ভাবে ওই দুই পরিবারকে সাহায্য করা যায় দেখছি।”

এই ঘটনার পরে শনিবার রাহুল-সৌমেনের পরিবারে ভাইফোঁটার সকালে বিষাদ নেমে আসে। এলাকাতেও কার্যত ভাইফোঁটার উৎসবে প্রাণ ছিল না। রাহুলের পাঁচ বোন এবং সৌমেনের চার বোন। মুরুলিবাবুর স্ত্রী বন্দনাদেবী ঘন ঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন। এই সময়টা এলাকায় গরুখুটা, কাঁড়াখুটা ও বাদনা পরব চলে। বাসিন্দারা জানান, শোকের আবহে গোপালনগরের পাশাপাশি মেটালা, জামগড়িয়া, চাপাতি, স্বরূপডি প্রভৃতি গ্রামে ওই সব উৎসব কার্যত বাতিল করা হয়েছে।

রবিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কর্মীরা মেটালা যাওয়ার রাস্তায় মেরামতি করে ও নতুন খুঁটি বসানোর তোড়জোড় করছেন। মেটালা গ্রামের বাসিন্দা হানিফ আনসারি অভিযোগ করেন, “আগেও এই জায়গাতেই বিদ্যুতের তার পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। মাঝেমধ্যেই শর্টসার্কিট হয়ে আগুন জ্বলে ওঠে। একবার গরুর গাড়িতে খড় নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে আগুন ধরে গিয়েছিল। এক ব্যাক্তি মারা যান। একবার দু’টি গরু বিদ্যুৎবাহী তারে জড়িয়ে মারা যায়। জোড়াতালি দিয়ে কাজ সারার জন্যই বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে।”

এ দিন সন্ধ্যায় দুই কিশোরের আত্মার শান্তি কামনায় বাসিন্দারা গোপালনগর বাজারে মোমবাতি জ্বালিয়ে মৌনীমিছিল করেন। প্লাকার্ডে দোষীদের শাস্তির দাবি তোলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE