Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

প্রণবের সম্মতি, সরতেই হচ্ছে সুশান্তকে

অবশেষে বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তকে বরখাস্তই করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সুশান্তবাবু সম্ভবত এ দেশে কোনও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য, যাঁকে দুর্নীতির অভিযোগে এ ভাবে সরিয়ে দেওয়া হল। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ তাঁকে বরখাস্ত করার সুপারিশে স্বাক্ষর করেছেন আচার্য-রাষ্ট্রপতি। তবে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে এখনও বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:২৩
Share: Save:

অবশেষে বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তকে বরখাস্তই করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সুশান্তবাবু সম্ভবত এ দেশে কোনও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য, যাঁকে দুর্নীতির অভিযোগে এ ভাবে সরিয়ে দেওয়া হল। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ তাঁকে বরখাস্ত করার সুপারিশে স্বাক্ষর করেছেন আচার্য-রাষ্ট্রপতি। তবে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে এখনও বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়নি।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বভারতীর উপাচার্য পদে যোগ দেওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছিলেন সুশান্তবাবু। আর্থিক গরমিল, নিয়মের বাইরে নিয়োগ, স্বজনপোষণ, যৌন হয়রানি— অজস্র অভিযোগ ঘিরে ধরছিল তাঁকে। গত বছর জানুয়ারিতে মন্ত্রক সে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন সুশান্তবাবু। লাভ হয়নি। গত বছরের মাঝামাঝি কমিটির রিপোর্ট হাতে পেয়ে সুশান্তবাবুকে বরখাস্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় স্মৃতি ইরানির মন্ত্রক। তখন অক্টোবর মাসে সুশান্ত পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করে চিঠি দেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তা গ্রহণ করেননি।

আচার্য হিসেবে সুশান্তবাবুর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে কি না বা তাঁকে বরখাস্ত করা হবে কি না, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিলমোহর রাষ্ট্রপতিরই দেওয়ার কথা। তবে রাষ্ট্রপতি সাধারণত মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন। সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া পরে কেন্দ্র একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করার পক্ষপাতী ছিল। সেই জন্যই সুশান্তবাবুকে পদত্যাগ করে সম্মানজনক ভাবে সরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে মন্ত্রকের একাংশের দাবি।

নভেম্বর মাসে সুশান্তবাবুর ফাইলটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায় মন্ত্রক। পরে যাতে কোনও জটিলতা না হয়, তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতি আইন মন্ত্রকের বক্তব্য জানতে চান। গত সপ্তাহে অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রক চিঠি দিয়ে স্মৃতি ইরানিকে জানান, অপসারণের সুপারিশ যুক্তিসঙ্গত। ফলে ফাইলটি ফের পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতির কাছে। মন্ত্রক বলছে, ওই সুপারিশেই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। মেয়াদ শেষের সাত মাস আগেই চলে যেতে হচ্ছে সুশান্তকে।

খবর ছড়াতেই এ দিন লাল-সবুজ আবিরে অকাল হোলিতে মেতে ওঠে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস। তার মধ্যেই সুশান্ত-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শিক্ষক বিকাশ গুপ্ত আক্রান্তও হন বলে অভিযোগ। রাতে উপাসনাগৃহ থেকে মোমবাতি মিছিল বেরিয়ে আশ্রম এলাকা পরিদর্শন করে। সুশান্তবাবু কলকাতায় রয়েছেন বলে খবর। যদিও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এসএমএসের উত্তরও মেলেনি। সুশান্তর বিরুদ্ধে সংসদে এক সুরে সরব হয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য, সিপিএমের ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়রা। অসন্তোষ ছিল বোলপুরের তৃণমূল সাং‌সদ অনুপম হাজরা, বিজেপি এস এস অহলুওয়ালিয়ারও। এ দিন প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীকে কয়েক বছর ধরে এই উপাচার্য অপবিত্র করছিলেন!’’ ঋতব্রতর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভাল সিদ্ধান্ত। অভিযোগের গুরুত্ব বুঝেই প্রদীপদা এবং আমি সংসদে সরব হয়েছিলাম।’’

বিশ্বভারতীতে সুশান্তর পূর্বসূরি রজতকান্ত রায় এক সময় সুশান্তকে ‘যোগ্য ব্যক্তি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। এ দিন তিনিও বললেন, ‘‘মত পরিবর্তন করতে হচ্ছে। উনি ছাত্র-অধ্যাপক-কর্মীদের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করেছিলেন। সেটা দুর্নীতির চেয়েও খারাপ!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy