(বাঁ দিকে) সীতারাম ইয়েচুরি। প্রকাশ কারাট (ডান দিকে)। —গ্রাফিক সনৎ সিংহ।
ইদানীং ক্রিকেট বিশ্বকাপের মরসুমে একটি প্রশ্নে সিপিএমের অনেক নেতাই ‘ক্লিন বোল্ড’ হচ্ছেন— শেষ কবে দলের কর্মসূচিতে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি? এর পটভূমিকায় কি ‘ইন্ডিয়া’র মঞ্চ?
মনে করতে পারছেন না সিপিএমের অনেক নেতা। এবং এই প্রেক্ষাপটে দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতেও বাংলায় আসছেন না ইয়েচুরি। আগামী ১৭ অক্টোবর রাজ্য সিপিএমের ওই সভায় মূল বক্তা দলের পলিটব্যুরোর সদস্য তথা প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। দলের কলকাতা জেলা দফতর প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের প্রেক্ষাগৃহে হবে ওই কর্মসূচি।
সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোটের সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল গত জুন মাসে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পটনার বাড়িতে সেই মর্মে প্রথম বৈঠকটি বসেছিল ১২ জুন। তার পরে বেঙ্গালুরু ও মুম্বইয়ে বৈঠক করেছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। সেই সব বৈঠকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ইয়েচুরির ছবি বঙ্গ সিপিএমের নিচুতলায় বিস্তর ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতে রাজ্য সিপিএমকে বিশেষ কর্মসূচিও নিতে হয়েছে। কাকতালীয় হলেও, সেই বিতর্কের পর থেকে আর কোনও কর্মসূচিতেই রাজ্যে আসেননি ইয়েচুরি। অথচ, তিনিই পলিটব্যুরোর তরফে বাংলার পার্টির মূল দায়িত্বে রয়েছেন।
জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে দু’টি রাজ্য কমিটির বৈঠক হয়েছে। ৩১ অগস্ট কলকাতায় কেন্দ্রীয় সমাবেশ করেছিল রাজ্য বামফ্রন্ট। কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠন রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আকারে বড় দু’টি পৃথক সমাবেশও করেছে। কিন্তু ইয়েচুরিকে কোথাওই দেখা যায়নি। দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতেও আসছেন না সাধারণ সম্পাদক। ওই কর্মসূচিতে মূল বক্তার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডীর সদস্য কল্লোল মজুমদার বলেন, ‘‘১৭ তারিখ বক্তা হিসাবে থাকবেন প্রকাশ কারাট।’’ এটাই চূড়ান্ত? কল্লোলের জবাব, ‘‘এখনও পর্যন্ত তা-ই।’’ ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার দিন হিসাবে ১৭ অক্টোবরকে স্বীকৃতি দেয় সিপিএম। সাল হিসাবে সিপিএম মনে করে ১৯২০ সালে ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি তৈরি হয়েছিল। সিপিআই অবশ্য ১৯২৫ সালকে দলের প্রতিষ্ঠার বছর হিসাবে ধরে।
এখন প্রশ্ন হল, বঙ্গ সিপিএম কি ‘সচেতন’ ভাবেই ইয়েচুরিকে রাজ্যে আনছে না? না কি ইয়েচুরিই অপেক্ষা করছেন পরিস্থিতি আরও একটু থিতিয়ে যাওয়ার জন্য? সিপিএম সূত্রের খবর, পুজোর আগে এ রাজ্যে আসছেন না ইয়েচুরি। দুর্গাপুজো মিটে গেলেই রাজ্য সিপিএমের কর্মসূচিতে বাংলায় আসবেন দলের সাধারণ সম্পাদক। নভেম্বরের ৩ থেকে ৫ তারিখ রাজ্য সিপিএমের বর্ধিত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে হাওড়ায়। সমগ্র অধিবেশনেই ইয়েচুরি উপস্থিত থাকবেন বলে এখনও পর্যন্ত খবর।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে পরমাণু চুক্তির কারণে ইউপিএ-১ সরকার থেকে সিপিএম সমর্থন তুলে নেওয়ার পর থেকেই কারাট কার্যত বঙ্গ সিপিএমে ‘ভিলেন’ হয়ে গিয়েছিলেন। রাজ্য সিপিএমের একটি বড় অংশ মনে করে, তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কারাটের ওই ‘আগ্রাসী এবং অবিবেচক’ সিদ্ধান্ত বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতার রাস্তা খুলে দিয়েছিল। যা সিপিএমের ক্ষয়ের সূচনা করে দিয়েছিল। যদিও ‘ইন্ডিয়া’ বিতর্কের গোড়ায় রাজ্য সিপিএমের একটি বড় অংশ কারাটের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কারাট গত পার্টি কংগ্রেসে তৃণমূল সম্পর্কে কী বলেছিলেন, তা প্রচার করা হতে থাকে দলের সমাজমাধ্যম দেখভালের দায়িত্বে-থাকা বাহিনীর তরফে। যাতে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল, মমতার সঙ্গে ইয়েচুরির ছবি নিয়ে দলের নিচুতলার কর্মীদের ক্ষোভ ‘সঙ্গত’ নয়। কারাট যা বলেছিলেন, সেটাই তৃণমূল সম্পর্কে দলের অবস্থান। ‘ইন্ডিয়া’ বিতর্কের আবহে সেই কারাটাকেই বক্তা করে আনছে আলিমুদ্দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy