প্রবল বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে রাস্তা। কালিম্পঙের গরুবাথানে। নিজস্ব চিত্র
সোমবার রাত থেকে যে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছিল, বুধবার দুপুর থেকে তা সামান্য থিতিয়ে যায়। মেঘ গর্জন কমে এবং বৃষ্টিও একটু ধরে আসে। ফলে মঙ্গলবার রাতভর পাহাড় এবং সংলগ্ন ডুয়ার্স এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, কিছুটা হলেও তা কমেছে। যদিও তিস্তা-সহ নদীগুলিতে এখনও প্রবল স্রোত এবং জল বিপদসীমার কাছাকাছিই বইছে। তবে আর বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছে প্রশাসন। একই ভাবে দার্জিলিং, কালিম্পং জেলা ও পড়শি রাজ্য সিকিমে যে কয়েক হাজার পর্যটক আটকে আছেন, তাঁদের জন্যও বৃষ্টি কমে আসা স্বস্তির খবর। সন্ধ্যার ঠিক মুখে সিকিম-শিলিগুড়ি ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধসে বিধ্বস্ত অংশগুলিতে একমুখী গাড়ি চলাচলও শুরু করা গিয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি। তাতে প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে সমতল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা কালিম্পং ও সিকিমের সঙ্গে ক্ষীণ যোগাযোগ শুরু হয়েছে। তবে ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কে এখনও বেশ কয়েকটি জায়গা বন্ধ। রাতে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে নতুন ধসের খবর মিলেছে।
দেড় দিনের এই দুর্যোগে একাধিক প্রাণহানির খবর মিলেছে। মালদহের বাসিন্দা দেবরাজ রায় (৪৯) সিকিমে বেড়াতে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতে দুর্যোগের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এ দিন দার্জিলিং সদরের মহকুমাশাসকের বাংলোর পিছনে ধস নামে। সেখানে এক হোমগার্ড নিখোঁজ বলে খবর। অন্য দিকে, আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁ-এ তোর্সা নদীর স্রোতে ভেসে যায় দুই শিশুকন্যা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কালিম্পং জেলায় পাহাড় পথে ধস নেমেছিল ৪৬টি এলাকায়। এ দিন সন্ধ্যায় মূল সমস্যা থেকে গিয়েছে ১০ নং জাতীয় সড়কের শ্বেতীঝোড়া থেকে লিকুভিড় অবধি। এই অঞ্চলে পাঁচটি এলাকায় বড় ধস সরানোর কাজ চলছে। আপাতত সিকিম এবং কালিম্পং থেকে রবিঝোরা, তিস্তাবাজার, পেশক রোড, জোরবাংলো হয়ে কার্শিয়াং আসার রাস্তাটি খুলেছে। তবে পথ এখনও বিপজ্জনক। তাই গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে পুলিশ। শিলিগুড়ি থেকে কলকাতাগামী ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের মাটিগাড়ায় বালাসন সেতু জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই সেতুটি বন্ধ রেখে এশিয়ান হাইওয়ে হয়ে সব গাড়ি যাতায়াত করছে।
উত্তরাখণ্ডে যে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় হচ্ছে, সে দিকে নজর রেখে উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের পর্যটকেরা মঙ্গলবার রাত কাঁটা হয়ে বসেছিলেন। গ্যাংটক থেকে একাধিক পর্যটক জানিয়েছেন, এ দিন নামতে না পারায় তাঁদের ট্রেনের টিকিট বাতিল করতে হয়েছে। ক্যানিংয়ের সুরেশ গুপ্তরা পাঁচ জন মিলে গ্যাংটকে গিয়েছিলেন। তাঁরাও নামতে পারেননি। হাওড়ার বাসিন্দা স্মরজিৎ রায়চৌধুরীরা তাঁদের সিকিম ও কোলাখাম ভ্রমণ মাঝপথে শেষ করে শিলিগুড়ি ফিরতে চাইছেন।
লাভা হয়ে রিশিখোলার দিকে রওনা দিয়েছিলেন মালবাজারের সুমন্ত বসু। ধসে মঙ্গলবার সারা রাত তাঁদের রাস্তায় আটকে থাকতে হয়। পরে সুমন্ত বলেন, ‘‘যে কোনও সময়ে
মাথায় পাথর ধসে পড়তে পারে। এমন একটা আশঙ্কা নিয়ে ভয়ে কাঁটা হয়েছিলাম।’’ একই সঙ্গে সকলের অভিযোগ, দুর্যোগে যেটুকু গাড়ি চলছে, তাদের দর অত্যন্ত চড়া।
বুধবার বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় অবশ্য বিকেল থেকে পরিস্থিতি শোধরাতে শুরু করে। আশা করা যাচ্ছে, রাস্তাগুলির ধস দ্রুত সারানো সম্ভব হবে। টয় ট্রেনের পথে একাধিক জায়গায় ধস নেমেছে। সেগুলিও সারানো যাবে। তিস্তাবাজারের
কাছে ত্রিবেণীতে নদীর জল রাস্তুায় উঠে এসেছিল। তা-ও নেমে গিয়েছে। গজলডোবা ব্যারাজের লকগেটগুলি খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের দিকে তিস্তায় জল বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু জলপাইগুড়ি শহরের এই মুহূর্তে বিপদ নেই বলেই প্রশাসনের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy