—ফাইল চিত্র।
এত অবরোধ কেন হয়—এ রাজ্যের অনেক বাসিন্দার কাছে তা একটা ধন্দ। খোঁজ নিলে দেখা যায়, কোথাও বেহাল রাস্তায় ঠোক্কর খেয়ে, রাস্তার কারণে দুর্ঘটনায় এবং প্রাণহানিতে ক্ষুব্ধ হয়ে অবরোধ করেছে জনতা। আবার কোথাও দিনের পর দিন বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জল না পেয়ে অবরোধের ঘটনাও বিরল নয়। রাস্তা সারানো হয়েছে। কিন্তু কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তা-ও অনেক সময় অসন্তোষ-অবরোধের কারণ।
ঘটনাচক্রে, রাস্তা সারানোর কাজের ‘মান’ দেখে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তৃণমূলেরই বিধায়ক! সম্প্রতি বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের কাছে, বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়কের সারাইয়ের কাজ দেখে তালড্যাংরার বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘অল্প একটু গর্ত খুঁড়ে পাথর দিয়ে বোজানো হচ্ছে! এ ভাবে কাজ করলে দ্রুত রাস্তা নষ্ট হবে।’’ বিধায়কের অভিযোগ পেয়ে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। পূর্ত দফতর অভিযোগ না মানলেও প্রশাসনের নজরদারিতে মেটে সে কাজ।
রাস্তা, জল এবং বিদ্যুৎ— পরিকাঠামোর অন্যতম প্রধান তিন শর্তের নিরিখে রাজ্য এ মুহূর্তে কোথায় দাঁড়িয়ে, তা নিয়ে নানা জেলায় প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিকেরা। তবে রাজ্যের মন্ত্রীদের দাবি, সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। হবেও।
তৃণমূল সরকারের তৃতীয় পর্বের প্রথম মাস পাঁচেকে দেখা যাচ্ছে, আলিপুরদুয়ারে রাস্তা সংস্কারের কাজ কুড়ি শতাংশ হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরে ৫২টি রাস্তার সংস্কার হচ্ছে। মালদহে রাস্তার কাজ বর্ষার জন্য বন্ধ ছিল। এখন জোরকদমে চলছে। এ ছাড়া, ১০০ দিনের প্রকল্পে প্রচুর ঢালাই রাস্তা হয়েছে। আবার অভিযোগ, হুগলিতে রাজ্য সড়ক-সহ বিভিন্ন বেহাল রাস্তায় জোড়াতালি দেওয়া ছাড়া, নতুন করে কোনও রাস্তা পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের অনুমোদন মেলেনি। পশ্চিম মেদিনীপুরে আটশোর বেশি রাস্তা সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। ঝাড়গ্রাম, মুর্শিদাবাদে বহু গ্রামীণ রাস্তা বেহাল। নদিয়ার কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়ক, চাকদহ-কল্যাণীর মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সড়ক বেহাল বলে অভিযোগ। পূর্ত দফতরের কর্তাদের দাবি, লাগাতার বৃষ্টিতে রাস্তা সারানোর কাজে ‘প্রত্যাশিত’ গতি আসছে না। রাস্তা সারানোর কাজের মান নিয়ে মন্তব্য না করে রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেছেন, ‘‘যেখানে রাস্তা খারাপ হচ্ছে, সারানো হচ্ছে। সারানো হবে।’’
পরিকাঠামো কোন পথে
প্রতিশ্রুতি
পদক্ষেপ
সামনে প্রশ্ন
রাস্তা বেহাল হওয়ার পিছনে অনেকে পণ্যবাহী গাড়িতে বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণের প্রবণতাকে (ওভারলোডিং) দায়ী করেন। পূর্ব বর্ধমানের গলসির বহু বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘বালি বোঝাই ভারী ট্রাকের জন্য রাস্তাগুলো চলাচলের যোগ্য নেই।’’ পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, ‘ওভারলোডিং’-এর জরিমানা অনেকটা বাড়ানো হয়েছে। চেকপয়েন্টে গাড়ি যাতে পালাতে না-পারে, তেমন ব্যবস্থা হয়েছে। ওভারলোডিং বন্ধ করতে কড়া মনোভাব নিচ্ছে রাজ্য।
লোডশেডিংয়ে নাজেহাল মুর্শিদাবাদের ডোমকল, নওদা, হরিহরপাড়া, ঝাড়গ্রামের, পূর্ব বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। গত সোমবার নদিয়ার হাঁসখালির চিত্রশালী সাব-স্টেশনে টানা লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। অবরোধও করেন। হাঁসখালির কোনও কোনও এলাকায় লো-ভোল্টেজ বাসিন্দাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রানাঘাট মহকুমায়, করিমপুরের বাংলাদেশ লাগোয়া শিকারপুর এলাকাতেও বেশ কিছু জায়গায় লো-ভোল্টেজ ও লোডশেডিং বেড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কোচবিহারে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া কিছু জায়গায়, উত্তর দিনাজপুরে ইসলামপুর মহকুমার কিছু এলাকায়, আলিপুরদুয়ারের কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি বলে দাবি স্থানীয় সূত্রের।
বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের অবশ্য দাবি, রাজ্যে ১০০ শতাংশ বিদ্যুদয়ন হয়েছে। লো-ভোল্টেজের সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। মন্ত্রীর সংযোজন, বিদ্যুৎ পরিষেবা আরও উন্নত করতে সরকার গঠনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় নানা পদক্ষেপ করেছে দফতর। যেমন মে থেকে অগস্ট পর্যন্ত রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ছ’টি নতুন সাব-স্টেশন তৈরি করেছে। ৫,৩৬৭টি নতুন ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছে। এর পরের হিসেব পুজোর ছুটির পরে, দফতর খুললে মিলবে। কিছু পুরনো সাব-স্টেশন ও ট্রান্সফরমারের ক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রীর দাবি, কয়লার সমস্যাকে ঘিরে সম্প্রতি দেশের নানা জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হলেও পুজোর সময়ের বাড়তি চাহিদা নির্বিঘ্নেই মিটিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, বিভিন্ন সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলে। যেখানে যখন কাজ হয়, তার আগে এলাকায় সাময়িক বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখার কথা মাইকে প্রচার করা হয়।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের শুরু থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যের মোট ২৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৯১টি বাড়িতে নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া গিয়েছে। রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি এবং পুজোর মরসুম থাকলেও ১ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৯৫ হাজার জলের সংযোগ দিতে পেরেছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। হুগলিতে সাড়ে সাত লক্ষের মধ্যে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার বাড়িতে জল সংযোগ হয়েছে। প্রশাসনের হিসেবে ১০০ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ করতে ৬০টি পুরনো প্রকল্পের আমূল সংস্কার-সহ নতুন আরও ১১৭টি জল প্রকল্প করতে হবে। তবে সে কাজ মিটতে কত সময় লাগবে, তা জানা যায়নি। হাওড়ায় ১৫৭টি পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশেই নলবাহিত পানীয় জল যায়নি। পশ্চিম বর্ধমানে লক্ষ্যমাত্রার নিরিখে প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ১৫ শতাংশ। এখনও বীরভূমের বড় অংশে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছয়নি। ঝাড়গ্রামের ওড়লি গ্রামের বাদল মাহাতোর ক্ষোভ, ‘‘গরমকালে টিউবওয়েলে জল পড়ে না। খালের জল ছেঁকে খেতে হয়।’’
তবে নবান্ন সূত্রের দাবি, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে, ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পটিকে অগ্রাধিকারের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে গোটা রাজ্যে এই প্রকল্পের বিস্তারিত প্রকল্প রূপরেখা (ডিপিআর) তৈরির চেষ্টা চলছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরিমন্ত্রী পুলক রায়ের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পের অগ্রগতিতে নজর রাখছেন। আমরা চাইছি, এ বছর অন্তত এক কোটি পরিবারে জলের সংযোগ পৌঁছে দিতে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy