Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
haldia

ঘনিষ্ঠ ভিডিয়ো দিয়ে ব্ল্যাকমেল করতে গিয়েই কি খুন হতে হল মা-মেয়েকে? হলদিয়ার জোড়া খুনে উঠে এল নয়া তথ্য

১৮ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা হলদিয়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিকুরখালি এলাকায় হলদি নদীর পাড়ে এক নির্জন জায়গায় দু’টি দেহ জ্বলতে দেখেন এলাকার মানুষ।

মৃত রিয়া দে ও রমা দে-র সঙ্গে অভিযুক্ত সাদ্দাম। ছবি: ফেসবুক পেজ থেকে।

মৃত রিয়া দে ও রমা দে-র সঙ্গে অভিযুক্ত সাদ্দাম। ছবি: ফেসবুক পেজ থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:১০
Share: Save:

কুড়ি লাখ টাকার দাবি মেটাতে না পেরেই কি খুন? হলদিয়া জোড়া খুনের তদন্তে নেমে এমনটাই সন্দেহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের।

পুলিশ সূত্রে খবর, শেখ সাদ্দাম হোসেনের কাছে ২০ লাখ টাকা চেয়েছিলেন রমা দে এবং রিয়া দে। জেরায় তদন্তকারীদের এমনটাই জানিয়েছে সাদ্দাম। সেই টাকা না দিলে, সাদ্দামের বেশ কিছু ব্যক্তিগত ছবি এবং ভিডিয়ো তাঁর পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি করেছে সাদ্দাম। এক তদন্তকারী আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা সাদ্দামকে জেরা করে পাওয়া তথ্য খতিয়ে দেখছি। সে আদৌ সত্যি কথা বলছে কি না তা-ও দেখা হচ্ছে।”

১৮ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা হলদিয়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিকুরখালি এলাকায় হলদি নদীর পাড়ে এক নির্জন জায়গায় দু’টি দেহ জ্বলতে দেখেন এলাকার মানুষ। স্থানীয়রাই আগুন নিভিয়ে পুলিশকে খবর দেন। কিন্তু দু’টি দেহ এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে তা শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। জেলা পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দেহ দু’টির ময়নাতদন্ত হওয়ার পরেই জানা যায় জীবিত অবস্থায় পোড়ানো হয়েছিল ওই দু’জনকে। তার পরেই ওই হত্যা রহস্যের কিনারা করার জন্য ১৩ সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়।”

আরও পড়ুন: ভাঙড়ে গভীর রাতে ডাকাতদের তাণ্ডব, রডের আঘাতে খুন নিরাপত্তারক্ষী, পুলিশকেও মারধরের অভিযোগ

সেই বিশেষ দলই এখনও তদন্ত করছে। তদন্তকারীদের একটি দল শনিবার দুপুরে প্রথম পৌঁছয় রমা এবং রিয়াদের নিউ ব্যারাকপুরের ভাড়াবাড়িতে। তারা গিয়ে দেখে, বাড়ি তালাবন্ধ। বাড়ির মালিক সন্ধ্যা দাশগুপ্ত সোমবার বলেন, ‘‘পুলিশ আমাকে কয়েকটি ছবি দেখায়। সেখান থেকে আমি মা-মেয়েকে শনাক্ত করি।” নিউ ব্যারাকপুর কালীবাড়ির কাছে নরেশ চন্দ্র সরণিতে এই ভাড়াবাড়িতে প্রায় আড়াই বছর ধরে ভাড়া থাকতেন রমা এবং রিয়া। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, রমা বিবাহবিচ্ছিন্না। তাঁর নিজের বাড়িও নিউ ব্যারাকপুর এলাকাতেই। কিন্তু নিজের পরিবারের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না রমার। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, নিউ ব্যারাকপুরের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন রিয়া। এলাকায় সে উর্বি নামেও পরিচিত।

মৃত রমা দে ও রিয়া দে।

স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে রমার পেশা সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতে পারেননি। অলোকেশ ভট্টাচার্য নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা এ দিন বলেন, ‘‘মেয়েটিকে প্রায়ই সন্ধ্যায় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিলপাড়ে আড্ডা মারতে দেখতাম। ঘটনার পর অনেক ধরনের তথ্য সামনে এসেছে। তবে, যে ভাবে ওই দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে তার জন্য দোষীদের কঠোরতম শাস্তি হওয়া উচিত।”

তদন্তকারীদের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ার মারফতেই সাদ্দামের সঙ্গে আলাপ হয় রিয়ার। আয়েশা দে নামে নিজের ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করেছিলেন রিয়া। সেখান থেকে তিনি প্রায় নিয়মিত লাইভ করতেন। সাদ্দাম ছাড়াও আরও বেশ কয়েক জন যুবকের সঙ্গে রিয়ার ঘনিষ্ঠতা ছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাদ্দাম জেরায় স্বীকার করেছেন যে, তিনি রিয়াকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং সেই সূত্রে তাঁর সঙ্গে রিয়ার ঘনিষ্ঠতা অনেকটাই বেশি ছিল অন্যদের চেয়ে। সেই ঘনিষ্ঠতার ফলেই সাদ্দামের বেশ কিছু ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিয়ো চলে যায় রিয়ার হাতে। সেখানে দু’জনের ঘনিষ্ঠ ছবি-ভিডিয়ো ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সাদ্দামের অভিযোগ, সেই ছবি ভিডিয়োকে হাতিয়ার করে ব্ল্যাকমেল করা শুরু করেন মা-মেয়ে। আর সেই ব্ল্যাকমেল থেকে রেহাই পেতে খুনের ছক কষেন তিনি।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণাবর্তের জেরে আগামী তিন দিন বৃষ্টি রাজ্যের পাহাড় থেকে সমতলে

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যেই তাঁরা মা-মেয়েকে শনাক্ত করার পথে অনেকটা এগোন। শনাক্ত হওয়ার পর তাঁরা আয়েশা নামে রিয়ার ফেসবুক আইডি খতিয়ে দেখেন। জানতে পারেন ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টে ৫০ মিনিটেও একটি ছবি আপলোড করেছেন তিনি। দেখা যায় সেই ছবি আপলোড করা হয়েছিল হলদিয়া থেকে। আইপি অ্যাড্রেস এবং মোবাইল টাওয়ার লোকেশনের সূত্র ধরে পুলিশ সাদ্দামের সঙ্গে এই জোড়া খুনের সরাসরি যোগাযোগের আরও পারিপার্শ্বিক প্রমাণ পায় পুলিশ। দুর্গাচক থানা এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, ওই জায়গায় ঠিকাদারি করার পাশাপাশি সাদ্দাম এলাকার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত। এলাকার বিভিন্ন মাপের নেতার সঙ্গে তাঁকে দেখা যেত। তদন্তকারীরা যদিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, জোড়া খুনের পিছনে মোটিভ পুরোটাই ব্যক্তিগত।

অন্য বিষয়গুলি:

Haldia Murder Crime হলদিয়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy