স্বামী আত্মস্থানন্দ মহারাজের জন্মশতবর্ষ পালন অনুষ্ঠানে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করলেন রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দ। রবিবার নজরুল মঞ্চে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
হাসপাতালের শয্যায় অসুস্থ সন্ন্যাসী। ভিভিআইপি অতিথি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেম ছো মহারাজ?’ (কেমন আছেন মহারাজ) উত্তর এল, ‘সারু, সারু’ (ভাল, ভাল)। সালটা ২০১৫। গুজরাতিতে এই বার্তাবিনিময় স্বামী আত্মস্থানন্দ আর নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পঞ্চদশ অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দের জন্মশতবর্ষ পালন অনুষ্ঠানে, ভিডিয়ো বার্তায় ‘গুরু’র সঙ্গে গুজরাতি ভাষায় কথোপকথনের সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, “উনি খুব ভাল গুজরাতি বলতেন। আমার সৌভাগ্য, জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আমার সঙ্গে গুজরাতিতেই কথা বলেছেন। এখনও মনে করি, তিনি আমায় আশীর্বাদ করছেন।” গুজরাতের ভূমিকম্পে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কাজ এবং তাতে স্বামী আত্মস্থানন্দের বিশিষ্ট ভূমিকা ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিত্বের নানা দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীরা দেশে রাষ্ট্রীয় একতার রূপ।” রামকৃষ্ণ ভাবধারার আদর্শকে স্বামী আত্মস্থানন্দ তাঁর কাজ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির মধ্য দিয়ে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, রবিবার প্রায় সকলেই তা তুলে ধরেন নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখিত বার্তায় জানান, স্বামী আত্মস্থানন্দ ছিলেন এমন এক আসাধারণ ব্যক্তিত্ব, যাঁর মধ্যে দু’টি মহান গুণ দেখা গিয়েছে। তিনি ছিলেন সন্ন্যাসীর সন্ন্যাসী এবং নেতারও নেতা।
এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দ জানান, শ্রী রামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ ‘মানুষের মধ্যে ভগবানের সেবা’র প্রতি প্রবল একাগ্রতা ছিল স্বামী আত্মস্থানন্দের। তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিকের বিবরণ সংবলিত দু’টি গ্রন্থ— বাংলায় ‘পুণ্যব্রতে পূর্ণযোগী’ এবং ইংরেজিতে ‘স্বামী আত্মস্থানন্দ আ গ্লোরিয়ার্স লাইফ’ এবং পেন ড্রাইভ,স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করেন স্বামী স্মরণানন্দ। উপস্থিত ছিলেন লোকপালের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ-সহ বহু প্রবীণ সন্ন্যাসী। জন্মশতবর্ষ কমিটির সভাপতি জয়ন্ত রায় বলেন, “স্বামী আত্মস্থানন্দের জন্মের শতবর্ষ হয়েছে ২০১৯ সালে। কিন্তু অতিমারির কারণে তখন তা উদ্যাপন করা সম্ভব হয়নি। তাই এখন করা হল। বছর শেষে সমাপ্তি অনুষ্ঠান করা হবে।”
ব্যক্তি নয়, ব্যক্তিত্বকে, তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে গ্রহণ করাই স্বাভাবিক ভাবে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের ঐতিহ্য বলেও এ দিন মনে করিয়ে দেন স্বামী সুবীরানন্দ। তিনি জানান, রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের প্রেক্ষিতে এমন অনুষ্ঠান উদ্যাপনের দু’টি দিক আছে। প্রথমটি হল সাধনাপূত মহিমময় একটি জীবনের অনুধ্যান, যা অবশ্যই ভক্তের কল্যাণ করবে। দ্বিতীয় দিকটিও তাৎপর্যপূর্ণ। রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে শ্রী রামকৃষ্ণ,মা সারদা, স্বামী বিবেকানন্দ এবং তাঁর গুরুভ্রাতা ছাড়া অন্য কাউকে কেন্দ্র করে কোনও ব্যক্তিপুজোকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। সুবীরানন্দ মহারাজ বলেন, “ব্যক্তির পুজো করব না, ব্যক্তিত্বের পুজো করব। এই অনুষ্ঠান উদ্যাপনের মাধ্যমে ব্যক্তি স্বামী আত্মস্থানন্দকে স্মরণ-মনন নিশ্চয় করব আমরা, কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্বের গুণাবলিকে নিজের জীবনে প্রতিফলিত করে মানবসেবায় এবং সমাজকল্যাণে তা বেশি করে কাজে লাগাতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy