ফোর্বসের তালিকায় মহুয়া মৈত্র, প্রশান্ত কিশোর।
তাঁর কাজ কোন পথে এগোয়, বাইরে থেকে বোঝা যায় না। ক্যামেরার ফোকাসে থাকতেও পছন্দ করেন না। কিন্তু মাস খানেক আগে বাংলায় ৩টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফল বেরোতেই প্রচারের আলো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাঁর উপরে। আর এ বার যেন সার্চলাইট পড়ল তাঁর মুখমণ্ডলে। ফোর্বসের মতে, আগামী এক দশকের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করবেন যে ২০ জন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রশান্ত কিশোর।
একা প্রশান্ত কিশোর নন, ফোর্বসের এই তালিকায় আরও বেশ কয়েক জন ভারতীয়ের নাম ঠাঁই পেয়েছে। ভোট কৌশলী প্রশান্তের নাম বরং তালিকার বেশ কিছুটা নীচের দিকেই রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক শিবিরে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ তৈরি হয়েছে প্রশান্ত কিশোরকে নিয়েই।
তাঁর সম্পর্কে ফোর্বস ম্যাগাজিনে লেখা হয়েছে— ৪২ বছরের এই ব্যক্তি ২০১১ সাল থেকে নির্বাচন কৌশলী হিসেবে কাজ করছেন। প্রথমে তিনি গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে কাজ করেছিলেন। পরে ২০১৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির হয়ে কৌশল সাজিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। পরে আরও বিভিন্ন দলের হয়ে যে তিনি কাজ করেছেন এবং তাঁর সাফল্যের হারই যে বেশি, সে কথাও ফোর্বস উল্লেখ করেছে। ভারতের নির্বাচনী কৌশল ব্যবস্থাটাকেই বদলে দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর— লিখেছে ফোর্বস। ভারতের রাজনৈতিক পরিসরে প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা ক্রমশ আরও বড় হয়ে উঠবে— এমন ভবিষ্যদ্বাণীও করা হয়েছে সেখানে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বড় ধাক্কা খাওয়ার পরেই প্রশান্ত কিশোরকে পরামর্শদাতা হিসেবে ডেকে এনেছে তৃণমূল। তার পরে ইতিবাচক ফলও মিলেছে। লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পরে যে ভাবে হতোদ্যম হয়ে পড়েছিলেন তৃণমূল কর্মীরা, সেই দশা প্রশান্ত কিশোর কাটিয়ে দিয়েছেন অনেকটাই। ‘দিদিকে বলো’-সহ নানা কর্মসূচি ছকে দিয়ে তৃণমূলের নানা স্তরের নেতা-কর্মীদের একনাগাড়ে রাস্তায় থাকতে বাধ্য করেছে তাঁর সংস্থা। ৩ বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে প্রচার এবং জনসংযোগের কৌশলও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেছে তাঁর টিম। চমকে দেওয়া ফলাফলও পেয়েছে তৃণমূল। ৩ আসনের সব ক’টাই জোড়াফুলের ঝুলিতে গিয়েছে। তার মধ্যে ২টো আসন এমন, যেখানে আগে কখনও তৃণমূল জেতেনি।
এ হেন প্রশান্ত কিশোর যখন ফোর্বসের তালিকায় ঠাঁই পাচ্ছেন, তখন তৃণমূল শিবিরে উচ্ছ্বাস বাড়াই স্বাভাবিক। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনেক হিসেব প্রশান্ত বদলে দেবেন— এমন বিশ্বাস করেন তৃণমূলের নেতৃত্ব থেকে কর্মীরা। আগামী এক দশক ধরে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রশান্তের ভূমিকা আরও বড় হবে বলে যে ভবিষ্যদ্বাণী ফোর্বসের তরফে করা হয়েছে, তাতে এ রাজ্যে তৃণমূলের আশান্বিত হওয়ার কারণ স্বাভাবিক ভাবেই আরও বেড়েছে।
ফোর্বস তালিকায় প্রশান্ত কিশোর ছাড়া আরও একজনকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত জোড়াফুল শিবির। তিনি কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তালিকায় তাঁর নাম কিন্তু প্রশান্ত কিশোরের অনেক আগেই। মহুয়া কবে রাজনীতিতে এলেন, কত দিন কংগ্রেসে ছিলেন, তার পরে কবে থেকে তৃণমূলে রয়েছেন, লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ার পরে সংসদে দেওয়া প্রথম ভাষণেই কী ভাবে জ্বালাময়ী আক্রমণ শানিয়েছিলেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে— সবই উল্লেখ করেছে ফোর্বস। আগামী ১০ বছরের গতিপ্রকৃতি যাঁরা নির্ধারণ করবেন, তাঁদের মধ্যে মহুয়া মৈত্র অন্যতম— মনে করছে ফোর্বস।
হরিয়ানার উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্যন্ত চৌটালা বা সিপিআই নেতা কানহাইয়া কুমারের নামও ফোর্বসের এই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। স্থান পেয়েছে গোদরেজ পরিবার এবং শ্যেফ গরিমা অরোরার নাম।
তালিকায় রয়েছে দুই ভারতীয় বংশোদ্ভুত বিদেশি নাগরিকের নামও। এক জন হলেন আর্সেলর-মিত্তলের সিইও আদিত্য মিত্তল। দ্বিতীয় জন হলেন আমেরিকায় জন্মানো ভারতীয় বংশোদ্ভুত কমেডিয়ান হাসান মিন্হাজ।
প্রশান্ত কিশোর, মহুয়া মৈত্ররা যে তালিকাটায় জায়গা পেলেন, সেটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝ যাবে ওই তালিকার অন্তর্ভুক্ত আর কয়েক জনের নাম জানলেই। তালিকায় রয়েছে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নাম। রয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে, সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন, ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy