মিড-ডে মিল খাওয়ার জন্য আলাদা ঘর তো দূরের কথা, রাজ্যের অসংখ্য প্রাথমিক স্কুলে ন্যূনতম পরিকাঠামোই নেই। এই অবস্থায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কারের কাজ শুরু করতে চলেছে স্কুলশিক্ষা দফতর। এই মর্মে দ্রুত নির্দেশিকাও জারি হচ্ছে বলে ওই দফতর সূত্রের খবর।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা বাজার মুখে এই তৎপরতাকে ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। ডিসেম্বর-জানুয়ারি নাগাদ পঞ্চায়েত ভোট হতে পারে বলে জল্পনা চলছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা শিবিরের বাম-সমর্থক অংশের বক্তব্য, প্রাথমিক শিক্ষা পরিকাঠামোর দুরবস্থা চলছে বহু দিন ধরে। এত দিন দুর্দশা কাটানোর চেষ্টা না-করে ভোটের মুখে সংস্কারে ঝাঁপিয়ে পড়ার মধ্যে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না।
শিক্ষাজগতের সরকার-সমর্থক অংশ এই বাঁকা নজরের নিন্দা করছে। তাদের বক্তব্য, সরকারের ভাল কাজে রাজনীতিকে না-টানাই ভাল।
রাজনৈতিক টানাপড়েন যা-ই থাক, এই বিষয়ে দ্বিমত নেই যে, এ রাজ্যে প্রাথমিকের পরিকাঠামো বেশ দুর্বল। এবং ওই স্তরে পঠনপাঠনের সঙ্গে সঙ্গে পরিকাঠামোর মান উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। বিকাশ ভবনের হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ হাজার। এবং সেগুলির অধিকাংশের বেহাল দশা নিয়ে শিক্ষা মহলের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলির দৈন্যদশা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, ২০১৬ সালের সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্টেও সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কোথাও পলেস্তারা খসে পড়ছে। কোথাও বা পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল নেই। কোথাও কোথাও দেওয়াল কোনও মতে দাঁড়িয়ে আছে তো চাল শতছিদ্র! সর্বোপরি অনেক স্কুলেই পরিকাঠামোর চূড়ান্ত অভাব আছে বলে অভিযোগ উঠছিল। খাস কলাকাতাতেও অসংখ্য স্কুলে চরম অব্যবস্থা। দুর্দশা চরমে। পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে পরিবর্তনের সরকার।
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, গত মাসেই সব জেলার স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক)-এর কাছে প্রাথমিক স্কুলের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছিল দফতর। জানতে চাওয়া হয়েছিল, কোন স্কুলে পরিকাঠামোর কী সমস্যা রয়েছে। জেলা থেকে সেই সব রিপোর্ট পাওয়ার পরেই সংস্কারে উদ্যোগী হয় সরকার। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগেই সংস্কারের কাজ সেরে ফেলতে হবে।’’ ফলে অতি দ্রুত সেই কাজ শুরু হবে বলে শিক্ষক, পড়ুয়া, অভিভাবক মহলের আশা।
আর এই হঠাৎ তৎপরতাতেই রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, স্কুলের হাল ফেরাতে সরকার এত দেরি করল কেন? বিভিন্ন জেলায় অনেক স্কুলেই দেখা গিয়েছে, ছাদ চুইয়ে সমানে পড়ছে বর্ষার জল। কোথাও ছাউনি দেওয়া স্কুলে পঠনপাঠন কার্যত শিকেয়। যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা না-নিয়ে ঠিক পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সংস্কারের উদ্যোগকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না সিপিএম-সমর্থক নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি।
ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সমর চক্রবর্তীর অভিযোগ, বেসরকারি স্কুলের প্রতি সকলের ঝোঁক
বাড়াতে ইচ্ছে করেই স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নয়নে এত দিন মন দেয়নি সরকার। স্কুলের বেহাল দশা নিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই সরব। কিন্তু সরকার সেই অভাব-অভিযোগকে আমল দেয়নি। এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে স্কুলে পঠনপাঠনের উন্নয়নের বদলে সৌন্দর্যায়ন করে চমক দিতে চাইছে। এই উদ্যোগের একটা বড় উদ্দেশ্য, নির্বাচনে প্রাথমিক স্কুলের বাড়িগুলিকে বুথ হিসেবে কাজে লাগানো। ‘‘এটা নিতান্তই
চমক। স্কুল সংস্কারের এই কাজ আদৌ সম্পূর্ণ হয় কি না, সেটাই দেখার,’’ বলছেন সমরবাবু।
স্বাভাবিক ভাবেই এই বঙ্কিম দৃষ্টির সমালোচনা করছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতি। ওই সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শ্যাম পাত্র বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুলের সংস্কার আগেও হয়েছে। যে-সব স্কুলে কাজ বাকি পড়ে ছিল, সরকার এ বার সেগুলোর সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে। এটা কোনও চমক নয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনও এর কোনও কারণ নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy