আশ্রম-স্কুলে শিশুরা তো যাবে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে। তার আগে শান্তিনিকেতনের শিক্ষক-কর্মীরা কর্মস্থলে ব্যস্ত থাকাকালীন তাঁদের সন্তানেরা থাকবে কোথায়?
এই ভাবনা থেকেই রবীন্দ্রনাথ অনেক কাল আগে বিশ্বভারতীতে চালু করেছিলেন ‘ডে কেয়ার সেন্টার’ বা দিবা প্রযত্ন কেন্দ্র। সেই পথে এ বার এই ধরনের কেন্দ্র চালু করছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া জানান, তাঁদের ওই কেন্দ্র চালু হয়ে যাবে এই ডিসেম্বরেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী, গবেষক, পড়ুয়াদের শিশু সন্তানেরা দিনের অনেকটা সময় সেখানে থাকার সুযোগ পাবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বছর পাঁচেক আগেই দিবা প্রযত্ন কেন্দ্র চালু করেছে। প্রায় আট বছর আগে এমন কেন্দ্র চালু করেও বন্ধ করে দিয়েছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু শতাব্দী-প্রাচীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও এই ধরনের কেন্দ্র নেই। রবীন্দ্রভারতীও এমন কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারেনি। যদিও ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল বা ‘নাক’ তাদের মূল্যায়নে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই নিরাপদ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থায় কর্মরত নারী-পুরুষের শিশুসন্তানেরা উপকৃত হয় তো বটেই। সামগ্রিক ভাবে এর সুফল ভোগ করে গোটা সমাজই। কেননা এমন নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে শিশুকে সঁপে দিয়ে বাবা-মায়েরা কর্মস্থলে নিজেদের কাজে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন। তাতে কাজটা ভাল হয়। রাজ্যের সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় যদি শিশুর থাকার নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করে দিতে পারে, শিক্ষকতায় নিশ্চিন্তে মনোনিবেশ করতে পারেন বাবা-মা। এতে আখেরে লাভবান হন পড়ুয়ারাই। ‘‘শিক্ষকতা তো ঠিক কয়েক ঘণ্টার কাজ নয়। সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিঘ্নহীন ভাবে কাজে মন দিতে পারেন,’’ সোমবার এ ভাবেই দিবা প্রযত্ন কেন্দ্রের উপযোগিতা ব্যাখ্যা করলেন অভীকবাবু।
২০১১ সাল থেকে দিবা প্রযত্ন কেন্দ্র চলছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। ওই কেন্দ্র তৈরিতে যাঁরা উদ্যোগী হয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অভিজিৎ রায়। তিনি জানালেন, তাঁর মেয়ে বেড়ে উঠেছে ওই কেন্দ্রেই। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকরি করেন। বাড়িতে শিশুসন্তানকে দেখার কেউ ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে খাস বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে কেন্দ্রটি চালু হওয়ায় তাঁদের খুবই সুবিধে হয়েছিল। ‘‘সন্তানকে এমন একটি কেন্দ্রে রাখার সুযোগ পেয়ে আমরা অনেক নিশ্চিন্তে নিজেদের কাজে মন দিতে পেরেছিলাম। সন্তানকে নিয়ে উদ্বেগটা আর ছিল না,’’ বললেন অভিজিৎবাবু। যাদবপুরের ওই কেন্দ্রের চাহিদা এতই যে, কর্তৃপক্ষ তার পরিধি বাড়াচ্ছেন।
প্রেসিডেন্সির দিবা প্রযত্ন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পিছনে। উপাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের অনেক শিক্ষকেরই সন্তান রয়েছে। তাঁরা তো বটেই, অন্যেরাও এই সুবিধা পাবেন। বাইরের সংস্থাকে দিয়ে এই কেন্দ্র চালানো হবে।’’
প্রেসিডেন্সির সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক দম্পতি উপল চক্রবর্তী এবং সুকন্যা সর্বাধিকারীর সন্তান খুবই ছোট। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উপলবাবু বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মী অনেকেরই সন্তান রয়েছে। এর ফলে প্রত্যেকেই উপকৃত হবেন। সন্তান নির্ভরযোগ্য কোনও জায়গায় থাকার সুযোগ পেলে কাজে মনোনিবেশ করতে অনেক সুবিধে হয়।’’
যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি উদ্যোগী হলেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও কোনও দিবা প্রযত্ন কেন্দ্র নেই কেন? কারণ ব্যাখ্যায় না-গিয়ে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেন শুধু বলেন, ‘‘এই ধরনের কেন্দ্র চালু করা অবশ্যই দরকার। কিন্তু আমরা এখনও সেটা করে উঠতে পারিনি।’’
কেন্দ্রীয় মূল্যায়নে বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পেলেও তাঁরা যে এখনও দিবা প্রযত্ন কেন্দ্র চালু করে উঠতে পারেননি, সেটা স্বীকার করেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরীও। আর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মলয়েন্দু সাহা জানান, রাখার মতো যথেষ্ট শিশু না-পাওয়ায় তাঁদের কেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy