আকাশ ওঁরাও ও রাকিব শেখ। নিজস্ব চিত্র
সপ্তাহ দু’য়েকের ব্যবধানে ভিন্ন পরিস্থিতিতে দুই রোগীর কাটা হাত শুধু জোড়া লাগল না। কোভিড আবহে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবায় রোগীর পরিজনদের আস্থাকে দ্বিগুণ করল এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারের পরিষেবা।
ইটভাটা থেকে মাটি নেওয়ার সময়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা দশ বছরের বালক আকাশ ওঁরাওয়ের ডান হাত ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এ দিন বালকের মা জানান, গত ৬ নভেম্বর বিকেলে মাটি নেওয়ার সময়ে ছেলের এক বন্ধু অসাবধানতাবশত জেনারেটর চালিয়ে দিলে কব্জির উপর থেকে আকাশের ডান হাত কাটা পড়ে। দুর্ঘটনার জেরে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাঁর বাবা ছেলের কাটা হাত কাপড়ে মুড়ে রাত ন’টা নাগাদ এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে নিয়ে যান। প্রায় ১২ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে বালকের ডান হাত রক্ষা করার বিষয়ে আশ্বস্ত হন চিকিৎসক সুশোভন সাহা, প্রীতম দাস, জয়া লিমা এবং অর্পিতা লাহা। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর দিনই আকাশের কোভিড ধরা পড়ে!
এ দিকে মালদহের ৩২ বছরের যুবক রাকিব শেখ বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাসুয়ার কোপে জখম হন বলে অভিযোগ। সোমবার ট্রমা কেয়ারের বিছানায় শুয়ে রাকিব জানান, বাঁ হাত কাটা পড়ার পরে মালদহের স্থানীয় হাসপাতালে তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শুক্রবারের ঘটনায় কাটা হাতের ধমনীর মুখ বন্ধ করে রাকিবকে অ্যাম্বুল্যান্স করে কলকাতায় পাঠানো হয়। শনিবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ জখম যুবকের অবস্থা দেখে দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক সৌভিক অধিকারী, সুশোভন সাহা, প্রীতি উপাধ্যায়, আনন্দ দুগর এবং দেবরাজ সাহা। প্রায় ১৪ ঘণ্টা ধরে চলে সেই অস্ত্রোপচার।
সঙ্কটনজক দুই রোগীর হাত রক্ষায় এসএসকেএমের এমার্জেন্সি মেডিসিন, অস্থি বিভাগের পাশাপাশি প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের ভূমিকা প্রসঙ্গে আকাশের মা কোকা ওঁরাও বলেন, ‘‘করোনার মধ্যে ছেলের চিকিৎসা আদৌ হবে কি না ভয় পেয়েছিলাম। এখানে ডাক্তারবাবুরা আশ্বস্ত করার পরে চিন্তা দূর হয়।’’ মালদহের যুবক বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবুরা যে ভাবে আমার চিকিৎসা করছেন তাতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা নিয়ে আমি আশাবাদী।’’ সরকারি কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন দশ বছরের বালকের অস্ত্রোপচারের স্থান কেমন রয়েছে তা দেখতে প্রতিদিন মেডিক্যালে যেতেন এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা। প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগের প্রধান গৌতম গুহ জানান, দুই রোগীর ক্ষেত্রেই কাটা হাত বাঁচানোর জন্য একটু কাটতে হয়েছে। এর জন্য আকাশের ডান হাত এবং রাকিবের বাঁ হাত একটু ছোট হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিডের মধ্যে জুনিয়র চিকিৎসকেরা যে ভাবে কাজ করে চলেছেন তা প্রশংসনীয়।’’
এসএসকেএমের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ধরনের দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগীদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা দেওয়ার কথা মাথায় রেখে ট্রমা কেয়ার চালু করা হয়েছিল। সেই লক্ষ্যপূরণে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তরিক চেষ্টার ফলে এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy